দশজনের চেলসিকে নিজেদের মাঠে হারাতে পারল না লিভারপুল
গোটা দ্বিতীয়ার্ধে একজন কম নিয়ে খেলেও বাঘের মতো রক্ষণ করে গেল চেলসি। আর লিভারপুল চেয়ে চেয়ে দেখল তাঁদের একের পর এক সুযোগের নষ্ট হওয়া। শেষমেশ ম্যাচের ফল যা হয়েছে, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে সে ফলটাকে দু'হাত ভরে নেবেন চেলসি কোচ টমাস টুখেল। ওদিকে হতাশায় ডুববেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, এটা বলাই যায়।
অ্যানফিল্ডে চেলসির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। ২২ মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে চেলসিকে এগিয়ে দেন জার্মান ফরোয়ার্ড কাই হাভার্টজ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সমতায় ফেরে লিভারপুল। সাদিও মানের এক শট গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা চেলসির রাইটব্যাক রিস জেমসের হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় লিভারপুল। জেমসকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি অ্যান্থনি টেলর। আর সে ঘটনা থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে দলকে সমতায় ফেরান মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ।
ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ গতিময় ফুটবল খেলা শুরু করে দুই দল। বলের দখল লিভারপুলের কাছে বেশি থাকলেও, রোমেলু লুকাকু, মেসন মাউন্ট, কাই হাভার্টজ ও এনগোলো কান্তেদের কল্যাণে প্রতিআক্রমণে দুর্দান্ত খেলছিল চেলসি। এই ধারাবাহিকতাতেই গোল চলে আসে ম্যাচে।
ম্যাচের ২২ মিনিটে চেলসির রাইট উইংব্যাক রিস জেমস যখন কর্নার নিতে যান, জার্মান ফরোয়ার্ড কাই হাভার্টজকে মার্ক করার তেমন প্রয়োজন মনে করেননি লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা। সেটার মাশুলই দিতে হয় তাঁদের। দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে হেড করে লিভারপুলের গোলকিপার অ্যালিসনকে পরাস্ত করেন হাভার্টজ।
গোল খাওয়ার পরেও বলের দখল নিজেদের কাছেই বেশি রাখে লিভারপুল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, সমতাসূচক গোলটা আসছিলই না। প্রথমার্ধের একদম শেষদিকে জটলার মধ্যে সেনেগালিজ উইঙ্গার সাদিও মানের এক শট গোললাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আটকাতে গিয়েই ভজকট পাকিয়ে ফেলেন জেমস। মানের শট উরু হয়ে হাতে লাগে জেমসের। জেমসের হাত ওই জায়গায় না থাকলে হয়তো ওই শটে গোলই হয়ে যেত।
জেমসের হাতে যে লেগেছে শুধু, তাই-ই নয়। উলটো বলকে ঠেলে সামনে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যেন জেমস। ব্যস, আর যায় কোথায়! ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি অ্যান্থনি টেইলর নিশ্চিত হন, ইচ্ছে করেই হাত দিয়ে বল ঠেলে সামনে পাঠাতে চেয়েছেন জেমস। ফলাফল, লাল কার্ড।
ম্যাচের ওই পর্যায়ে এভাবে একজন কমে যাবে, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি চেলসি। রেফারির সামনে রুডিগার, আজপিলিকুয়েতা, লুকাকুদের ক্ষোভ প্রকাশ সেটাই বলে। সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে দলকে সমতায় ফেরান মোহাম্মদ সালাহ। প্রিমিয়ার লিগে এই নিয়ে ৯৯ গোল হয়ে গেল তাঁর।
গোল দিতে পারি বা না পারি, গোল আর খাওয়া যাবে না - এই মন্ত্রেই দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে চেলসি। চোটের কারণে মাঠ থেকে উঠে যান এনগোলো কান্তে, তাঁর জায়গায় নামান হয় মাত্তেও কোভাচিচকে। ওদিকে হাভার্টজের জায়গায় সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভাকে নামিয়ে নিজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেন চেলসির কোচ টুখেল।
ব্যস, শুরু হয় চেলসির গোল না খাওয়ার লড়াই। বলতে গেলে দশজন মিলে চেলসির রক্ষণভাগ সামলিয়ে গেছেন। বিশেষ করে গোলকিপার এদুয়ার্দ মেন্দির কথা না বললেই নয়। বেশ কয়েকটা দুর্দান্ত সেভ করে চেলসিকে ম্যাচে রেখেছেন তিনি। ওদিকে একের পর এক সুযোগ নষ্ট করে গেছেন মানে, সালাহ, হেন্ডারসন, দিওগো জোতারা।
৮৭ মিনিটে ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনিওর জায়গায় আরেক ডিফেন্ডার ট্রেভো চালোবাহকে নামিয়ে আরও বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে যায় চেলসি। শেষ দিকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারাকে নামিয়েও কাজের কাজ হয়নি লিভারপুলের। এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁদের, ওদিকে এক পয়েন্ট পেয়ে জয়ের সমান আনন্দ নিয়ে অ্যানফিল্ড ছাড়ে চেলসি।
তিন ম্যাচ শেষে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে ওয়েস্ট হাম। আজ যারা ২-২ গোলে ড্র করেছেন ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে। সমান পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে চেলসি ও লিভারপুল।