প্রথমেই একটা পরিসংখ্যান। একটা দল ১৬বার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের পোস্ট বরাবর মাত্র দুবার বল রাখতে পেরেছে। আর সেই প্রতিপক্ষ ৪ বার চেষ্টা করে পোস্টে রাখতে পেরেছে মাত্র একবার, কিন্তু ওই একবারেই গোল! তাহলে ম্যাচে বেশি ভালো খেলল কোন দল?
প্রশ্নটা জটিল। শুধু আক্রমণই যদি শেষ কথা হয়, তাহলে বেশি ভালো খেলেছে আয়াক্স। আক্রমণের পর আক্রমণে তটস্থ রেখেছিল বেনফিকার রক্ষণভাগ। কিন্তু কাজের কাজ গোলটা পাওয়া হয়নি। এবার প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে করা যায়। গোল-ই যদি না হয়, তাহলে সেই আক্রমণের কী দাম?
না, পাই-পয়সা দামও নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট ম্যাচ হলে তো কথাই নেই! এই মঞ্চে গোল-ই সব। বেনফিকা শুধু গোলটা করেই চ্যাম্পিয়নস লিগে গত দশ মৌসুমের মধ্যে তৃতীয়বার উঠল কোয়ার্টার ফাইনালে।
এমনকি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবও এ সময়ে মাত্র দুবার শেষ আটের দেখা পেয়েছে। ফিরতি লেগে অপর ম্যাচে বেনফিকারই বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা জোয়াও ফেলিক্সের খেলার কাছে হেরে বাদ পড়েছে ইউনাইটেড। তবে বেনফিকার এই জয় কিন্তু প্রচলিত হিসেব ও খেলার ধারার বিপরীতে, চমকে দেওয়া এক জয়।
আয়াক্সের মাঠে শেষ ষোলো ফিরতি লেগের ৭৭ মিনিটে ডারউইন নুনেজের গোলে ১-০ ব্যবধানের জয় পায় বেনফিকা। পর্তুগিজ ক্লাবটির মাঠে প্রথম লেগ ২-২ গোলে ড্র করে আয়াক্স। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলের জয়ে ইয়োহান ক্রুয়েফ অ্যারেনার দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয় বেনফিকা।
কারণ, সব হিসেব-নিকেশ বেনফিকার বিপক্ষে ছিল। গ্রুপপর্বে সব ম্যাচ জিতেছে ডাচ ক্লাব আয়াক্স। শেষ ষোলো প্রথম লেগেও হারেনি। বেনফিকা ঘরোয়া লিগে ভালো করতে পারছে না। শীর্ষস্থানীয় পোর্তোর সঙ্গে ১২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে।
ফিরতি লেগেও ঠিক এর প্রতিচ্ছবি ছিল। জয়ের জন্য আক্রমণে না গিয়ে পিছিয়ে থেকে রক্ষণে মনোযোগ দিয়েছে বেনফিকা। দুই অভিজ্ঞ সেন্টারব্যাক ইয়ান ভার্টোগেন ও নিকোলাস ওতামেন্দি ছিলেন এই কৌশলের কেন্দ্রে। ৬৯ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেও বেনফিকার রক্ষণ গলে গোল বের করতে পারেনি দুসান তাদিচ-সেবাস্তিয়ান হলাররা।
বিরতির পর ব্রাজিলের উইঙ্গার অ্যান্টনি আয়াক্সের হয়ে গোলের দুটি ভালো সুযোগ পান। ১৯ বছর বয়সী হোল্ডিং মিডফিল্ডার রায়ান গ্রাভেনবার্চ ৩৬ মিনিটে পোস্টের বাইরে দিয়ে বল উড়িয়ে মারেন।
এমনকি রক্ষণে অনেকগুলো ক্রস ফেলেও কাজ হয়নি। অন্যদিকে ফ্রি-কিক থেকে মাত্র একবার পোস্টের ভেতর আক্রমণ করেই গোল আদায় করে নেয় বেনফিকা। আয়াক্স ডিফেন্ডার ইউরিয়েন টিম্বেরের মাথার ওপর উঠে হেডে গোলটি করেন উরুগুয়ে স্ট্রাইকার নুনেজ।
অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে ব্রায়ান ব্রবির চেষ্টা দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন বেনফিকা গোলকিপার ওদেসিয়াস ভ্লাচোমিদোস।
নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল বেনফিকা। অন্যদিকে হারে বিদায় নিয়ে হতাশ আয়াক্স অধিনায়ক দুসান তাদিচ, 'আমরা ওদের প্রতিআক্রমণের সব চেষ্টা নসাৎ করে হেরেছি ফ্রি কিক থেকে...এই হারটা প্রাপ্য ছিল না। আমরা শ্রেয়তর দল ছিলাম।'