কাতারে বিশ্বকাপের সময় যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিশের কাপ’ করবে ইতালি?
কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশের। ইউরোপে গ্রীষ্মের বদলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের শীতের সময়ে কেন বিশ্বকাপ হচ্ছে, সেটি নিয়েও সমালোচনা কম হচ্ছে না। আর কিছু হোক না হোক, সে সময়ে বিশ্বকাপ আয়োজন মানে আগস্টে শুরু ইউরোপের লিগগুলো তখন স্থগিত রাখতে হবে।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের জন্য আরেকটু বাড়তি চ্যালেঞ্জ হতে পারে ইতালিয়ান ফুটবল লিগ কর্তৃপক্ষের নতুন পরিকল্পনা। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাতারে যখন বিশ্বকাপ হবে, সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে লিগের ২০টি দল নিয়ে ২০ দিনের একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাইছে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ কর্তৃপক্ষ।
কাগজে-কলমে এ পরিকল্পনা বয়ান করার উদ্দেশ্য, সে সময়ে বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া খেলোয়াড়দের বসিয়ে না রাখা, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’র জনপ্রিয়তা বাড়ানো।
ইতালিয়ান ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘তুত্তোমেরকাতোওয়েব’–এ সিরি ‘আ’র টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আন্দ্রেয়া বুত্তিই জানিয়েছেন এ পরিকল্পনার কথা। আরও মাস দুয়েক আগে থেকেই এ পরিকল্পনার বুনন শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছে তুত্তোমেরকাতোওয়েব।
কাতার বিশ্বকাপে ইতালি জাতীয় দলেরই সুযোগ পাওয়া এখনো সংশয়ে। ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বে সুইজারল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও লিথুয়ানিয়ার গ্রুপ থেকেই গ্রুপ সেরা হতে পারেনি গত জুলাইয়ে ইউরো জেতা ইতালি। তাদের টপকে সুইজারল্যান্ড চলে গেছে বিশ্বকাপে। ইতালিকে এখন খেলতে হবে প্লে-অফ, কিন্তু সেখানে তাদের সামনে পড়তে পারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।
নতুন ঢংয়ের প্লে-অফের ছকে ইতালি আর পর্তুগাল পড়েছে একই পথে। আগামী মার্চে প্লে-অফের ইতালি সেমিফাইনাল খেলবে উত্তর মেসিডোনিয়ার সঙ্গে, পর্তুগালের প্রতিপক্ষ তুরস্ক। নিজ নিজ ম্যাচ জিতলেই ইতালি-পর্তুগাল মুখোমুখি।
ফুটবলপ্রেমীদের ‘শ্যাম’ আর ‘কুল’ রাখার দ্বন্দে পড়তে হচ্ছে আরকি! একদিকে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে দেখতে না পাওয়ার শঙ্কা, অন্যদিকে শঙ্কা রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপের বিষাদ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার!
ইতালিয়ান লিগ আয়োজকেরা অবশ্য এত আবেগের হিসাব কষছেন না। সেখানে অর্থই মূল বিবেচ্য। তাঁদের হিসাব, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ইতালি সুযোগ না পেলেও বিশ্বকাপে ৩২ দলের ৭৩৬ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৫৮ জন ছিলেন ইতালিয়ান লিগের খেলোয়াড়। এবার সংখ্যাটা ৮০ থেকে ৮৫ হতে পারে। ইতালি বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। বুত্তির হিসাবে, বিশ্বকাপের সময়ে লিগের ৫৭০-৫৮০ জন খেলোয়াড় বসে থাকবেন!
কিন্তু বিশ্বকাপের সময়ে মাস দেড়-দুয়েকের বিরতি, এরপর খেলা শুরু হলে খেলোয়াড়দের চোটের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে, সে কারণে জুন-জুলাইয়ের ‘প্রাক্–মৌসুমের’ মতো বিশ্বকাপের সময়েও ক্লাবগুলোকে ‘মধ্য মৌসুম’ প্রস্তুতি নিতে হবে। এই টুর্নামেন্ট এনে সেই প্রস্তুতির সুযোগও করে দিতে চায় সিরি ‘আ’।
তাতে তাদেরও লাভ হলো, খেলোয়াড়দেরও বসে থাকতে হলো না, প্রস্তুতিতে চোটের ঝুঁকিও কমল—এ-ই হচ্ছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের পেছনে কাগজে-কলমে বর্ণিত ভাবনা।
কীভাবে হবে এই বিশের কাপ
লিগের ২০টি দলকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হবে। টুর্নামেন্ট হবে দিন বিশেকের। বিশ্বকাপের ঢংয়ে এখানেও গ্রুপ পর্বের পর থাকবে নকআউট পর্ব। ২০ দলের প্রতিটি একই জায়গায় থাকবে, অনুশীলন করবে, খেলবে—করোনার সময়ে এনবিএ ২০২০ যেভাবে একটা ‘জৈব সুরক্ষাবলয়ে’ থেকে আয়োজিত হয়েছিল, অনেকটা সে ঢংয়ে।
গত জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে সিরি ‘আ’র যে কার্যালয় খোলা হয়েছে, সেটি টুর্নামেন্টের সম্প্রচারক ও স্পনসরদের সঙ্গে কাজ করবে। খরচ সামলে নিয়ে টুর্নামেন্টটা থেকে লাভ বের করতে হবে না!
দেখবে কে টুর্নামেন্টটা
চার বছর পরপর হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনাই যেখানে বিশ্ব কাঁপিয়ে রাখে, সে সময়ে ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর ‘বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া’ খেলোয়াড়দের কে দেখতে চাইবে? নিজেকেই ১০ মাস পর কল্পনা করুন। যে দিনে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো দলের ম্যাচ থাকবে, সেদিনে ইতালিয়ান লিগের স্পেৎসিয়া-ভেনেজিয়ার মতো দল মুখোমুখি হলে কে সেই ম্যাচ নিয়ে মাথা ঘামাবে? তা ছাড়া সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএর মৌসুম চলবে!
সিরি ‘আ’র টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আন্দ্রেয়া বুত্তি অবশ্য এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আমরা সূচিটা এমনভাবে সাজাব যাতে কাতারে ম্যাচগুলোর সঙ্গে সেটি সাংঘর্ষিক না হয়। ওটা (বিশ্বকাপ) একটা উৎসব, তবে এর মধ্যেও কিছু জায়গা ফাঁকা থাকবে। আমরা ওই ফাঁকা জায়গাটারই সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করছি।’
ফিফা কী বলবে
নিজেরা আয়োজন করলেই তো হবে না, ফিফার অনুমোদন লাগবে না? এ ক্ষেত্রে অবশ্য আইনের একটু ফাঁক আছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল লিগই যে সুবিধাটা পায়। তাদের লিগের সূচির সঙ্গে গ্রীষ্মকালে আয়োজিত বিশ্বকাপের সূচি সব সময়ই সাংঘর্ষিক ছিল, সে কারণে এত দিন বিশ্বকাপের সময়েও ‘বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া’দের নিয়ে লিগ চালিয়ে গেছে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের বিশ্বকাপ হচ্ছে ইউরোপের লিগগুলোর মাঝপথে। লিগের বেশির ভাগ তারকাই বিশ্বকাপে যাবেন বলে সে সময়ে ইউরোপের লিগগুলো বন্ধ থাকবে। কিন্তু এভাবে বিশ্বকাপে না যাওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনে তেমন বাধা নেই।
তবু বুত্তি ঝুঁকি নিচ্ছেন না, ‘ফিফার এতে কোনো ঝামেলার মুখে পড়তে হবে না। এখন (ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি) ইনফান্তিনো এ আয়োজনে সম্মতি দেন কি না, সেটিই দেখার।’