এমবাপ্পে বিশ্বাসঘাতক, বেনজেমার ইঙ্গিত
এমবাপ্পে থেকেই গেলেন পিএসজিতে। এক বছর বহু আলোচনার জন্ম দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তিতে পিএসজিতেই আরও তিন বছর থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। এমন সিদ্ধান্তে রিয়াল মাদ্রিদ–সমর্থকেরা খেপে উঠেছেন।
কাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্প্যানিশ ক্লাবের সমর্থকেরা। যা চলছে, সেটাকে নিগ্রহ বললেও আপত্তি থাকবে না কারও।
এমবাপ্পের এভাবে রিয়াল মাদ্রিদকে ব্যবহার করে বড় চুক্তি আদায় করাটা সহজভাবে নেননি ক্লাবের খেলোয়াড়েরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় সবাই পোস্ট করেছেন। কিছু পোস্ট খুব স্বাভাবিক মনে হতে পারে, যদিও কাল আচমকা ওই সব পোস্টের কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু কিছু পোস্ট খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ইঙ্গিতটা দিয়েছেন করিম বেনজেমা। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ইঙ্গিতে এমবাপ্পেকে বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।
রিয়াল মাদ্রিদ তাঁর স্বপ্নের ক্লাব—এ কথা এমবাপ্পে বহুবার বলেছেন। যাঁরা জানতেন না, তাঁরা এমবাপ্পের আত্মজীবনীমূলক কমিকস ‘আমি কিলিয়ান’–এর বিভিন্ন পাতায় সেটা জেনে নিয়েছেন। গত বছর এমবাপ্পে রিয়ালে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। এর আগে–পরে ফ্রান্সের জার্সিতে করিম বেনজেমার সঙ্গে এমবাপ্পের রসায়ন এই দলবদল নিয়ে বাড়তি আগ্রহ জন্মিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে নিয়মিত এ দুজনকে দেখা যাবে ভেবে অনেকেরই জিবে জল এসেছে।
ফ্রান্স দলের জার্সিতে খুব বেশি দিন দুজন একসঙ্গে খেলেননি। তবু দুজনের বন্ধুত্ব ছিল দেখার মতো। দুজনের মধ্যে যে এক প্রজন্মের ব্যবধান, সেটা বোঝাই যেত না। এমবাপ্পের সঙ্গে রিয়ালের জার্সিতে খেলার অপেক্ষায় যে বেনজেমা নিজেও ছিলেন, সেটা তো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছেন। কাল ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আরও ভালোভাবে টের পাওয়া গেছে।
গতকাল বেনজেমা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তিনটি ছবি দিয়েছেন। প্রথম ছবিটি এক ভক্তের পোস্ট। লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতার পিচিচি ট্রফি জেতায় বেনজেমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সে ভক্ত। দ্বিতীয় ছবিতেই এমবাপ্পের দলবদল নাটক নিয়ে তাঁর মনোভাব জানিয়েছেন। খুব সাধারণ ছবি, রিয়াল মাদ্রিদের এই মৌসুমে খুব পরিচিত দৃশ্য। গোল করে এক আঙুল উঁচিয়ে উদ্যাপন করেন বেনজেমা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আঙুল ভেঙে যাওয়ার পর থেকে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলছেন বেনজেমা।
আঙুলে অস্ত্রোপচার করা দরকার ছিল, কিন্তু সে কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হবে এবং রিয়ালে গোল করার মতো আর কেউ না থাকায় সে মৌসুমে অস্ত্রোপচার করেননি। এরপর করোনাভাইরাস, ইউরো, নেশনস লিগ মিলিয়ে মৌসুমের আগের ছুটি আর পাওয়া হয়নি বেনজেমার।
সে কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে ওই ব্যান্ডেজ বেঁধেই খেলছেন। বেনজেমার ব্যান্ডেজবাঁধা হাত এখন দলের প্রতি নিবেদনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেই হাতের ছবির ওপর রিয়াল মাদ্রিদের ব্যাজ বসিয়ে পোস্ট করেছেন বেনজেমা। তাঁর তর্জনী রিয়ালের ব্যাজের দিকে। ইঙ্গিতটা পরিষ্কার—সবার ওপরে ক্লাব। ক্লাবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়।
পরের ছবিতেই এমবাপ্পের দিকে ব্যক্তিগত বার্তা ছুড়ে দিয়েছেন বেনজেমা। প্রয়াত র্যাপশিল্পী টুপ্যাক ও অভিনেতা স্টিভ বল্ডউইনের একটি ছবি। ১৯৯৬ সালের সে ছবিতে টুপ্যাকের পেছনে আরেকজন। শুধু মুখ দেখা যাচ্ছে তাঁর। ছবিটা দেওয়ার কারণ হিসেবে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম কাদেনা সারের অনুষ্ঠান কারুসেল দেপোর্তিভোর ব্যাখ্যা, ‘বিশ্বাসঘাতকতা? এ ছবি পোস্ট করেছেন বেনজেমা। এ ছবিতে বিখ্যাত র্যাপার টুপ্যাক এবং তাঁর প্রিয় বন্ধু আছে, পরে টুপ্যাকের মৃত্যুতে তাঁকে সন্দেহভাজন বলে ভাবা হতো।’
বেনজেমার এ ছবি তাই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তবে একটু পর কয়েকজন এতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ১৯৯৬ সালে গুলি করে খুন করা হয়েছিল টুপ্যাককে। আর সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছিল তাঁর সাবেক বন্ধু নটোরিয়াস বিগকে। কিন্তু বেনজেমার ছবিতে নটোরিয়াস বিগ নেই। এ কারণে অনেকেই বলছিলেন, টুপ্যাকের ভক্ত বলেই ছবিটি দিয়েছেন বেনজেমা। এর সঙ্গে এমবাপ্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু আরেক ভক্ত মনে করিয়ে দিয়েছেন, ছবিতে স্ট্রেচ আছেন। এই বন্ধুর বিরুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ উঠেছে। তবে সবচেয়ে বড় যুক্তি দিয়েছেন আরেক ভক্ত। মনে করিয়ে দিয়েছেন, গতকাল ২১ মে ছিল নটোরিয়াস বিগের জন্মদিন। বন্ধু থেকে যিনি পরে টুপ্যাকের শত্রু বনে গেছেন। এমন দিনে টুপ্যাকের ছবি পোস্ট করেই যা ইঙ্গিত দেওয়ার দিয়েছেন বেনজেমা।