এমবাপ্পের কড়া জবাবের পর ভুল স্বীকার ফ্রান্সের ফুটবল-প্রধানের
কিলিয়ান এমবাপ্পে এখন যেন শুধু বিতর্কের কেন্দ্রেই থাকছেন।
রিয়াল মাদ্রিদে না গিয়ে তাঁর পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেননি অনেকে। এর মধ্যে কদিন আগে রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বললেন, তিনি যে এমবাপ্পেকে চেয়েছেন, এই এমবাপ্পে সেই এমবাপ্পে নন। পিএসজিতে থাকার চুক্তির বদলে পিএসজির ক্রীড়াবিষয়ক সিদ্ধান্তেও এমবাপ্পেরই হাত থাকবে, এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। এমবাপ্পে অমুক খেলোয়াড়কে চান, তমুক খেলোয়াড়কে ক্লাবে চান না—এমন এক খবর দেখে মাঝে এমবাপ্পে নিজেই সেই খবরের লিংক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ভুয়া খবর।’
এবার ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গেও খিটিমিটি লেগে গেল এমবাপ্পের। গত ইউরোতে ব্যর্থতার পর পিএসজির ফরাসি ফরোয়ার্ড ফ্রান্স দলে খেলতে চাননি জানিয়ে সেটির যে কারণ দেখিয়েছিলেন ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান নোয়েল লো গ্রায়েত, সেটির কড়া জবাব এমবাপ্পে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
তবে এরপর আবার লো গ্রায়েত পুরোপুরি সুর বদলে ফেলেছেন। এমবাপ্পের টুইটের পর ভুল স্বীকার করে ফ্রান্সের ফুটবল-প্রধান বললেন, এমবাপ্পের সঙ্গে সব মিটমাট হয়ে গেছে।
ঝামেলার শুরু ২০২০ ইউরো শেষে এমবাপ্পের ফ্রান্স দলে খেলতে চাওয়া-না চাওয়া এবং সেটির কারণ নিয়ে। ইউরোটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে এমবাপ্পের। ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছে শেষ ষোলোতেই, সে পথে পুরো টুর্নামেন্টে কোনো গোল নেই এমবাপ্পের। তার ওপর শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা যখন পেনাল্টিতে গেল, দুই দলের প্রথম ১০ শটের মধ্যে শুধু এমবাপ্পের শট জালে না জড়ানোতেই বিদায় নিশ্চিত হয় ফ্রান্সের।
সে সময়ে চারদিকের সমালোচনায় বিরক্ত এমবাপ্পে ফ্রান্স জাতীয় দল থেকে বিরতি নিতে চেয়েছিলেন, সে পুরোনো খবরই। গত অক্টোবরে ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপে সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পে বলেছিলেন, সবাই ফ্রান্স দলে তাঁকেই ‘সমস্যা’ মনে করলে তিনি আর সেখানে থাকবেন না। জাতীয় দলে খেলার জন্য যে তিনি কোনো অর্থ নেন না, জাতীয় দলই যে তাঁর কাছে সবকিছু—সেসবও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
তবে নোয়েল লো গ্রায়েত বলছেন, এমবাপ্পের ফ্রান্স দল থেকে বিরতি নেওয়ার মূল কারণ ছিল, ইউরোতে পেনাল্টি-ব্যর্থতার পর ফরাসি ফেডারেশন এমবাপ্পেকে আগলে রাখতে বাড়তি কিছু না করায় পিএসজি তারকার রাগ। ফরাসি সংবাদমাধ্যম জুখনাল দু দিমঁসে ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান তা-ই বলেছেন, ‘ইউরোর পর ওকে ডেকেছিলাম। ওর মনে হয়েছে ফেডারেশন ওর পেনাল্টি মিস এবং এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পর ওকে আগলে রাখতে যথেষ্ট করেনি। আমার অফিসে পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলেছিলাম আমরা।’
এমবাপ্পেকে ‘ভালো ছেলে’ জানিয়ে সে সময়ে এমবাপ্পের এমন রাগের সম্ভাব্য কারণও ব্যাখ্যা করেছেন লো গ্রায়েত, ‘ও রেগে ছিল, ফ্রান্স দলে আর খেলতে চায়নি। অবশ্যই অত ভেবেচিন্তে বলেনি ওটা। ব্যাপারটা কী, সেটা তো বোঝাই যায়। ও জিততেই অভ্যস্ত। না জেতায়, দল বাদ পড়ায় হতাশ ছিল। আর ওকে তো সবাই-ই চেনে। ও মানুষ হিসেবে অসাধারণ, আপনারা যতটা ওকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনে করেন, তা নয়। সবার ধারণার চেয়েও দল নিয়ে বেশি ভাবে ও।’
তবে লো গ্রায়েতের কথাগুলো পছন্দ হয়নি এমবাপ্পের। পেনাল্টি-ব্যর্থতার পর তাঁকে আগলে রাখা হয়নি বলে তিনি ফ্রান্স দল ছাড়তে চেয়েছিলেন, ব্যাপারটা এমন ছিল না বলেই জানাচ্ছেন ফরাসি তারকা। লো গ্রায়েতের উদ্ধৃতি নিয়ে একটি টুইটকে রি-টুইট করে এমবাপ্পের জবাব, ‘ঠিকই বলেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করে বলেই দিয়েছিলাম যে এখানে ঝামেলাটা (সমালোচনায়) বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে, পেনাল্টি নিয়ে নয়। কিন্তু তিনি তো ভাবেন কোনো ধরনের বর্ণবাদই ছিল না...!’
এমবাপ্পের টুইটের পর লো গ্রায়েত অবশ্য সুর বদলেছেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্তে এমবাপ্পের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি ফেডারেশনের মন্তব্য, ‘(এমবাপ্পে টুইটে যা বলেছেন) ওর সঙ্গে আমি একমত। সবকিছুই বুঝতে পেরেছি, কিলিয়ানের সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই আমার। ওর ব্যক্তিত্বের প্রতি সব সময়ই একটা টান অনুভব করেছি আমি।’