‘অ্যাওয়ে’ গোলের নিয়ম বাতিল করল উয়েফা
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার এখন কেমন লাগছে?
২০১৮ সালে বার্সেলোনাকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন। লা লিগা ও কোপা দেল রে জিতে তাঁকে সম্ভাব্য সেরা বিদায়ী উপহার ব্যবস্থা করে রেখেছিল বার্সা। সে সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে একদম সোনায় সোহাগা হতো। কিন্তু রোমের একটা দুঃস্বপ্নের মতো রাত তাতে বাধা হয়ে উঠল। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে জেতা বার্সেলোনা রোমার মাঠে ৮০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। এমন অবস্থায় মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয় ইনিয়েস্তাকে।
ইনিয়েস্তা উঠলেন, আর তখনই তৃতীয় গোলটি দিয়ে বসলেন কস্তাস মানোলাস। ডাগআউট থেকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন ইনিয়েস্তা। স্বপ্নভঙ্গটা যে নিশ্চিত বুঝতে পারছেন। দুই লেগ মিলিয়ে দুই দলের গোল সমান হলেও প্রতিপক্ষের মাঠের গোল বা ‘অ্যাওয়ে’ গোলের নিয়মে যে বার্সেলোনাই পিছিয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইনিয়েস্তার শেষ ম্যাচটা বার্সা হেরে গেল অ্যাওয়ে গোলে। আজ উয়েফা তাদের সব ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক বিবৃতিতে উয়েফা আজ এই জানিয়ে দিয়েছে মহাগুরুত্বপূর্ণ সে সিদ্ধান্ত। শুধু বার্সেলোনা নয়, অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম নিয়মিতই দলগুলোকে ভোগায়। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালেই এই নিয়মে পিএসজির কাছে হেরেছে বায়ার্ন মিউনিখ। ২০১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগে একইভাবে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি হেরেছিল টটেনহামের কাছে। উয়েফা ২০২১–২২ মৌসুম থেকেই অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম থেকে সরে যাচ্ছে বলে জানিয়ে দিয়েছে আজ।
উয়েফার ক্লাব কমপিটিশন কমিটি ও উয়েফার নারী ফুটবল কমিটির দেওয়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে উয়েফার নির্বাহী কমিটি। এখন থেকে পুরুষ, নারী ও যুব পর্যায়ের সব টুর্নামেন্টের নকআউট পর্ব ও বাছাইপর্বের খেলায় প্রতিপক্ষের মাঠের গোল কোনো প্রভাব রাখবে না। নতুন মৌসুমে যদি দুই লেগের খেলায় ১৮০ মিনিটে শেষে দুই দলের মোট গোল সমান হয়, সে ক্ষেত্রে আরও ৩০ মিনিট অতিরিক্ত খেলা হবে। এবং এতেও ফলাফল না পেলে পেনাল্টি শুটআউটের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারিত হবে।
এ ব্যাপারে উয়েফার বিবৃতিতে পরিসংখ্যান দিয়ে অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম বাতিলের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে সত্তরের দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া ম্যাচ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ঘরের মাঠে ও প্রতিপক্ষের মাঠের পারফরম্যান্সের পার্থক্য অনেক কমে এসেছে। একসময় ৬১ ভাগ ম্যাচই স্বাগতিক দল জিতত। সেটা এখন ৪৭ ভাগে নেমে এসেছে। আর প্রতিপক্ষের মাঠে একসময় মাত্র ১৯ ভাগ ম্যাচ জেতা হতো।
সেটাও বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে। ঘরের মাঠে ম্যাচ প্রতি গোল ২.০২ থেকে ১.৫৮-এ নেমে এসেছে। ওদিকে প্রতিপক্ষের মাঠে ০.৯৫ থেকে ১.১৫–তে উঠে এসেছে। আর নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে এক যুগ ধরেই ঘরের মাঠে ১.৯২টি গোল দেয় দলগুলো। আর প্রতিপক্ষের মাঠে ১.৬টি।
এ ব্যাপারে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন বলেছেন, ‘১৯৬৫ সাল থেকে উয়েফার টুর্নামেন্টগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল অ্যাওয়ে গোল। কিন্তু গত কয়েক বছরে উয়েফার বিভিন্ন আলোচনায় এই নিয়ম বাতিল করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাই হয়তো সম্মত হননি। কিন্তু কোচ, ভক্ত এবং ফুটবলের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এটা সঠিক কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এটা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন।’
এ নিয়ম বাতিল হওয়ায় খেলায় আবার সৌন্দর্য ফিরবে বলে মনে করেন সেফেরিন। তাঁর ধারণা, এ ক্ষেত্রে ঘরের মাঠে গোল খাওয়ার ভয়ে অতিরিক্ত সাবধানী ফুটবল খেলার চিন্তা থেকে সরে আসবে দলগুলো।