রাজাকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চায় জিম্বাবুইয়ানরা
‘রাজা ফর প্রেসিডেন্ট!’ ‘রাজা ফর প্রেসিডেন্ট!’
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের সময় হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের ঘাসের গ্যালারি থেকে যেন ভেসে আসছিল সুরের ঐকতান! দর্শকেরা সবাই সিকান্দার রাজাকে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট চান। এর পেছনে মজার একটা যুক্তিও আছে। বছরের পর বছর আফ্রিকার দেশটি অর্থনৈতিক অস্থিরতা সামলে চলছে। কোনো প্রেসিডেন্টই পারছেন না মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে।
কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে ওভারপ্রতি রানরেট ঠিকই নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তো রান তাড়া করতে নেমে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন হিসাবি ব্যাটিংয়ে। রান তাড়ার চাপ সামলে যখন ম্যাচ জেতাতে পারছেন, দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটাও না হয় রাজাকেই দেওয়া হোক—জিম্বাবুইয়ান দর্শকদের ‘রাজা ফর প্রেসিডেন্ট’ স্লোগানের কারণ এটাই।
রাজার অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে আবারও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। সিরিজ জয়ের উদ্যাপনের ফাঁকে গত পরশু রাতে প্রথম আলোকে রাজা বলছিলেন, ‘আমরা জিততে চাই। টানা জিততে চাই। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট অনেক তলানি দেখে ফেলেছে গত কয়েক বছরে। এখন আমাদের কাজ র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি আনা। যত বেশি ম্যাচ জেতা যায়, সেই চেষ্টা করা।’
বছরের পর বছর হার দেখে ক্লান্ত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা এখন নিজেদের নিয়মিতই জয়ী দেখতে চান। রাজাও বলছিলেন, ‘আমরা একটা বিজয়ী দলের সংস্কৃতির অংশ হতে চাই। আমরা অন্য দলগুলোকে জিততে দেখি, তাদের হাসি–আনন্দ দেখি। আমরাও সেই আনন্দ পেতে চাই। আর সেটা জয় ছাড়া সম্ভব নয়। সে জন্য আমরা আমাদের ড্রেসিংরুমে এবং খেলার ধরনে কিছু পরিবর্তন এনেছি। সেসবই এখন কাজে দিচ্ছে।’
রাজার স্বপ্নের গ্রীষ্মের শুরুটাও হয়েছিল বাংলাদেশে। গত এপ্রিলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিনি শাইনপুকুরের হয়ে ১০ ম্যাচে খেলে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৪২৫ রান করেছেন। দল সুপার লিগে খেলতে ব্যর্থ হলেও রাজার পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। জুন মাসেই আবার বাংলাদেশের আরেকটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলেছেন তিনি। রাজশাহীতে খেলেছেন বঙ্গবন্ধু রাজশাহী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। দেশে ফেরার আগে আগামী বছরের জন্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল শাইনপুকুরের সঙ্গে চুক্তিও করে এসেছেন। দেশে ফিরে জিম্বাবুয়েকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব জিততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে কী করেছেন, সেটা তো এখনো তাজাই।
রাজশাহীতে খেলেছেন বঙ্গবন্ধু রাজশাহী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। দেশে ফেরার আগে আগামী বছরের জন্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল শাইনপুকুরের সঙ্গে চুক্তিও করে এসেছেন। দেশে ফিরে জিম্বাবুয়েকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব জিততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে কী করেছেন, সেটা তো এখনো তাজাই।
নিজের খেলার উন্নতিতে বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতার আলাদা একটা ভূমিকা দেখেন রাজা। সে জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন, ‘আমি যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় খেলছি, সেটা মূলত জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের কারণেই। আমি সব সময় সে জন্য কৃতজ্ঞ থাকব সুযোগটা দেওয়ার জন্য। অন্য যেসব দেশে আমি খেলে আমার ক্রিকেটে উন্নতি করেছি, তাদেরও ধন্যবাদ। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। সেখানে যেসব ফ্র্যাঞ্চাইজি, যেসব ক্লাব আমাকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে, তাদেরও ধন্যবাদ দিতে হবে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার কারণেই আমি এখানে।’
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার সুবাদে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদেরও খুব ভালো চেনা জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটারের। সে কারণেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া, জিম্বাবুয়ে এসে এবার কেন এ রকম এলোমেলো হয়ে গেল বাংলাদেশ? কিন্তু তিনি নাকি দলে কোনো সমস্যাই দেখছেন না, ‘কোনো সমস্যা নেই বাংলাদেশ দলে। বাংলাদেশ যেহেতু ক্রিকেটের জন্য পাগল একটা দেশ, পারফরম্যান্সে একটু ওঠানামা হলেই সবাই ভুলে যায়, দলটা সম্প্রতি কী অর্জন করেছে। আমরা সিরিজ জিতেছি ঠিক, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ সুপার লিগের ২ নম্বর দল। সেটা তারা ধারাবাহিকভাবে জেতাতেই সম্ভব হয়েছে। আমার অন্তত মনে হয়নি বাংলাদেশ খারাপ খেলেছে।’
সিরিজে এখনো এক ম্যাচ বাকি। জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য এখন বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করা। রাজার কথায়ও বোঝা যাচ্ছে তাদের সেই ইচ্ছাটা, ‘আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব জিতেছি। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছি। এরপর আমাদের লক্ষ্য ছিল ওয়ানডে সিরিজে একটা ম্যাচ জেতা, সেটাও হয়েছে। এখন তো সিরিজই জিতে গেলাম। তবে এখন আমাদের শেষ ম্যাচের দিকে তাকাতে হবে।’