'সাদা হাতি'দের হাতের তলে বছর
>২০১৮ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে ছড়ি ঘুরিয়েছেন লেগ স্পিনাররা
ওয়ানডে ক্রিকেটে এ বছর প্রথম বলটা পেসারের। মোহাম্মদ আমির, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বছরের শেষ বলটাও পেসারের। সিলেটে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’-এ বাংলাদেশের বিপক্ষে রোভম্যান পাওয়েল। পেসাররা শুরু আর শেষে থাকলেও তাঁদের মাঝে থেকে ২০১৮ সালের আলো কাড়লেন কিনা, স্পিনার!
একটু খোলাসা করে বলা যাক। এ বছর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া শীর্ষ পাঁচ বোলারের মধ্যে পেসার মাত্র একজন। সেটিও তালিকার পাঁচে। শীর্ষ চারজনই স্পিনার। আরেকটু খোলাসা করলে বলতে হবে, শীর্ষ তিন বোলারই ক্রিকেটে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় ‘সাদা হাতি’—লেগ স্পিনার। ক্রিকেটে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিলেন যে শিল্পের বাহকেরা।
শীর্ষ পাঁচে ‘এতিম’ পেসারটিও ডাকাবুকো গোছের কেউ নন। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হলেও তারকা ইমেজ নেই বললেই চলে। শুধু নিবেদন আর পরিশ্রমের জোরে ২১ ম্যাচে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৩০। টেন্ডাই চাতারা—তাঁর দলটা জিম্বাবুয়ে বলেই হয়তো কারও চোখে পড়ে না। শীর্ষ দশে যে তিন পেসার জায়গা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে চাতারার ওভারসংখ্যাই সর্বোচ্চ (১৫৪.৫ ওভার)। বোঝাই যাচ্ছে, দলের জন্য ঘামের শেষ বিন্দুটুকু বিসর্জন দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন চাতারা।
বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ১৮ ম্যাচে ২৯ উইকেট নিয়ে রয়েছেন চাতারার পরেই—ষষ্ঠ। তবে বোলিং গড় আর ইকোনমিতে বাকি দুই পেসার চাতারা আর লুঙ্গি এনগিডিকে টেক্কা দিয়েছেন মোস্তাফিজ। চাতারার বোলিং গড় ২৭.০৩, ওভার প্রতি গড় ইকোনমি ৫.২৩। ১৩ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে দশে থাকা প্রোটিয়া পেসার এনগিডির বোলিং গড় ২৩.০৩ আর গড় ইকোনমি ৫.৪৬। মোস্তাফিজের বোলিং গড় ২১.৭২ আর ওভার প্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৪.২০।
এবার আসা যাক ‘সাদা হাতি’দের প্রসঙ্গে। যেখানে এ বছর ওয়ানডেতে উইকেট শিকারের শীর্ষে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলার। ঠিকই ধরেছেন। ওভারে গড়ে অন্তত তিনখানা করে গুগলি মারা রশিদ খান। এ বছর ২০ ম্যাচে মোট ১৭৮ ওভার বল করেছেন এই লেগ স্পিনার। ওভার প্রতি ৩.৮৯ গড়ে রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৪৮টি। বোলিং গড় ১৪.৪৫। শীর্ষ দশে বোলিং গড়ে রশিদের কাঁধে শ্বাস ফেলার কেউ নেই। তবে কাছাকাছি রয়েছেন ভারতের ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব। আদতে বাঁ হাতি লেগ স্পিনার। তাঁর বোলিং গড় ১৭.৭৭। যাদব আবার রশিদের চেয়ে (১৭২.২ ওভার) ৩৪ বল কম করেছেন এ বছর। উইকেটসংখ্যায়ও আফগান লেগির চেয়ে তিনি পিছিয়ে। তবে খুব বেশি দূরে নয়—১৯ ম্যাচে ৪৫ উইকেট।
লেগ স্পিনারদের ‘সাদা হাতি’ বলার রেওয়াজ একেবারে অযৌক্তিক নয়। এই ঘরানার বোলার যেমন বিরল তেমনি রান খরচায়ও বিলাসী। তাঁদের আলাদা করে যত্ন নেওয়ারও দরকার পড়ে। তবে জায়গামতো বল ফেলতে পারলে কিংবা একটু ফর্মে থাকলে একজন লেগি একাই প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দিতে পারেন। যেমন ধরুন, আদিল রশিদ। ইংলিশ স্পিন ডিপার্টমেন্টের প্রচ্ছদ-মুখ। ২৪ ম্যাচে ৪২ উইকেট নিয়ে এই বছর তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ইংলিশরা আদিলের ওপর কতটুকু ভরসা রাখে সেটি বোঝা যায় তাঁর ওভারসংখ্যায়। শীর্ষ দশে থাকা বোলারদের মধ্যে আদিলের ওভারসংখ্যাই (২১৩) সর্বোচ্চ। আবার রান দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি শীর্ষ দশে থাকা সব স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বিলাসী (ওভার প্রতি ৫.৪১)।
বছরের চতুর্থ সেরা বোলারটিও একজন স্পিনার—মুজিব উর রহমান। আফগান এই স্পিনার আবার উল্টো—অফ স্পিনার। ২০ ম্যাচে তাঁর শিকার ৩৭ উইকেট। মুজিব অবশ্য একটি জায়গায় শীর্ষ দশে সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন—ওভার প্রতি রান দেওয়ায় তিনি-ই সবচেয়ে কিপটে (৩.৮৪)। শীর্ষ দশের পর থেকে তালিকা করলে শীর্ষে আবার এক বাংলাদেশি! দেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা—২০ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে এগারোতম।
২০১৮ সালে ওয়ানডেতে শীর্ষ পাঁচ বোলার:
বোলার | ম্যাচ | উইকেট | ইকোনমি | সেরা বোলিং | গড় | স্ট্রাইক রেট |
রশিদ খান (আফগানিস্তান) | ২০ | ৪৮ | ৩.৮৯ | ৫/২৪ | ১৪.৪৫ | ২২.২ |
কুলদ্বীপ যাদব (ভারত) | ১৯ | ৪৫ | ৪.৬৪ | ৬/২৫ | ১৭.৭৭ | ২২.৯ |
আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড) | ২৪ | ৪২ | ৫.৪১ | ৪/৩৬ | ২৭.৪৭ | ৩০.৪ |
মুজিব উর রহমান (আফগানিস্তান) | ২০ | ৩৭ | ৩.৮৪ | ৫/৫০ | ১৯.৫৪ | ৩০.৪ |
তেন্দাই চাতারা (জিম্বাবুয়ে) | ২১ | ৩০ | ৫.২৩ | ৪/৩৩ | ২৭.০৩ | ৩০.৯ |