'শুধু পাকিস্তান নয়, নিরাপত্তা-শঙ্কা সব জায়গাতেই'
ছয়টা টি-টোয়েন্টি, তিনটি ওয়ানডে আর তিনটি টেস্ট। শুধু গত এক বছরেই এতগুলো ম্যাচ হয়েছে পাকিস্তানের মাটিতে। অথচ এই সময়ে বাংলাদেশই দেশের মাটিতে সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে মাত্র ছয়টি। সে হিসেবে বলতে গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো ধীরে ধীরে নিয়মিতই হয়ে উঠছে পাকিস্তানে!
পরিসংখ্যানও তা-ই বলে। গত পাঁচ বছরে মোট ২৪টি ম্যাচ হয়েছে পাকিস্তানে, গত দুই বছরে ১৫টি। লাহোর হয়ে শুরু হয়ে এখন করাচি আর রাওয়ালপিন্ডিতেও ম্যাচ আয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশ তো কদিন আগে দুই দফায় ঘুরে এসেছে, আরও একবার যাবে। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে এমনকি বিশ্ব একাদশও ঘুরে গেছে পাকিস্তান। তাহলে কি ধীরে ধীরে বাইরের বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের নিরাপত্তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে? হয়তো। কুমার সাঙ্গাকারার কথার পর সেটি হয়তো আরও বাড়বে। পাকিস্তানের প্রশংসা করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তির কথা, নিরাপত্তা-শঙ্কা তো শুধু পাকিস্তানে নয়, বর্তমানে বিশ্বের সব জায়গাতেই আছে!
এ মুহূর্তে ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) গড়া দল আছে পাকিস্তান সফরে। এমসিসির সভাপতি এখন সাঙ্গাকারা। কাল থেকে শুরু সফর চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১২ জনের এই দলটি লাহোরে পাকিস্তানের চারটি ভিন্ন দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে—লাহোর কালান্দার্স, পাকিস্তান শাহীনস, নর্দানস ও মুলতান সুলতানস। ৪৭ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তানে এসেছে এমসিসি, সাঙ্গাকারা নিজে এসেছেন ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দশ বছর পর।
কিন্তু এসেই পাকিস্তানের সবকিছুতেই মুগ্ধতা ‘সাঙ্গা’র। আরও দলকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণও জানালেন এমসিসি সভাপতি, ‘নিরাপত্তা-শঙ্কা তো এখন শুধু পাকিস্তানে নয়, বিশ্বের সব জায়গাতেই আছে। যত বেশি আন্তর্জাতিক দল পাকিস্তান সফর করবে, তত শক্ত বার্তা যাবে অন্যদের কাছে। এমসিসি এখানে এসেছে, কারণ আমাদের মূল দর্শনগুলোর একটিই , ক্রিকেটের চেতনা যে অন্য সব বাধাকে ছাপিয়ে যায়। যে বাধাগুলো মাঝে মধ্যে দেশে দেশে, মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে। ব্যক্তিগতভাবে আমার পাকিস্তান সফরের অনেক মধুর স্মৃতি আছে, বিশেষ করে লাহোরের।’
পাকিস্তানে নিয়মিত ক্রিকেট ফেরানোর গুরুত্ব বোঝাতে শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধের দিনগুলোর স্মৃতি টেনে এনেছেন সাঙ্গাকারা, ‘ক্রিকেট ধীরে ধীরে পাকিস্তানে ফিরে আসছে। যে দলগুলো সবার আগে পাকিস্তানে এসেছে, তাদের একটি শ্রীলঙ্কা। একজন শ্রীলঙ্কান হিসেবে ও এমসিসির প্রধান হিসেবে আমার তাই ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমরা আমাদের দিক থেকে কিছু করতে পেরেছি। অন্য দেশগুলোকে পাকিস্তানে আসতে উৎসাহ জোগাতে পেরেছি। ১৯৯৬ সালে (গৃহযুদ্ধের সময়ে) শ্রীলঙ্কার যখন সাহায্যের দরকার হয়েছিল, তখন ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য দেশগুলো এক হয়ে তখন যে শক্তি জুগিয়েছে, সেটা ছিল দারুণ।’
এমসিসির এই সফরের উদ্দেশ্যও তেমন কিছুই বলে জানালেন সাঙ্গাকারা, ‘আমাদের কাছে এই সফরটা সবাইকে বার্তা দেওয়ার আর পাকিস্তানকে তাদের দেশে ক্রিকেট ফেরানোর এই অসাধারণ সফরে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত। ক্রিকেট সবার জন্যই। লম্বা সময় ধরে ক্রিকেট কোনো জায়গায় না থাকলে খেলাটার খিদে মরে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।’