'ফেক ফিল্ডিং'য়ে ৫ রানের জরিমানা মিরাজের
>বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই প্রথম ফেক ফিল্ডিংয়ে ৫ রানের জরিমানা গুনলো কোনো দল। বল টেম্পারিংয়ের শাস্তিও ৫ রানের জরিমানা। ফেক ফিল্ডিংয়ের শাস্তিটা তাই যথেষ্ট গুরুতর বলেই বিবেচিত
মেহেদী মিরাজের অভিব্যক্তিটা ছিল দেখার মতো। হতাশা, ক্ষোভ আর অসহায়ত্ব মিলেমিশে একাকার। এমনিতেই দল ভালো করছে না। প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে। আজ রংপুর রাইডার্সকে খুব বেশি লক্ষ্যও দিতে পারেনি তাঁর দল। ১৩৬ রানের সেই লক্ষ্যটা আরও ছোট বানিয়ে দিল ৫ রানের জরিমানা!
মিরাজ যে কারণে জরিমানা গুনেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটেই তা প্রথম। সেটি ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে। মিরাজ শাস্তি পেয়েছেন ফিল্ডিংয়ের ভান করে। আইসিসির আইনে যেটিকে বলে ফেক ফিল্ডিং। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে নিজের বলেই মিরাজ স্কয়ার লেগের দিকে ছুটে যান। বল থেকে দূরে থাকতেই স্লাইড করেন। ততক্ষণে সুইপার পজিশন থেকে দৌড়ে এসে ফিল্ডার বল কুড়িয়ে পাঠিয়ে দেন। ওই বলে ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো ১ রান নিয়েছেন। দুই রান নিতে পারতেন কি না, মিরাজকে স্লাইড করতে দেখেই থেমে গেছেন কি না; এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে আম্পায়ারের মনে হয়েছে, ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতেই মিরাজ ফেক ফিল্ডিং করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী যার শাস্তি ৫ রান। রংপুর রাইডার্সের স্কোরকার্ডে অতিরিক্ত খাতের পাশে লেখাও হয়ে গেছে সেই রান।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইসিসি এই আইনটি পাস করে। ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা এমসিসি এর আগে আইনটি অনুমোদন করেছিল। ক্রিকেট আইনের ৪১.৫ ধারা অনুযায়ী ফিল্ডিংয়ের ভান করার শাস্তি রাখা হয় ৫ রানের জরিমানা। বল টেম্পারিংয়ের জরিমানাও ৫ রান। মাঠের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানটি ফেক ফিল্ডিংয়ের জন্যও বরাদ্দ করা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, এ ধরনের অপরাধকে আইসিসি বা এমসিসি কত বড় অন্যায় হিসেবে দেখে।
আইনটি পাস হওয়ার পর পরই অবশ্য পক্ষে-বিপক্ষে বেশ তর্ক হয়েছে। আজই যেমন মিরাজ দাবি করতে পারেন, তিনি ফিল্ডিংয়ের ভান করেননি; বরং সীমানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ফিল্ডারটিকে বল ঠিকমতো ধরতে ও থ্রো করতে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই স্লাইড করেছিলেন। আম্পায়ারের শাস্তি যে মানতে পারছিলেন না, সেটা প্রেস বক্স থেকেই মিরাজের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত মেনে নেন।
ফেক ফিল্ডিংয়ের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই একটাই বড় ফাঁক থেকে যায়। ফিল্ডার যা করছেন, তা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত; অনেক সময়ই তা অস্পষ্ট হতে পারে।
তবে এই আইনে সাজা পেয়েছিল প্রথম যে দল, তারা নিজেরাই আইনটির পক্ষে বলেছিল। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া জেএলটি ওয়ানডে কাপে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট একাদশের বিপক্ষে কুইন্সল্যান্ডকে এই শাস্তি পেতে হয়। তবে কুইন্সল্যান্ডের ওপেনার ম্যাথু রেনশ ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টিকোণ থেকে আইনটি যথার্থ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
অনেক সময় ব্যাটসম্যানরা শট খেলার পর রান নিতে যখন ছোটেন, মাঠের কোনো কোনো ফিল্ডার তাদের বিভ্রান্ত করতে বল কুড়ানো, বা বল কুড়িয়ে থ্রো করার অভিনয় করেন। অনেকে ধারেকাছে বল না থাকলেও ডাইভ দেন। এতে রান নিতে থাকা ব্যাটসম্যান সাময়িক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। ক্রিকেটীয় চেতনা-বিরোধী এই কাজটি থামানোর জন্যই এমসিসি ৪১.৫ ধারা পাস করে। যেটি মক ফিল্ডিং বা ফেক ফিল্ডিংয়ের শাস্তি নামে পরিচিত।
আজ মিরাজ এই শাস্তি পাওয়ার পর তাঁর দল শেষ পর্যন্ত জিতেছে। তবে শেষ ওভারের নাটকীয়তা যেভাবে জমে উঠেছিল , একটুর জন্য ম্যাচটা হেরে গেলে এই ৫ রান নিয়ে রাজশাহী অধিনায়কের আফসোসের শেষ থাকত না!