'খুব ভালো খেলছে ছেলেটা' - ইয়াসিরকে নিয়ে মিনহাজুলের মুগ্ধতা
>বিপিএলের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ধারাবাহিক ভালো করে আলোচনায় এসেছেন ইয়াসির আলী। চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা ব্রাদার্সের এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের আয়ারল্যান্ড সফরে সুযোগ পাওয়ার জোর সম্ভাবনা, তাঁর প্রতি প্রধান নির্বাচকের মুগ্ধতা অন্তত সেটিই বলে। অথচ ইয়াসির কিনা নিজেকে ‘অপরাধী’ ভাবছেন! কেন?
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে এবার কে কে নজর কেড়েছে আপনাদের? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন খুব বেশি নাম বলতে পারলেন না, ‘এবার তরুণেরা খুব একটা আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি। তবে...।’ তবে বলে মিনহাজুল যাঁর নাম সবার আগে বললেন—ইয়াসির আলী। ‘খুব ভালো খেলছে ছেলেটা’—ইয়াসিরকে নিয়ে প্রধান নির্বাচকের যে মুগ্ধতা, আয়ারল্যান্ড সফরে তরুণ ব্যাটসম্যানের বাংলাদেশ দলে থাকাটা প্রায় নিশ্চিত।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ইয়াসির ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছেন। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে বিপিএলে ছিলেন। গত বিপিএলে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি, দেশের এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম ফিফটি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। টুর্নামেন্টে করেছিলেন তিন ফিফটি। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ইয়াসির ধরে রেখেছেন সেই ধারাবাহিকতা। ব্রাদার্সের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ১১ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে করেছেন ৪২৩ রান। ইয়াসিরের গড় ১০৫.৭৫—এবারের প্রিমিয়ার লিগে একমাত্র তাঁর গড়ই তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে।
এত ভালো খেলেছেন, আছেন আলোচনায় অথচ ইয়াসির নিজেকে ‘অপরাধী’ ভাবছেন! তাঁর দল ব্রাদার্সের সামনে যে অবনমন বাঁচানোর লড়াই। দারুণ খেলেও দলকে ভালো অবস্থানে নিতে না পেরে ইয়াসিরের যে হরিষে বিষাদ, ‘নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হয়! ভালো খেলেও যখন দলকে যখন ভালো একটা জায়গা নেওয়া যায় না, তখন নিজেকে আসলেই অনেক অপরাধী মনে হয়!’
ইয়াসিরের আর দোষ কী, নিজের কাজটা করেছেন। এমনকি দলের টপ অর্ডারে দুই সতীর্থ ব্যাটসম্যান ফজলে রাব্বী-মিজানুর রহমানও ধারাবাহিক ভালো খেলেছেন। তবু তিনটির বেশি ম্যাচ জিততে পারেননি তাঁরা। বিকেএসপির মতো নবীন দলের দেওয়া ২৬৮ রান তাড়া করতে নেমে ২ রানে হার, প্রাইম ব্যাংকে ৩৩১ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েও ৫ উইকেটে হার। ইয়াসির মনে করেন, বোলাররাই তাঁদের ডুবিয়েছেন, ‘আসলে তিন বিভাগের একটা দিয়ে ভালো ফল পাওয়া খুব কঠিন। আমাদের বোলিং বিভাগ খুব অনভিজ্ঞ ছিল। চাপের মুখে পড়লে ওরা সেটা সামলাতে পারেনি। এসব কারণে বেশির ভাগ ম্যাচ হেরে গেছি। দেখেননি, প্রাইম ব্যাংকের কাছে ৩৩১ করেও হেরে গেছি।’
প্রিমিয়ার লিগের দলীয় সাফল্য বলার মতো না হলেও ইয়াসির খুশি হতে পারেন এটা জেনে যে তাঁর পারফরম্যান্সে খুশি নির্বাচকেরা। চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা এ তরুণ ব্যাটসম্যান ভালো খেলছেন, আলোচনায় এসেছেন। নিজেও অবাক হন এই ভেবে, ওই দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার না হলে এত দূর আসাই হয় না! গত জুনে তাঁর জীবনটাই থেমে যেতে বসেছিল। ভীষণ অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন আর ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন কি না। মিরপুরে এক সিএনজি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন ইয়াসির, আঘাত পেয়েছিলেন বাঁ পায়ে। চার মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। চোটে পড়ায় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরটা হাতছাড়া হওয়ায় ভীষণ ভেঙেও পড়েছিলেন।
নিয়তির কী খেলা, এবার ‘এ’ দল নয়, বাংলাদেশ দলের হয়েই আয়ারল্যান্ড সফরে সুযোগ পাওয়ার জোর সম্ভাবনা! প্রধান নির্বাচকের কথায় বোঝা গেল, বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পাওয়ার ব্যাপারটা অনিশ্চিত হলেও ইয়াসিরকে তাঁরা একবার পরখ করে দেখতে চান আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে। যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়েও যায়, ইয়াসিরের তাতে দুঃখ নেই। তিনি জানেন, তাঁকে যেতে হবে বহু দূর, ‘আমার মাত্র শুরু। চেষ্টা করব ছন্দটা সামনেও ধরে রাখতে। কঠোর পরিশ্রম করে যাব। এই যে আলোচনা হচ্ছে আমাকে নিয়ে, এটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছি। মনে হচ্ছে, আরও ভালো খেলতে হবে আমাকে। সেটি হলো নিশ্চয়ই স্বপ্নটা একদিন পূরণ হবে।’
সে স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়ে যেতে পারে দ্রুতই। শুরুতে বিনয়ের অবতার হয়ে নিজেকে ‘অপরাধী’ বললেও পরে একটা সংশোধনী দিলেন ইয়াসির। ‘নিজেকে দুর্ভাগাই বলব’—নিজে ভালো খেলার পরও দল সাফল্য না পেলে একজন খেলোয়াড় নিজেকে আর কী বলতে পারেন!