৯৭ মাইলের বল নিয়ে মাতামাতিতে আপত্তি রশিদ লতিফের
মরু নয়, গতির ঝড় উঠেছিল গত বুধবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। প্রথম ইনিংসে রাজস্থান রয়্যালসের জফরা আর্চার গতিতে মাতিয়ে দেন। ১৪৪ থেকে ১৫১ কিলোমিটার গতিতে বল করেছিলেন ক্যারিবীয় বংশোদ্ভুত ইংলিশ ফাস্ট বোলার। পরের ইনিংসে সেটির কড়া জবাব দেন দিল্লি ক্যাপিট্যালসের দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার আনরাইখ নর্টিয়ে।
এমনই যে, আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গতিতে বল করার রেকর্ডই ভেঙে দিয়েছেন নর্টিয়ে (১৫৬.২২ কিমি/ ৯৭ মাইল)। আগের রেকর্ডটি ছিল আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান ডেল স্টেইনের, ২০১২ সালে ডেকান চার্জাসের হয়ে তাঁর বলটি ছিল ১৫৪.৫ কিমি বেগে।
স্বাভাবিকভাবে নর্টিয়ের ওই ডেলিভারি নিয়ে মাতামাতি চারিদিকে। শুধু সেটিই নয়, ম্যাচজুড়েই বুধবার গতির ঝড় তোলেন নর্টিয়ে। কিন্তু এ নিয়ে এত মাতামাতি পছন্দ হচ্ছে না পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফের। তাঁর চোখে, আগে এই গতির বল তো নিয়মিতই ছিল! ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার, ব্রেট লি বা তারও আগে কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোসরা আগে নিয়মিতই এই গতিতে বল করতেন, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন লতিফ।
এবারের আইপিএলে দারুণ বোলিংই করে যাচ্ছেন আনরিখ নর্টিয়ে। ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন ২৬ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার, তা-ও মাত্র ১৯ স্ট্রাইক রেটে। কিন্তু রাজস্থানের বিপক্ষে বুধবারের নৈপুণ্য সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে। রাজস্থান ইনিংসের তৃতীয় ও ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলারের সঙ্গে দ্বৈরথেই গতির ঝড় তোলেন সবচেয়ে বেশি।
১৪৮ কিমি বেগে তাঁর প্রথম বলটি লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। এতেই যেন নর্টিয়ের ফাস্ট বোলার অহমে লাগে। তারওপর আগের ইনিংসে আর্চারের গতির ঝড় দেখেছেন। এমনিতেই পেশিবহুল শরীর, চওড়া কাঁধ ও লম্বা রানআপে তাঁর বলে গতির ঝড় ওঠে।
ছক্কার মার খাওয়ার পর ওই ওভারের পরের পাঁচটি বল নর্টিয়ে টানা করে গেছেন ১৫০ কিমি গতির ওপরে। ওই ওভারের শেষ বলে উপড়ে দেন বাটলারের স্টাম্প। ১৫২.৩ কিমি, ১৫২.১ কিমি, ১৪৬.৪ কিমি, ১৫৬.২ কিমি ও ১৫৪.৮ কিমি—এই হলো নর্টিয়েরের ওই ওভারে করা বাকি পাঁচ বলের গতি। ওভারের পঞ্চম বলে গড়েছেন আইপিএলে সবচেয়ে বেশি গতির বলের রেকর্ড।
একজন ফাস্ট বোলারের এমন দুর্ধর্ষ গতিতে বল করে যাওয়া, তা-ও দুবাইয়ের ধীর গতির পিচে, একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে! দেখার মতো দৃশ্যই, যেখানে মার খেলে সাধারণত বোলাররা কাটার-স্লোয়ার দেওয়ারই চেষ্টা করেন বেশি। টি-টোয়েন্টির যুগে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের চাহিদা তেমন কিছুই দাবি করে। সেখানে নর্টিয়ের ওভাবে গতির ঝড়ে মেতে ওঠা স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসা কুড়িয়েছে অনেক। এমনিতেই ফাস্ট বোলারদের গতির ঝড় তুলতে দেখা ক্রিকেটের সব বড় রোমাঞ্চের একটি, তা যে কেউই মানবেন।
ম্যাচের সময়ই সেদিন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গতি তারকা ব্রেট লি টুইট করেন নর্টিয়ের রেকর্ডগড়া ডেলিভারি নিয়ে, ‘নর্টিয়ের দিক থেকে দারুণ ভয়ংকর তোপ! ঘন্টায় ১৫৬.২ কিমি!’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক গতি তারকা ইয়ান বিশপও টুইট করেন বাটলারকে বোল্ড করা নর্টিয়ের সেই ডেলিভারি নিয়ে, ‘আনরিখ নর্টিয়ে এইমাত্র ১৫৫ কিমির রকেট ছুঁড়ে বাটলারের স্টাম্প উপড়ে দিল!’
বিশপের এই টুইটে গিয়েই নিজের মতামক জানিয়েছেন লতিফ। কার্টলি অ্যামব্রোস, ব্রেট লি, শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনিস, শেন বন্ডের মতো সাবেক গতি তারকাদের ট্যাগ করে বিশপের টুইটের নিচে মন্তব্যে লতিফ লেখেন, ‘আগে ১৫০ (কিমি) রুটিন বল ছিল। আপনি, স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস, ওয়ালশ, অ্যান্থনি, ব্রেট লি, ওয়াকার, বন্ড, শোয়েব ও সামি ধারাবাহিকভাবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে জোরে বল করে গেছেন।’
মন্তব্যের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো এক ম্যাচে ব্রেট লির একটা ওভারের পাঁচটি বলের গতির চিত্র তুলে ধরা একটি ছবিও জুড়ে দেন লতিফ। যেখানে দেখা যাচ্ছিল, লি ১৫৮-১৬০ কিমি গতিতে টানা বল করেছেন।
টি-টোয়েন্টিতে এসে বোলারদের এখন গতির ঝড় তোলার চেয়েও স্লোয়ার-কাটার বা না-কল বলে বেশি আগ্রহী করে তুলছে। তবে নর্টিয়ে-আর্চারদের পরশুর ঝড় আরেকবার মনে করিয়ে দিল, গতির আবেদন অনন্য।