৮ বলের ওভারে ২৩ রানের ‘হরর শো’ কি ভুলতে পারবেন জর্ডান
কাল রাতটা দুর্বিষহ কেটেছে ক্রিস জর্ডানের। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড পেসারের এক ওভারেই ঘুরেছে ম্যাচের মোড়। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের জয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠেছে নিউজিল্যান্ড।
১৬ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১১০। জিততে ২৪ বলে দরকার ৫৭ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অসম্ভব মনে না হলেও স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্যটা কিউইদের জন্য দূরের বাতিঘর মনে হচ্ছিল।
এর মধ্যে ১৭তম ওভার করতে আসলেন ক্রিস জর্ডান। আগের ২ ওভারে মাত্র ১০ রান দেওয়ায় তাঁর হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এডউইন মরগান। বাকিটা জর্ডান সম্ভবত যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবেন। দুটি ওয়াইডসহ মোট ৮ বলেই সে ওভারে জর্ডান দিয়েছেন ২৩ রান! ‘হরর শো’ বলতে যা বোঝায় আরকি।
নিশাম সে ওভারে একাই মেরেছেন দুটি ছক্কা ও এক চার। এই বিশ্বকাপে এটাই ইংল্যান্ডের এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার নজির। ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান নিশাম। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি জর্ডান।
শেষ পর্যন্ত আরও একটি করে চার-ছক্কা ছাড়াও ২ রান, ১ রান ও ওয়াইড মিলিয়ে ৮ বলে খরচ হয় ২৩ রান। নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের মুঠো ফসকে ম্যাচটা বের হয়ে যায় তখনই।
ওভারটি সারা জীবন জর্ডানকে তাড়া করে বেড়াবে বলে মনে করেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ক্রিকেট লিখিয়ে ও উইজডেনের সাবেক সম্পাদক শিল্ড বেরি।
বেরি তাঁর কলামে লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে জর্ডানের সঙ্গে ২৩ সংখ্যাটি লম্বা সময় জড়িয়ে থাকবে। এ কারণেই ক্রিকেট নিষ্ঠুরতম খেলা। ৯৯ বা ০ রান করেন অথবা ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করছে, এমন সময়ে আপনি অনেক রান দিলেন, এসব ভুল চিরস্থায়ীভাবে গেঁথে থাকবে—জিমি নিশাম যখন তাকে মারছিল, ইংল্যান্ড তখন এমন অবস্থায়ই ছিল।’
তবে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারের জন্য ইংল্যান্ডের কোচ ক্রিস সিলভারউড জর্ডানকে দায়ী করতে রাজি নন। জর্ডান নিজের সেরাটাই দিয়েছেন বলে মনে করেন সিলভারউড। যদিও শিল্ড বেরি মনে করেন, চাপের মুহূর্তে এমন পারফরম্যান্স অনেক ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের গতিপথ বেঁধে দেয়।
বেরি উদাহরণ টানেন, ‘চিন্তা কোরো না, এতে তোমার ক্যারিয়ারের গতিপথ ঠিক হয়ে যাবে না—২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে জফরা আর্চার সুপার ওভার শুরুর আগে তাকে চাপমুক্ত রাখতে এ কথা বলেছিলেন বেন স্টোকস। কিন্তু আসলে এসবই গতিপথ ঠিক করে দেয়। সেটা ভুল কিংবা ঠিক হতে পারে। চাপের মুহূর্তে যখন সবাই চোখ রাখছে, তখনকার পারফরম্যান্স গতিপথ ঠিক করে দেয়—সেটা জীবনের না হলেও অন্তত ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে তো বটেই।’
৩ ওভারে ৩১ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন জর্ডান। দল না হারলে জর্ডান হয়তো এই বাজে পারফরম্যান্সকে পাত্তা দিতেন না, এমনকি ইংল্যান্ডের সমর্থকেরাও হয়তো ভুলে যেতেন। কিন্তু ওই এক ওভারই কাল হয়ে দাঁড়াল ইংলিশ পেসারের জন্য।