৭ বছরে ১৫ টেস্ট খেলা বোলারই নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্প্রচারিত হচ্ছে মধ্যরাতে। চোখে আধো ঘুম নিয়ে যাঁরাই টেলিভিশন ছেড়েছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আড়ালে খেলছে কারা? কিছুদিন আগে ঘরের মাঠে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছে একটি দল। নিউজিল্যান্ডের মাঠে সেই দলটি এতটা হতশ্রী!
৯৫ রানে গুটিয়ে গেছে প্রোটিয়ারা। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে তাদের এই দুরবস্থার কারণ ম্যাট হেনরি। এই নামটা একটু হলেও দূরের ঠেকতে পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ পাঁচ টেস্টে যে দলে সুযোগই পাননি তিনি। গত পাঁচ বছরে ৮ টেস্ট খেলা পেসার দলে ডাক পেয়েছেন ট্রেন্ট বোল্টের পিতৃত্বের ছুটির কারণে। সুযোগ পেয়েই ইতিহাস গড়লেন হেনরি। ২৩ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর তিনটিই নিয়েছেন এক ওভারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৯৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া এমনিতেই বড় ঘটনা। ১৯৩২ সালের পর এই প্রথম তারা কোনো টেস্টের প্রথম ইনিংসে এক শর নিচে অলআউট হয়েছে তারা। ৯০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৩৬ রানে। সে ম্যাচ ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়াও প্রথম ইনিংসে খুব একটা ভালো করেনি। তবে ১৫৩ রানই ইনিংস ব্যবধানে জেতাতে যথেষ্ট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছিল ৪৫ রানে। ৬৫৬ বলে শেষ হওয়া সে টেস্ট ফল মিলেছে—এমন টেস্টের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যাপ্তির।
হেনরি আজ নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁর স্পেল দিয়ে। ১৯৭৬ সালে ওয়েলিংটনে কিউই গ্রেট ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ঠিক ২৩ রান দিয়েই। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ঘরের মাঠে সেরা বোলিং রেকর্ডে হ্যাডলির পাশে বসা শুধু হেনরি নন, যেকোনো নিউজিল্যান্ডের পেসারের জন্য স্বপ্নের ব্যাপার। অথচ বোল্ট-সাউদি-জেমিসন-ওয়াগনরদের ভিড়ে হেনরি অনিয়মিত একজন।
এর আগে কখনোই ৫ উইকেট পাননি যে বোলার, তিনিই আজ নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেরা বোলিং অবশ্য এক ভারতীয়র—এরাপল্লি প্রসন্নবেদী। ১৯৭৬ সালেই অকল্যান্ডে প্রসন্নবেদী ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ৭৬ রান দিয়ে।
হেনরি কেবল রিচার্ড হ্যাডলির পাশেই বসেননি, নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সেরা বোলিং-বিশ্লেষণও এখন তাঁর। এই জায়গায় অবশ্য হ্যাডলি তাঁর চেয়ে এগিয়ে। ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিংবদন্তি ৫১ রানে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন। আর সবার আগে আছেন গত ডিসেম্বরে টেস্টের এক ইনিংসে ১০ উইকেট পাওয়া এজাজ প্যাটেল।
এমন একটা পারফরম্যান্সকে হেনরি নিজে অবশ্য ‘অদ্ভুতুড়ে’ বলছেন। টেস্ট ক্রিকেটে স্মরণীয় ফেরার ব্যাপারটি তো আছেই। এমন একটা পারফরম্যান্স তিনি করেছেন হ্যাডলির সামনেই—এর চেয়ে স্বপ্নময় আর কী হতে পারে। হ্যাগলি ওভালে আজ উপস্থিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার, ‘এসব পরিসংখ্যান শোনার পর আপনার মনে হবে, নিজেকে একটু চিমটি দিয়ে দেখি। দারুণ একটা রেকর্ডে স্যার রিচার্ড হ্যাডলির পাশে বসা স্বপ্নের মতোই এক ব্যাপার। এটি সত্যিই একটা সুরিয়েল মুহূর্ত।’
তিনি নিজের পারফরম্যান্সের রহস্যটাও জানিয়েছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা এখানে কাজে এসেছে। আমি জানতাম এই উইকেটে বোলিংয়ে লেংথটা কেমন হবে, সেটিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে।’
তবে সতীর্থদের সাহায্যও এখানে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন হেনরি, ‘আমরা সবাই মিলেই ভালো বোলিং করেছি। সবাই মিলে, দুই প্রান্ত থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে রেখেছিলাম। তাদের ব্যাটসম্যানদের অন্য কিছু ভাবারই সুযোগ দিইনি। এ ব্যাপারটিই মূল ছিল এমন পারফরম্যান্সের পেছনে।’
২০১৫ সালে অভিষেক, কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে হেনরি খেললেন মাত্র ১৫তম টেস্ট। দলে আসা-যাওয়াটা তাঁর অভ্যাসই হয়ে গেছে। কিন্তু এমন অনিয়মিত হলে নিজের প্রেরণাটা ধরে রাখা কিছুটা কষ্টই বইকি। তবে হেনরি মনে করেন তাঁর প্রেরণার কোনো অভাব নেই। কোনো না কোনোভাবে প্রেরণা খুঁজে নেন, ‘ব্যাপারটা কঠিন মাঝেমধ্যে। কিন্তু বাইরের বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগ না দিয়ে খেলায় মনোযোগী থাকি আমি। যে জিনিসটা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটি নিয়ে ভেবে কী লাভ! বরং যেটি আপনি করতে পারবেন, সেটি করাই ভালো। এটিই আমাকে প্রেরণা জোগায়। আমি কেবল আমার খেলাটারই উন্নতি করার চেষ্টা করি।’