৫৪ ঘণ্টা যাত্রা শেষে ১৪ দিনের বিশ্রাম

বেশ লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে নিউজিল্যান্ড পৌঁছেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ছবি: টুইটার

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ক্রিকেটে আশার আলো জাগিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মার্চের পর সব ধরনের আন্তর্জাতিক ও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেমে গিয়েছিল। উইন্ডিজ দলের ইংল্যান্ড সফর দিয়ে আবার ক্রিকেট ফিরেছে। এরপর পাকিস্তান আর অস্ট্রেলিয়াও ঘুরে এসেছে ইংল্যান্ড। এবার আরেকটি প্রথমের সঙ্গে জড়াল উইন্ডিজের নাম। করোনার সময়টায় প্রথম কোনো ক্রিকেট দল হিসেবে দুটি সফর করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত ৩০ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছে ক্যারিবিয়ানরা।

নিউজিল্যান্ডে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেড় মাস লম্বা এ সফর অবশ্য মাঠে গড়াবে ২৭ নভেম্বর। তার আগে অনুশীলন ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন পর্ব পার করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য যেভাবে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছে ক্যারিবীয়রা, তাতে এ সময়টা দরকার ছিল তাঁদের। ৫৪ ঘণ্টা দীর্ঘ এক যাত্রা শেষে ক্রাইস্টচার্চে গিয়েছে উইন্ডিজ দলের প্রথম অংশ। আইপিএলে ব্যস্ত থাকা ক্রিকেটাররা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দায়িত্ব শেষ করে তবেই উড়াল দেবেন নিউজিল্যান্ডের দিকে।

আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন ক্রিকেটাররা প্রথমে হাজির হয়েছিলেন বার্বাডোজে। সেখান থেকে প্রথমে তাঁরা যাত্রাবিরতি করেছেন লন্ডনে। ইংল্যান্ড থেকে আইপিএলের স্বাদ নিয়েছেন দুবাইয়ে এসে। দুবাই থেকে আবার উড়াল দিয়েছেন অকল্যান্ডের পথে। নিউজিল্যান্ডে এসেও থামতে পারেননি। নতুন ফ্লাইটে ক্রাইস্টচার্চে এসেছেন। স্বাভাবিক সময়েই এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে ৩৯ ঘণ্টা সময় লাগে। আর এখন করোনার সময়ের সব নিয়ম মেনে চলার কারণে এই পুরো যাত্রার পেছনে ৫৪ ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে।

ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছেই একবার করোনা পরীক্ষা দিতে হয়েছে সফরের সবাইকে। দলের সবাইকে স্বস্তি দিয়ে কোনো পজিটিভ ফল আসেনি সে পরীক্ষায়। এরপরই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব শুরু হয়েছে ক্রাইস্টচার্চের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত নিউজিল্যান্ড হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে। কোয়ারেন্টিন পর্বটা বেশ কয়েক ভাগে করে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সফরের সঙ্গে এই সফরের একটা পার্থক্য থাকছে। করোনা-পরবর্তী সব ক্রিকেট প্রতিযোগিতাই জৈব সুরক্ষাবলয়ে আয়োজন করা হয়েছে। ক্রিকেটার ও দলসংলগ্ন সবাইকে জৈব নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে করোনা সংক্রমণ কম হওয়াতে কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ হলে স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন সফরকারীরা।

জৈব সুরক্ষাবলয়ে বা কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়ও চুপচাপ বসে থাকবেন না ক্রিকেটাররা। কোয়ারেন্টিন পর্বকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

প্রথম ভাগ: ০-৩ দিন
কোনো বলয় থাকবে না। সব খেলোয়াড়, কর্মকর্তাকে নিজ নিজ রুমে থাকতে হবে। কেউ কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।

দ্বিতীয় ভাগ: ৪-৭ দিন
সুরক্ষাবলয়ের মাধ্যমে রুম থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাবেন। এক সুরক্ষাবলয়ে সর্বোচ্চ ১৫ জন থাকবেন। একটি বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা একসঙ্গে জিম, অনুশীলন ও ঘুরতে পারবেন। তিনটি আলাদা বলয় কার্যকর থাকবে এ সময়।

তৃতীয় ভাগ: ৮-১৪ দিন
বলয়ের মধ্যে থেকে বের হওয়ার সুযোগ চালু থাকবে। এ পর্যায়ে এক সুরক্ষাবলয়ে সর্বোচ্চ ২০ জন থাকতে পারবেন। একই বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা একসঙ্গে জিম, অনুশীলন ও ঘুরতে পারবেন। দুটি আলাদা বলয় কার্যকর থাকবে এ সময়।

বছরের শুরুতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা পেসার জেডেন সিলস আছেন নিউজিল্যান্ড সফরের উইন্ডিজ দলে।
ছবি: টুইটার

২০১৭/১৮ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ সফরে কোনো জয় পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সব কটিতেই হেরেছিল। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুটি ম্যাচে হেরেছিল তারা, অন্য ম্যাচটিতে কোনো ফল হয়নি। এবার ভাগ্য বদলানোর আশা করছে উইন্ডিজ। যদিও করোনার কারণে বেশ কিছু বাধা পার হয়ে খেলতে গেছে ক্যারিবিয়ানরা। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ নিশ্চিত করেছেন, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা ৫০ ভাগ বেতন পাবেন এ সফরে। গত জুলাই থেকে বেতন কম পাচ্ছেন সবাই। ম্যাচ ফি অবশ্য পুরোটাই মিলবে দলে থাকা খেলোয়াড়দের।