ডারবানে শেষ বিকেলে উইকেট ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। অন্তত প্রথম চার দিনে আলোকস্বল্পতার বাধা পেরিয়ে যতক্ষণ খেলা হয়েছে, তাতে এই চিত্রই দেখা গেছে। সেই তুলনায় প্রথম দুই সেশনে ব্যাটিং করা তুলনামূলক সহজ বলেই মনে হয়েছে। আজ বাংলাদেশ যখন মনের গহিনে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নেমেছিল, তখন প্রথম দুই সেশনকে কাজে লাগানোই ছিল মূল চিন্তা।
তা উবে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। কেশব মহারাজের বাঁহাতি স্পিনে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। পঞ্চম দিনের খেলার এক ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ৫৩ রানে।
৩ উইকেটে ১১ রান নিয়ে দিন শুরু করে দিনের প্রথম ৫ ওভারেই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। ৩৩ রানে পড়েছে সপ্তম উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনিম্ন (৪৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা, ২০১৮) স্কোরে অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তখন চোখ রাঙাতে শুরু করেছে বাংলাদেশকে। তা অবশ্য হয়নি শেষ পর্যন্ত।
নাজমুল ও তাসকিন মিলে সেই স্কোরটা পেরিয়ে গেছেন, তবে খুব বেশি দূর নয়। বাংলাদেশকে ৫০ রানে রেখে আউট হয়ে গেছেন টপ অর্ডারে একটু প্রতিরোধ গড়া নাজমুল। আর ১ রান যোগ হতেই ফিরেছেন খালেদও। ৫১ রানে পড়েছে ৯ উইকেট। তাসকিনের বিদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ অলআউট ৫৩ রানে। যে টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ, সেটিই কিনা পরিণত হলো ২২০ রানের বিশাল এক পরাজয়ের গল্পে!
চতুর্থ দিন শেষবেলায় ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও বাংলাদেশ যে একটু হলেও জয়ের স্বপ্ন দেখছিল, তাতে বড় ভরসার নাম ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দলের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যানকে দিয়েই শুরু হয়েছে উইকেট পতনের মিছিল। মহারাজের প্রথম বলেই স্ট্রাইক বদলেছেন নাজমুল। পরের তিন বল সামলে মুশফিক ফিরেছেন পঞ্চম বলে। আগের বল বাঁক খেয়েছে, এই বলটি ঢুকেছে। মুশফিকের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল লেগেছে প্যাডে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি শূন্য রানে থাকা মুশফিক।
পঞ্চম বলে উইকেট পড়ার হ্যাটট্রিকের শুরুও এর মাধ্যমেই। মহারাজের পরের ওভারের পঞ্চম বলে ফিরলেন লিটন (২)। এতে অবশ্য মহারাজের কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং লিটনের বাজে শট মিড অনে হারমারের হাতে ধরা পড়েছে।
সে তুলনায় ইয়াসিরকে আউট করা বলটি ছিল একজন বাঁহাতি স্পিনারের স্বপ্নের এক ডেলিভারি। মিডল স্টাম্পে পড়া বল ব্যাটসম্যানকে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে বাধ্য করেছে। মহারাজের বল বাঁক নিয়ে ব্যাটের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে, ভেঙে দিয়েছে ইয়াসিরের (৫) অফ স্টাম্প। সেটি ছিল মহারাজের দিনের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বল!
পরের ওভারে সাইমন হারমারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে পালটা আক্রমণের হুমকি দিলেন নাজমুল। কিন্তু প্রান্ত বদল করতেই সর্বনাশ। ওভারের শেষ বলে স্লিপে কিগান পিটারসেনের হাতে ধরা পড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ (০)।
এরপর নাজমুলও ফিরে যাওয়ার পর শেষটা দেখাই যাচ্ছিল। তা আসতে বেশি সময়ও লাগেনি।