ওয়াশিংটন সুন্দরের জন্য যে কারোরই খারাপ লাগার কথা। কী ভীষণ চাপের মুখে কী দারুণ একটা ইনিংস খেললেন! দলকে দারুণ একটা অবস্থানে পৌঁছেও দিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত তৃপ্তিটা আর পাওয়া হলো না তাঁর। সুন্দর সমাপ্তি দেখল না তাঁর ইনিংস।
৪ রানের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেলেন না সুন্দর। তিনি আউট হননি, ৯৬ রানেই অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু অন্য পাশে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের তৃতীয় দিনে আজ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রানে অলআউট হয়েছে ভারত। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে বিরাট কোহলির দল এগিয়ে আছে ১৬০ রানে!
অথচ ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার ৫ বল আগেও সুন্দরের সেঞ্চুরি নিয়ে কাব্যগাথা লেখার প্রস্তুতি চলছিল! তখনো ভারতের ৩ উইকেট বাকি। সপ্তম উইকেটে ঋষভ পন্তের সঙ্গে সেঞ্চুরি পেরোনো জুটি গড়া সুন্দর অষ্টম উইকেটে অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে জুটিতেও ১০০-র বেশি রান এনে দিয়ে তখন ভারতকে আরও বড় লিডের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। আর নিজে দেখছিলেন সেঞ্চুরির স্বপ্ন।
কিন্তু এক রানআউটেই হলো পতনের শুরু। ১১৪তম ওভারের শেষ বলে অক্ষর প্যাটেল রানআউট হয়ে গেলেন, পরের ওভারে চার বলের মধ্যে ভারতের শেষ দুই ব্যাটসম্যান ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ সিরাজকে ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকস। সুন্দর তখন অন্য প্রান্তে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছেন। যেন নিজেই হিসাব মেলাতে পারছিলেন না, কী থেকে কী হয়ে গেল!
নিজে ৯০-এর বেশি রান করে অপরাজিত থাকলেও আর কোনো ব্যাটসম্যান না থাকায় সেঞ্চুরিটা পাওয়া হয়নি—সুন্দরকে নিয়ে এ পর্যন্ত ভারতের টেস্ট ইতিহাসে চার ব্যাটসম্যানের এই অভিজ্ঞতা হলো। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের ৯৭ রানে অপরাজিত থাকার মধ্য দিয়ে ‘দুর্ভাগা’দের এই তালিকা শুরু।
দশ বছর পর কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে সে তালিকায় ঢুকেছেন দিলীপ ভেংসরকার, অপরাজিত ছিলেন ৯৮ রানে। আর সুন্দরের আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। সেবার কলকাতায় অশ্বিন অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে।
৭ উইকেটে ২৯৪ রানে কাল দ্বিতীয় দিন শেষ করা ভারতের হয়ে কাল সবটুকু আলোচনায় ছিলেন পন্ত। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে, পন্তের সব শিরোনাম দখল করারই কথা। কিন্তু পন্তকে সরিয়ে যখন আজকের দিনের হিসাব কষছিল ভারত, সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কাল ৬০ রান নিয়ে দিন শেষ করা সুন্দর। মাত্র চার টেস্টের ক্যারিয়ারেই যে ভারতের লোয়ার ব্যাটিং অর্ডারে কোহলি-রোহিতের মতো ভরসা হয়ে উঠেছেন ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার!
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্রিসবেনে সিরিজের শেষ টেস্টে অভিষেক তাঁর, সেই টেস্টেই প্রথম ইনিংসে ৬২ রানের দারুণ ইনিংসে ভারতকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলায় বড় ভূমিকা ছিল সুন্দরের। শার্দুল ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর জুটি শেষ পর্যন্ত সেই টেস্টে ভারতের জয়ের ভিতই গড়ে দিয়েছে। চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ইনিংসেও সুন্দরের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৮৫ রানের সুন্দর ইনিংস। আহমেদাবাদে এই টেস্টেও সাবলীল সুন্দরের ব্যাট।
আগের দিন ষষ্ঠ উইকেটে পন্তের সঙ্গে গড়েছিলেন ১১৩ রানের জুটি, সপ্তম উইকেটে অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে জুটিটাকে আজ সুন্দর নিয়ে গেলেন ১০৬ রান পর্যন্ত। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বার কোনো ইনিংসে সপ্তম ও অষ্টম উইকেট জুটিতে শতরান হলো! তৃতীয় কীর্তিটি গড়ার পথে অবশ্য আজ অক্ষরেরও ছিল দারুণ অবদান। ১১ রানে কাল দিন শেষ করা অক্ষর আজ আউট হওয়ার সময় তাঁর রান—৯৭ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩।
ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটি পাওয়ার আক্ষেপে পুড়েছেন অক্ষরও। স্ট্রাইকে থাকা সুন্দরের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে হয়ে গেলেন রানআউট। রুটের লো ফুলটস বলটা মিড অনে ঠেলেছিলেন সুন্দর, প্যাটেলই রান নিতে চাইছিলেন। তাঁকে ফেরত পাঠান সুন্দর। কিন্তু প্যাটেল নন-স্ট্রাইক প্রান্তে ফেরত যাওয়ার আগেই উইকেট ভেঙে গেছে।
সুন্দর যদি তখন জানতেন এই রানআউটই তাঁর জন্যও কাল হবে! কাল পন্ত যেখানে সেঞ্চুরিটা করেছেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে, সুন্দরের ব্যাটে ছিল টেস্টের মেজাজ। ১৭৪ বলে ১০ চারের পাশাপাশি ১ ছক্কা। সেঞ্চুরিটা পেয়ে গেলে সেটি আধুনিক টেস্টসুলভ ব্যাটিংয়ের দারুণ বিজ্ঞাপনই হতো। কিন্তু তা আর হলো কোথায়! প্যাটেল আউট হওয়ার সময় রানটা না নেওয়ায় পরের ওভারে সুন্দর ছিলেন নন-স্ট্রাইকে। প্রথম বলে দেখলেন স্টোকসের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন ইশান্ত। তিন বল পর বোল্ড সিরাজ। মাঝে একটা বার ক্রিজ বদলানোর সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ বেশ পোড়াবে সুন্দরকে।
মধ্যাহ্নবিরতির আগে ভারতকে হঠাৎ অলআউট করার পর মিনিট দশেকই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে ইংল্যান্ড। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ ওভারে বিনা উইকেটে ৬ রান ইংলিশদের। জ্যাক ক্রলি অপরাজিত ৫ রানে, ডম সিবলি ১ রানে।