১৩৪ রানে গুটিয়ে গিয়েও জিতল আফগানিস্তান

কাল দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে আফগানিস্তানছবি: আইসিসি

এক দল গুটিয়ে গেছে ১৩৪ রানে। তাড়া করতে নেমে আরেক দল ৪৩ রানেই হারিয়ে ফেলেছিল ৭ উইকেট। সে দলেরই আবার ২৫ বলে দরকার ছিল মাত্র ৫ রান। কঠিন সমীকরণকে সহজ বানিয়েও কাজটা উদ্ধার করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

গতকাল অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। গত মাসেই এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা শ্রীলঙ্কার বোলিং তোপে ১৩৪ রানে গুটিয়ে গিয়েও হাল ছাড়েনি আফগানিস্তান। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারা দলটিই কাল শ্রীলঙ্কাকে ৪ রানে হারিয়ে উঠে গেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রুপে শীর্ষে থাকা লঙ্কানদের এখন লক্ষ্য সেমিতে উঠতে না পারাদের মধ্যে সেরা হওয়া।

রনপাল কাল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন
ছবি: আইসিসি

কাল অ্যান্টিগায় আফগানিস্তানের লড়াইটা আসলে হয়েছে বিনুজা রনপাল ও দুনিথ ভেল্লালাগের সঙ্গে। পেসার রনপালের তোপে ২৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। হাল ধরেন তিনে নামা আল্লাহ নুর ও আবদুল হাদি। দুজনই টিকে থাকার দিকে মন দিয়েছিলেন। রান তোলাটা ছিল দ্বিতীয় লক্ষ্য।

দুজনকেই ফিরিয়েছেন ভেল্লালাগে। ৭৩ রানে ফিরেছেন নুর। ৫৮ বলে ২৫ রান করা নুর একটি চার মেরেছিলেন ইনিংসে। ৮৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর আবার ধসের আশঙ্কা ছিল আফগান ব্যাটিংয়ে। কিন্তু হাদিকে একপাশে নিয়ে প্রতি–আক্রমণে যান নুর আহমেদ। মাত্র ১৭ বছরের মধ্যে বিগব্যাশ খেলে ফেলা এই বাঁহাতি লেগ স্পিনার ৪ ছক্কায় ৩৩ বলে ৩০ রান এনে দিয়ে আউট হন রনপালের বলে। ততক্ষণে আফগানিস্তানের রান ১৩২।

নুর আহমেদের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পায় আফগানিস্তান
ছবি: আইসিসি

দলকে ১৩২ রানে রেখেই ফেরেন হাদি। তাঁর ৩৭ রান এসেছে ৯৭ বলে। বাকি ২ উইকেটে ২ রান তুলেছে আফগানিস্তান। ৯.১ ওভার বল করে মাত্র ১০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন রনপাল। ওদিকে ৩৬ রানে ৩ উইকেট বাঁহাতি স্পিনার ভেল্লালাগে।
এমন বোলিংয়ের পর কাল ব্যাটিং করতে হবে, এমনটা নির্ঘাত ভাবেননি এই দুজন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আর আত্মহত্যা মিলিয়ে ঠিকই নামতে হয়েছে তাঁদের।

আফগানিস্তানের দলটির ব্যাটিংয়ের অবস্থা ভালো নয়। এশিয়া কাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫২ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাত্র ১৯৪ রান তুলেছিল। কিন্তু দলটির বোলিং লাইনআপ সমৃদ্ধ। আগেই বলা হয়েছে, এই দলে বিগব্যাশে খেলে আসা বোলারও আছেন! এশিয়া কাপে ৫৩ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানের ৬ উইকেট হারানো এরই ইঙ্গিত দিয়েছিল।

৩১ রানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার পর আফগানিস্তানের উল্লাস
ছবি: আইসিসি

কালও আফগান বোলাররা প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছিল। চার–চারটি রানআউট হয়ে লঙ্কানরাও প্রতিপক্ষের কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন। ৪ ওভার পেরোতে না পেরোতেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। রান তোলার গতি ছিল অনেক ধীর। ১১তম ওভারে প্রথম রানআউটের দেখা মিলল। ১৭ ও ১৮ ওভার পরের দুটি। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৩! সর্বোচ্চ ১৬ রান চামিন্দু বিক্রমাসিংহের।

বাঁহাতি স্পিনার ভেল্লালাগে ও লেগ স্পিনার রবিন ডি সিলভা প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেন। দুজনে মিলে ২৩.৪ ওভার কাটিয়ে দিলেন উইকেটে। অষ্টম উইকেট জুটিতে এল ৬৯ রান। আফগান বোলাররা উদার হস্তে অতিরিক্ত রান বিলানোও এতে ভূমিকা রেখেছে। ইনিংসে ৩২টি ওয়াইড দিয়েছেন আফগান বোলাররা।

মাত্র ৪৩ রানে প্রতিপক্ষে ৭ উইকেট ফেলে দিয়েছিল আফগানিস্তান
ছবি: আইসিসি

শ্রীলঙ্কার জয় যখন নাগালে, তখনই সর্বনাশ হলো। ৬১ বলে ৩৪ রান তোলা ভেল্লালাগে ফিরলেন প্রথমে। ৪ রান পরই আউট ডি সিলভা। ৮৪ বলে ২১ রানের লড়াই থেমেছে ইজহারুল হক নাভিদের বলে।

১১৬ রানে নবম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু রনপাল আশা ছাড়েননি। নতুন বলের বোলিং–সঙ্গী ত্রিবীন ম্যাথুকে নিয়ে একটু একটু করে রান তুলে নিচ্ছিলেন। ৪ ওভারে ১৪ রান তুলে ফেলেছিলেন দুজন।

৪৬ ওভারের শেষ বলে হয় সর্বনাশ। ওভারের শেষ বলে স্ট্রাইকে ছিলেন রনপাল। পরের ওভারে যেন রনপালই স্ট্রাইকে থাকেন সে চেষ্টাায় বেড়িয়ে প্রায় অন্য প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন ম্যাথু। কিন্তু ঝুঁকি নিতে রাজি না হয়ে তাঁকে ফিরিয়ে দেন রনপাল। কিন্তু বোলিং প্রান্তে আর ফিরতে পারেননি ম্যাথু (৪)। ১১ রানে অপরাজিত রনপালের অবিশ্বাস্য এক দিন শেষ হয় হতাশায়। আফগানিস্তানের শুধু বিলাল সামি পেয়েছেন একাধিক উইকেট। দল হিসেবে খেলেই রনপাল-ভেল্লালাগেদের হারিয়েছে আফগানিস্তান।