১৩ বলের ঝড়ে অস্ট্রেলিয়াকে স্তব্ধ করে দিলেন শানাকা
ম্যাচটা শেষ বলেই মনে হচ্ছিল। ৩ ওভারে ৫৯ রান দরকার শ্রীলঙ্কার। বোলিংয়ে জশ হ্যাজলউড, যাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, টেস্ট খেলতে নেমেছেন। প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। কিন্তু লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা একটু নড়েচড়ে বসলেন। প্রথম বলে এক রান নিলেন চামিকা করুনারত্নে। আগের ১২ বলে ৬ রান নেওয়া শানাকা পরের দুই বলে মারলেন দুই ছক্কা। পরের দুই বলে দুই চার। ১৮তম ওভারে ২২ রান এল। ম্যাচটা জমে গেল।
পরের দুই ওভারে যা হলো, তা ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়ার মতো। ইনিংসের শেষ ১৭ বলে ৫৯ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা। সিরিজ অবশ্য ২-১ ব্যবধানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়াই।
হ্যাজলউডের ওভাবে অপ্রত্যাশিত মার খাওয়ার পর ১৯তম ওভারে বল পেলেন ঝাই রিচার্ডসন। প্রথম বলেই শানাকার ছক্কা। তৃতীয় বলে চার করুনারত্নের, পঞ্চম বলে চার আবার শানাকার। ১৯তম ওভার থেকে এল আরও ১৮ রান। শেষ ওভারে স্বাগতিকদের দরকার ছিল ১৯ রান। বল হাতে পেলেন কেইন রিচার্ডসন। আগের দুই ওভারে ২৬ রান দেওয়া পেসার প্রথম বলেই ওয়াইড দিয়ে বসলেন। পরের বলেই আবার ওয়াইড। কিন্তু প্রথম বৈধ বলে এল মাত্র এক রান। পরের বলে আবার সিঙ্গেল।
তৃতীয় বলে চার শানাকার। চতুর্থ বলেও লং অফ দিয়ে আবার চার। শেষ দুই বলে ৭ রান দরকার শ্রীলঙ্কার। পরের বলেই ছক্কা মেরে পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন শানাকা। প্রথম ১২ বলে ৬ রান করা শানাকা পরের ১৩ বলে নিয়েছেন ৪৮ রান! শেষ বলে স্বাগতিকদের দরকার মাত্র ১ রান।
শানাকাকে কষ্ট করে ব্যাট চালাতে হয়নি। রিচার্ডসন ওয়াইড দিয়ে বসলেন। ম্যাথু ওয়েড থ্রো করায় শানাকারা অভ্যাসবশত দৌড়ও দিয়েছিলেন, কিন্তু ম্যাচ যে এর আগেই শেষ!
এর আগে ম্যাচটা মিডল অর্ডারের কারণে হেরে যাওয়ার দশা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই দানুশকা গুনাতিলকা আউট হয়েছিলেন। কিন্তু পাথুম নিশঙ্কা, চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপক্ষেরা রানরেট নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রেখেছিলেন। ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা।
এরপর হঠাৎ ঝড়, ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল শ্রীলঙ্কা। দলকে ১০৮ রানে রেখে ফিরে গেলেন হাসারাঙ্গাও। তখনো ৬৯ রান দরকার শ্রীলঙ্কার। পরের ৮ বল থেকে ১০ রান এলেও ম্যাচের মীমাংসা হয়ে গেছে বলেই মনে হয়েছিল।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া আক্ষেপে পুড়েছে সুযোগ পেয়েও বড় স্কোর না করার। দুই ওপেনার ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু মহীশ তিকশানার স্পিন দুজনকেই থামিয়ে দিয়েছে। তবু ১৩তম ওভারেই ১০০ পেরিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এক প্রান্তে মার্কাস স্টয়নিস (২৩ বলে ৩৮) বেশ দ্রুত রান তুলছিলেন। কিন্তু স্টিভ স্মিথের ব্যাট চলছিল না।
ইনিংস ধরে রাখার দায়িত্ব আর নয়, এখন থেকে চাইলেই শুরু থেকেই রণমূর্তিতে আবির্ভূত হতে পারবেন স্টিভ স্মিথ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে এমনটাই জানা গিয়েছিল। এমন অবাধ স্বাধীনতা পেয়েও স্মিথ প্রথম ২৪ বলে করেছেন মাত্র ২৭ রান। একটি করে চার ও ছক্কার পরও।
২০তম ওভারের চতুর্থ বলে নিজের দ্বিতীয় চার মারলেন স্মিথ। পরের বলটা থার্ডম্যান দিয়ে ছক্কা মারলেন। ইনিংসের শেষ বলটায় অবশ্য স্লোয়ারে ধোঁকা খেলেন। তাতে ২৭ বলে ৩৭ রানে থামতে হলো স্মিথকে। স্ট্রাইকরেট তবু ঠিক টি-টোয়েন্টিতে অবাধ স্বাধীনতা পাওয়া কোনো ব্যাটসম্যানের মতো হলো না।
তখন মনে হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার জেতার মতো স্কোর হয়ে গেছে। প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা মাত্র ১২৪ ও ১২৮ রান করতে পেরেছিল। তাই এ স্কোরকেই নিরাপদ ভাবতে পারত অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ২৫ বলে ৫৪ রানের এক পাগলাটে ইনিংসে পুরো গল্পটাই বদলে দিলেন শানাকা।