১২ বছরে ৯৩ টেস্ট খেলার পর ঘরের মাঠে
১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, ৯৩ টেস্ট, প্রায় ৭ হাজার রান এবং ১৯টি শতকের পর আজহার আলী ঘরে ফিরলেন।
আজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। এর আগে আরও ৯৩টি টেস্টে খেলতে নেমেছেন আজহার, কিন্তু গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আজ সকালে যখন সাদা পোশাক পরে নামলেন, সে অনুভূতি কখনো পাওয়া হয়নি। নিজের ঘরের মাঠে যে এই প্রথম খেলা হলো তাঁর। ২০১৯ সালে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার পর থেকেই করাচি আর রাওয়ালপিন্ডি পাচ্ছিল টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ। এবারই প্রথম পাকিস্তান ক্রিকেটের কেন্দ্র লাহোরে ফিরল টেস্ট।
৩৮-এ পা রাখা আজহার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘খুবই আবেগময় এক অনুভূতি। যখন ছোট ছিলাম, গাদ্দাফি স্টেডিয়াম এত বিখ্যাত একটা ভেন্যু ছিল! আমরা যখনই এর পাশ দিয়ে যেতাম, ভাবতাম এই মাঠে আমাকে খেলতেই হবে।’
সে ইচ্ছা পূরণ হচ্ছিলই না তাঁর। পেশাদার ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০০১ সালে। কিন্তু পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেতে পেতে ২০১০ চলে এসেছে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জের অভিষেকেই টের পেয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ‘হোম’ ম্যাচে অভিষেক। সে ম্যাচটা তাঁকে খেলতে হয়েছে লর্ডসে!
পাকিস্তানে ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দেখা মেলেনি। একসময় আজহার হালই ছেড়ে দিয়েছেন। ভেবেছিলেন গাদ্দাফি স্টেডিয়াম দূরে থাক, পাকিস্তানেই আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে না, ‘আমি এখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু আমার টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই আমাদের সব খেলা পাকিস্তানের বাইরে হয়েছে। একসময় তো মনে হচ্ছিল আর কখনো পাকিস্তানে টেস্ট খেলতে পারব না। কিন্তু অবশেষে, আমাদের একটা সুযোগ এসেছে। পাকিস্তানে খেলার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার পর লাহোরে খেলার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
দলের সবার জন্যই এটা লাহোরে প্রথম খেলার স্বাদ। কিন্তু আজহার সবার চেয়ে একটু বেশিই আনন্দিত এ উপলক্ষে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন। শেষ বেলায় এসে ঘরের দর্শকের সামনে খেলার, তাঁদের ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ স্বাদ যে খুব বেশি পাওয়া হয়নি। সমর্থকদের ভালোবাসা কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ২০১৬ সালে প্রথমবার ভালোভাবে টের পেয়েছিলেন আজহার।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন আজহার। দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম শতক, দ্বিশতক ও ত্রিশতক তাঁর। দুবাইয়ে অপরাজিত ৩০২ রানের সে ইনিংসটির স্মৃতি এখনো মনে আছে তাঁর, ‘আমার ত্রিশতক যখন করলাম, আমার জন্য অনেক বড় ঘটনা ছিল। এমন মুহূর্তে আপনি ব্যাট ঘুরিয়ে মাঠের দর্শকের করতালি উপভোগ করেন, তাঁদের অভিবাদন জানান, ধন্যবাদ দেন। আমি যখন তা করতে শুরু করলাম, একটা স্ট্যান্ডের দিকে ব্যাট ঘুরিয়ে দেখলাম ১০০ জনের মতো মানুষ আছে। এরপর ঘুরে অন্য স্ট্যান্ডে তাকিয়ে দেখি, সেখানে কেউ নেই!’
ব্যাপারটা কত অস্বাভাবিক, সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বর্তমান সিরিজেই আবার টের পেয়েছেন আজহার, ‘পিন্ডি ও করাচিতে আমরা যখন শতক পেয়েছি, এটা একদম আলাদা এক অনুভূতি। যে স্বীকৃতি, সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি, অন্য রকম। কত দিন এমন কিছু পাই না আমরা। তরুণ যারা দলে এসেছে বা আসছে, তাদের জন্য এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা।’
সিরিজের শুরুটা ভালোই করেছেন আজহার। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৮৫ রানের এক ইনিংস খেলেছেন। সে ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন। করাচিতে অত ভালো করেননি। দুই ইনিংসে মাত্র ২০ রান করেছেন।
কিন্তু লাহোরে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তাঁকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ‘আমার জন্য খুবই খুশির উপলক্ষ। এত লম্বা এক ক্যারিয়ার শেষে, আমি ঘরের মাঠে টেস্ট খেলতে যাচ্ছি। আমার পরিবার, বন্ধু সবাই মাঠে থাকবে। আমার জন্য খুব আবেগী এক মুহূর্ত। এটা একদম ভিন্ন এক অনুভূতি। আমাদের ধারণা ছিল, আমাদের কীসের অভাব, কিন্তু আবার পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে পারার পরই আমরা বুঝতে পেরেছি, কোন ব্যাপারগুলোর স্বাদ হাতছাড়া করেছি আমরা। আমাদের অর্জন, পারফরম্যান্স আগে কখনো এতটা আলোচিত হয়নি, আমরাও এত উপভোগ করিনি।’