হ্যাটট্রিক করে বিশ্ব রেকর্ড অচেনা আলিসের!
>বিপিএলে আজ দিনের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ২ রানে হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস
ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস!
ক্রিকেটে প্রচলিত এই কথাকে ভুল প্রমাণ করলেন আলিস আল ইসলাম। ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে আজ তাঁর অভিষেক ঘটেছে বিপিএলে। অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ মিঠুনের দুটি ক্যাচ ছেড়ে নিজের অভিষেক পণ্ডই করতে বসেছিলেন এই স্পিনার। মিঠুন পরে ৩৫ বলে খেলেছেন ৪৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। কিন্তু নাটকের তখনো অনেক বাকি। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এলেন আলিস। হাতে ৬ উইকেট রেখে রংপুর তখন ১৮ বলে মাত্র ২৬ রানের দূরত্বে। আলিস ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু। ওভারটির শেষ তিন বলে ফিরিয়েছেন মিঠুন, মাশরাফি ও ফরহাদ রেজাকে। হ্যাটট্রিক! টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে এর আগে কেউ কখনো হ্যাটট্রিক করেননি। অভিষেকেই এমন তুলকালাম কাণ্ড ঘটালেন অচেনা আলিস ইসলাম!
আলিসের হ্যাটট্রিকে ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ঢাকা। পরের ওভারে সুনীল নারাইন এসে ফিরিয়েছেন সোহাগ গাজী ও বেন হাওয়েলকে। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৪ রান দরকার ছিল রংপুরের। টানা দুই বলে দুটি ৪ মেরে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন শফিউল। কিন্তু পরের তিন বল থেকে মাত্র ২ রান আসায় জয়ের জন্য শেষ বলে ৪ রান দরকার ছিল রংপুরের। কিন্তু শফিউল-নাজমুল মিলে নিতে পেরেছেন মাত্র ১টি রান। ঢাকার ৯ উইকেটে ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ পর্যন্ত রংপুরকে হারতে হলো ২ রানে।
এর আগে আন্দ্রে রাসেলের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর বোলিংয়ে ২৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল রংপুর। এতে অবশ্য দলটির কোনো সমস্যা হয়নি। রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুনের দুর্দান্ত এক জুটিতে চালকের আসনে চলে যায় দলটি। তৃতীয় উইকেটে মাত্র ১২ ওভারে ১২১ রানের জুটি গড়েছেন এ দুজন। ওই ইসলামই ঢাকাকে ম্যাচে ফেরালেন। ১৬তম ওভারে এই অফ স্পিনারের বলে বিভ্রান্ত হয়ে স্টাম্পড হন রুশো। ৪৪ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রানে থামেন রুশো। সেই যে পথ হারাল রংপুর, আর ফিরে আসতে পারেনি তারা। এরপরই আউট হয়েছেন রবি বোপারা। আর শেষ তিন ওভারে তো ঝড়ই বয়ে গেল দলটির ওপর দিয়ে।
ঢাকা ডায়নামাইটসের আগের দুই ম্যাচেই সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন হজরতউল্লাহ জাজাই। আফগান এই ওপেনারের মারকুটে ব্যাটিংয়ে দুটি ম্যাচেই ১৮০-র ওপরে রান তুলেছে ঢাকা। জাজাইকে আজ দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে রংপুর রাইডার্স স্বস্তি পেলেও সেটি ছিল ক্ষণিকের জন্য। আজ অবশ্য ইনিংসের শুরুতে কিছুটা চাপে পড়েছিল ঢাকা। চার ওভার শেষে দলটির স্কোর ৩ উইকেটে ৩৩। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ওভারের মধ্যেই ঢাকার টপ অর্ডারকে ফেরার পথ দেখিয়ে দেন মাশরাফি ও সোহাগ গাজী। তৃতীয় ওভারে সুনীল নারাইনকে রবি বোপারার তালুবন্দী করেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি। পরের ওভারে রনি তালুকদারকে গাজী ফেরালেও উইকেটটি আসলে বেনি হাওয়ালের। এই ইংলিশ অলরাউন্ডার মিড অফ অঞ্চলে উল্টো দিকে দৌড়ে কি দুর্দান্ত ক্যাচই না ধরলেন!
ঢাকাকে এভাবে চেপে ধরার পর বাঁধনটা আলগা হয়েছে পোলার্ডের তাণ্ডবে। সাকিব চারে নেমে এক প্রান্তে ব্যাটিং করেছেন নিজের মতো করে। বাজে বল পেলে সীমানাছাড়া করতে কুণ্ঠা করেননি ঢাকা অধিনায়ক। ভালো কিছু স্ট্রোকে আশা দেখানো মিজানুর রহমান মাত্র ১৫ রানে আউট হওয়ার পর পোলার্ডের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব। রংপুরের বোলাররা এরপর আর হালে পানি পায়নি।
নবম ওভারে পোলার্ডের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব। ঢাকার স্কোর তখন ৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৪। এখান থেকে দারুণ এক জুটিতে রংপুরের বোলারদের ভুগিয়েছেন দুজন। সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিলেন পোলার্ড। এই ক্যারিবিয়ান যখন উইকেটে আসেন সাকিবের স্কোর ১৮ বলে ১৬। এরপর ১৪তম ওভারে সাকিবের স্কোর যখন ৩১ বলে ২৬, পোলার্ড তখন ২১ বলে ৫০! এই পথে ৩ ছক্কা আর ৪ চারে শুধু বাউন্ডারি থেকেই নিয়েছেন ৩৪ রান।
বোঝাই যাচ্ছিল, বোলারদের জন্য সামনে আরও দুর্গতি অপেক্ষা করছে। পরের ওভারেই এক ছক্কা আর দুটি চার মেরে হিসেবটা বাস্তবায়নের পথেই ছিলেন পোলার্ড। কিন্তু ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারার ডেলিভারিটি পোলার্ড কীভাবে মেহেদী মারুফের হাতে তুলে দিলেন সেটি গবেষণার বিষয়। সম্ভবত টাইমিংয়ে গড়বড় হয়েছে। তার আগে সাকিবের সঙ্গে গড়েছেন ৪১ বলে ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। ২৬ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ রান করেছেন পোলার্ড। ১৩ বলে ২৩ রান করে রাসেল শেষ দিকে রান রেট ধরে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ রানগুলোই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।