দুর্নীতির দায়ে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হিথ স্ট্রিককে নিয়ে কয়েক দিন আগে একটা প্রতিবেদন ছাপিয়েছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো। কিন্তু প্রতিবেদনটিকে আইসিসির কাছে শাস্তি পাওয়া একজনের প্রতি সমবেদনামূলকই মনে হয়েছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের (জেডসি)। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে প্রতিবেদনের সমালোচনা তো করেছেই, স্ট্রিককেও ধুয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘তাঁর (স্ট্রিক) কোনো সমবেদনাই প্রাপ্য নয়। স্ট্রিকের কুকর্মের ব্যাখ্যা দিতে যাওয়া একজন ধর্ষকের পক্ষে বলার মতোই’—বিবৃতিতে লিখেছে জেডসি।
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নিয়মকানুন ভাঙায় গত বছরের এপ্রিলে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন স্ট্রিক। জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার আইসিসির কাছে ‘মিস্টার এক্স’ নামে পরিচিত একজন দুর্নীতিবাজকে সাহায্য করেছিলেন। খেলা ছাড়ার পর জিম্বাবুয়ে দলের প্রধান কোচ ও বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করা স্ট্রিক ওই দুর্নীতিবাজের কাছ থেকে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার পেয়েছিলেন, ২০১৭ সালে একটি আইফোনও পেয়েছিলেন। স্ট্রিক অবশ্য শাস্তি মেনে নিলেও ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এখন সেটি আবার আলোচনায় আসছে ১২ জানুয়ারি ক্রিকইনফোর সাময়িকী ‘দ্য ক্রিকেট মান্থলি’তে স্ট্রিককে নিয়ে প্রকাশিত ‘দ্য মেনি সাইলেন্স অব হিথ স্ট্রিক’ শিরোনামের প্রতিবেদনের কারণে। ক্রিকইনফোর জনপ্রিয় লেখকদের একজন ফিরদৌস মুন্দার লেখা সেই প্রতিবেদনে স্ট্রিকের কর্মকাণ্ডের কোনো সাফাই দেওয়া হয়নি। তবে স্ট্রিক ঠিক কী কারণে এমন দুর্নীতিসূচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেটির খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু জেডসি সেটির প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে লিখেছে, ‘ধর্ষণের মতো দুর্নীতিও কোনো দুর্ঘটনা নয়। ভুল করে হওয়া কোনো ব্যাপারও নয়। এটা ইচ্ছাকৃত কাজ, এটা আমাদের বুঝতে হবে। ঘৃণ্য এমন কাজে জড়িতদের হয়ে সাফাই গাওয়া আর সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্তদেরই উল্টো আক্রমণ করা বন্ধ করুন।’
ক্রিকেটে দুর্নীতির সঙ্গে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সাদৃশ্য কীভাবে খুঁজে পেল জেডসি, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাঠকদের ভুলপথে চালিত করা হয়েছে বলেও দাবি জেডসির, ‘এই প্রতিবেদনটা যে একজন দুর্নীতিবাজ মানুষের প্রতি প্রকাশনাটির অসন্দিগ্ধ পাঠকদের সহানুভূতি জাগানোর একটা কদর্য, ব্যর্থ প্রচেষ্টা, সেটা বুঝতে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না।’
প্রতিবেদনের অনেক তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জেডসি। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, জিম্বাবুয়ের কোচ থাকার সময়ে স্ট্রিক এক বছরেরও বেশি সময় বেতন নেননি স্ট্রিক। কিন্তু জেডসি বিবৃতিতে লিখেছে, প্রতিবেদনটি ‘তথ্যের বিকৃতিতে ভরা, পাশাপাশি সুবিধাজনক কিছু সত্যিকে বেছে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে স্ট্রিককে একটু দুর্নীতির চক্রের শিকার হিসেবে দেখানো যায়।’
‘দারুণ একজন দেশপ্রেমী, ত্রাতার মতো চরিত্র, যেন কোনো রবিন হুড, যিনি কিনা দরিদ্র জিম্বাবুয়ের জন্য একটি টি-টোয়েন্টি লিগ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জেনেশুনেই অবৈধ কাজে জড়িয়েছেন...লেখক আমাদের এমনটাই বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন!’—বিবৃতিতে লিখেছে জেডসি।
পাশাপাশি জেডসি দাবি করছে, দেশের ক্রিকেটের জন্য বোর্ড যেসব ভালো কাজ করে, সেগুলোকে ইচ্ছা করেই উপেক্ষা করে যাচ্ছে অনেক সংবাদমাধ্যম।