হিথ স্ট্রিকের অন্য রকম গর্ব
প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট—জিম্বাবুয়ের পেসার ব্রায়ান ভিটরির সঙ্গে এর বাইরেও একটা মিল আছে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের। ক্যারিয়ারের শুরুতে অমন চমক দেখানোর সময়ে দুজনের বোলিং কোচও যে এক! হিথ স্ট্রিক। ব্যাপারটা কাকতালীয়, তবে জিম্বাবুইয়ান কোচের কিছুটা গর্ব তো হতেই পারে।
পরশু ড্রেসিংরুমে হিথ স্ট্রিকও দুষ্টুমি করে বলছিলেন, ‘ওয়ানডের শুরুর দুই ম্যাচে যারা ৫ উইকেট করে পেয়েছে, তাদের কোচ কে খোঁজ নিয়ে দেখো।’ কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি, কোচ ইঙ্গিতটা করছিলেন নিজের দিকেই। ভিটরির শুরুর সময় ছিলেন জিম্বাবুয়ের বোলিং কোচ, আর এখন বাংলাদেশ দলের। ভিটরির মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের সাফল্যযাত্রার শুরুটাও হলো তাঁর হাত ধরেই।
তবে মুস্তাফিজকে খুব বেশি দিন ধরে দেখছেন না হিথ স্ট্রিক। প্রথম দেখেন গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ‘এ’ দলে সুযোগ পাওয়ার পর। ‘শুরুতেই ওকে আমার ভালো লেগেছিল। আমরা চেষ্টা করেছি তাকে প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখতে’—কাল দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে দাঁড়িয়ে স্ট্রিক শোনাচ্ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরই নতুন বিস্ময়কে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতার কথা।
মুস্তাফিজের জন্য এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা যেন ‘এলাম...দেখলাম...জয় করলাম’। অভিষেক সিরিজেই প্রতিপক্ষ ভারত, অথচ তিন ওয়ানডের প্রথম দুটিতেই মুস্তাফিজের উইকেট ১১টি। সিলেবাসের বাইরের এই বোলারের সামনে রীতিমতো অসহায় কোহলি-ধোনিরা। মুস্তাফিজের এমন চমক-জাগানিয়া শুরুতে আর সবার মতো খুশি স্ট্রিকও, ‘পর পর দুই ম্যাচে ও রকম বল করা এবং রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা বিশেষ কিছুই। কোচ হিসেবে আমরা খুশি হলেও অভিনন্দনটা ওই খেলোয়াড়েরই প্রাপ্য।’
প্রথম ওয়ানডেতেই মুস্তাফিজের একের পর এক কাটার বিভ্রান্ত করেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। স্ট্রিকের শঙ্কা ছিল, তার এই স্টক বল হয়তো ধরে ফেলবেন ধোনিরা। পরের ম্যাচে তাই ভিন্ন কিছু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুস্তাফিজকে। তবে সেটার আর তেমন দরকার হয়নি। পরশুও তার মায়াবী কাটারেই পরাস্ত একের পর এক ভারতীয় ব্যাটসম্যান। অস্ত্রটাকে আরও ধারালো করে তুলতে অনুশীলনের বিকল্প দেখছেন না স্ট্রিক, ‘এখানে কোনো জাদুমন্ত্র নেই। সর্বোচ্চ পর্যায়ে লম্বা সময় ধরে অনুশীলন করতে পারাটাই কেবল নিশ্চিত করতে হবে।’
কথাটা শুধু মুস্তাফিজের জন্যই বলেননি বোলিং কোচ। এটা সব বোলারেরই উন্নতির মন্ত্র। তাসকিন-রুবেল তো এখন সেটারই ফল পাচ্ছেন। প্রথম দুই ম্যাচে মুস্তাফিজের আলোয় আর সব ঢাকা পড়ে গেলেও গুরুর চোখ এড়ায়নি তাঁদের পারফরম্যান্স, ‘তাসকিন-রুবেলের মধ্যে অভিজ্ঞতার ছাপ ফুটে উঠছে। প্রথম দুই ম্যাচে তাদের বোলিং প্রাপ্য মনোযোগ পায়নি। গতকাল (পরশু) খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে রুবেলের উইকেটটা এসেছে। প্রথম ম্যাচে ধাওয়ান, কোহলির উইকেট নিয়েছে তাসকিন। এটা অনেক বড় ইতিবাচক দিক। পেসারদের টুপিখোলা অভিনন্দন জানাতেই হবে।’
ভারতের ব্যাটসম্যানদের প্রিয় ‘খাদ্য’ স্পিন। এবার তাই শুরু থেকেই পেস বোলিংকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা। ওয়ানডের বোলিং আক্রমণ থেকে স্পিনারদের ছেঁটে লম্বা করা হয়েছে পেসারদের তালিকা। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও হিথ স্ট্রিকের বিশ্বাস ছিল, রেসিপিটা সামান্য বদলে দিলে মিরপুরের উইকেট থেকে পেসারদের পক্ষেও সম্ভব হবে সাফল্য তুলে নেওয়া। বাকি ছিল শুধু পেসারদের কাজটা মাঠে করে দেখানো। মাশরাফি, রুবেল আর তাসকিনের সঙ্গে বাঁহাতি মুস্তাফিজের বোলিং বৈচিত্র্য যোগ হওয়াতেই বাজিমাত। স্ট্রিকের ভাষায়, ‘আমরা জানতাম মুস্তাফিজ, তাসকিন ও রুবেলের ভালো বোলিং করার সামর্থ্য আছে। আর মাশরাফি তো দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের হয়ে ভালো পারফর্ম করছে। সব মিলিয়ে আমাদের খুব ভালো একটা পেস বোলিং গ্রুপ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যেটা ভারত কল্পনাও করেনি। আমরা এখানকার কন্ডিশন চিনি। কাজেই নিজেদের বোলারদের কথা ভেবে উইকেট বানানো গেলে যে খেলা আমাদের হাতে চলে আসবে, সেটা জানাই ছিল।’
প্রথম দুই ওয়ানডের পর কাল সিরিজের শেষ ম্যাচেও এটাই চান স্ট্রিক। আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে ভারতীয়দের কফিনে ঠুকে দিতে হবে শেষ পেরেকটাও। যেন জ্বলজ্বল করে বাংলাদেশ ৩-ভারত ০ স্কোরলাইনটা। এটাই যে হবে, তা যেন দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছেন হিথ স্ট্রিক, ‘এই সিরিজটা আসলেই ওরা অসাধারণ খেলছে। একটা ম্যাচ জিতেই তারা খুশি ছিল না, জিততে চেয়েছিল সিরিজও। সম্ভব হলে সেটা ৩-০-তেই।’