হিথ স্ট্রিক সব সময়ই ‘লোভী’ আর স্বার্থপর

হিথ স্ট্রিক ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের লোভী চরিত্র?
ছবি: এএফপি

গতকাল বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে ক্রিকেট জিম্বাবুয়ে।

জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি হিথ স্ট্রিক। দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই পেসারের নিষিদ্ধ হওয়াটা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য লজ্জার ব্যাপারই মনে করছে দেশটার ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট জিম্বাবুয়ে। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় তারকা হলেও স্ট্রিকের স্বার্থপরতা আর লোভের ব্যাপারটি অজানা নয় ক্রিকেট জিম্বাবুয়ের। আইসিসি স্ট্রিককে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় স্ট্রিকের স্বার্থপরতা আর লোভকেই সামনে নিয়ে এসেছে তারা।

একটা দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার যদি দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ হন, সেটা সেই দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। এমনিতেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে চলেছে এ শতকের শুরু থেকে। স্ট্রিক নিজেই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সোনালি সময়ের শেষ অভিযাত্রীদের একজন। সেই সোনালি সময়ের অভিযাত্রীর বিরুদ্ধে যখন ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে টাকা নেওয়া, ম্যাচ পাতানোর উদ্দেশ্যে জুয়াড়ির চাহিদা অনুযায়ী দলের ভেতরের খবর পাচার করার অভিযোগ ওঠে, সেটি বড় ধাক্কা হয়েই আসে। স্ট্রিক বিভিন্নভাবে জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ তো রেখেছেনই, জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবেও স্ট্রিক দলের খবরাখবর বাইরে পাচার করেছেন।

দুর্নীতি দমন নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন স্ট্রিক, এসব তিনি করেছেন নিজের স্বার্থেই। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান তাভেঙ্গা মুকুহলানি পুরো বিষয়টিকেই দেখছেন জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটের জন্য একটা লজ্জার অধ্যায় হিসেবে, ‘এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক একটা ব্যাপার। একই সঙ্গে জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটের এক লজ্জাজনক অধ্যায়। আমি তো মনে করি, এটি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন হিসেবে ইতিহাসে রয়ে যাবে।’

স্ট্রিক যখন ছিলেন জিম্বাবুয়েতে সবার প্রিয়।
ছবি: এএফপি

মুকুহলানি স্ট্রিককে অনেক দিন ধরে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই স্ট্রিক সম্পর্কে বলেছেন, ‘স্ট্রিক সব সময়ই এমন। স্বার্থপর, দুর্নীতিপরায়ণ আর লোভী। তিনি নিজের ভাবমূর্তি, পদ–পদবী সবকিছুই ব্যবহার করেন হীন স্বার্থে। তিনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে অনেক শ্রদ্ধার আসনে আসীন ছিলেন। মানুষ তাঁকে ভালোবাসত, তাঁর তারিফ করত। কিন্তু এখন সবাই স্ট্রিককে চিনতে পারল।’

স্ট্রিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ও আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগেরও (এপিএল) কিছু ম্যাচ সম্পর্কে তথ্য পাচার আর দুর্নীতির অংশ হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এসব টুর্নামেন্টে বিভিন্ন দলের সঙ্গে থাকতে দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শুরুতে তিনি অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ মিলেছে তাঁর সব অপরাধের। আইসিসির স্ট্রিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন নীতিমালার পাঁচটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। এসব পরবর্তীতে এসব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন।

স্ট্রিক যখন জিম্বাবুয়ের কোচ ছিলেন।
ফাইল ছবি

১৯৯৩ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের হয়ে ৬৫টি টেস্ট আর ১৮৯টি ওয়ানডে খেলেছেন স্ট্রিক। টেস্টে ২১৬ আর ওয়ানডেতে ২৩৯ উইকেট তাঁর। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী সাবেক এ তারকা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে কোচের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৮ সালের আইপিএলে তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে স্ট্রিকেরও যোগসাজশ রয়েছে। সাকিব যখন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, তখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি বলেছিল, সাকিবের ফোন নম্বর সাকিবেরই কাছের কেউ জুয়াড়ি আগারওয়ালকে দিয়েছেন। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি, সেটি তখনই খোলাসা করেনি আইসিসি। সাকিবের ব্যাপারে আইসিসির তদন্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি ছিল এটিই। স্ট্রিকের ক্ষেত্রে আইসিসির তদন্ত সেই প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করে দিয়েছে অনেকটা। স্ট্রিকের আট বছরের নিষেধাজ্ঞায় আবারও আগারওয়ালের নামটি উঠে আসায় দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সমস্যা হয়নি কারোর।