স্টয়নিসদের ‘ক্যাঙারু ড্যান্স’ মনে করিয়ে দিল ব্রাভোদের ‘ক্যালিপসো’
ধৈর্যের বাঁধ আস্তে আস্তে ভাঙতে লাগল। অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না বলে অনেকে চলে যাচ্ছেন। কেউ আবার দুই পা এগোন তো এক পা পেছান। এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে যেটার জন্য অপেক্ষা, সেটি যদি সেখান থেকে তাঁর চলে যাওয়া মাত্রই ঘটে যায়, তাহলে তো আফসোসের সীমা থাকবে না!
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সামনে কাল রাতে এই অপেক্ষা ছিল টি-টোয়েন্টির নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলকে দেখার জন্য। অপেক্ষমাণ মানুষের মধ্যে সাধারণ কিছু দর্শক যেমন ছিলেন, ছিলেন সাংবাদিক, পুলিশ সদস্য, নিরাপত্তাকর্মী, আইসিসি ও আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের লোকজন এবং একটি বাস। সে বাসে চড়েই স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরবে অস্ট্রেলিয়া দল।
নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পর্বটা কেমন হয়, অপেক্ষা সেটি দেখার জন্যই। তা ছাড়া করোনাকালের বিশ্বকাপে দলগুলো ছিল কঠিন জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে। টুর্নামেন্ট চলাকালে তাদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছিল না। বিশ্বকাপে এই প্রথম একটা দলকে হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে দেখা যাবে, সে দলও আবার টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া!
ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়া দলের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর থেকেই অপেক্ষার শুরু। কখন ক্রিকেটাররা বেরিয়ে আসবেন, কখন দেখা যাবে তাঁদের। একটু পরপর খবর আসছিল আর ১৫ মিনিট, আর ১০ মিনিট, আর ৫ মিনিট...। কেউ কেউ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছে জানতে চান, ‘দেরি হচ্ছে কেন?’ জবাব আসে, ‘ওরা ভেতরে পার্টি করছে।’
এর আগে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের সংবাদ সম্মেলনেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল পার্টির হইচইয়ের শব্দ। ড্রেসিংরুমের পার্টিতে কী হচ্ছে, সেটা অবশ্য তখনই দেখার উপায় ছিল না। তবে পরে আইসিসির ওয়েবসাইটে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে সেই উন্মাতাল উদ্যাপনের কিছু মুহূর্ত।
এদিকে স্টেডিয়ামের বাইরেও তখন মোটামুটি পার্টির আবহই। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য অপেক্ষা চলছিল বাদ্যবাজনার মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার জার্সির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ টি-শার্ট পরে ক্রিকেটারদের গার্ড অব অনার দিতে ব্যাট হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এক দল স্কুলছাত্রী। তাদের মাঝ দিয়ে লালগালিচা মাড়িয়ে ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা তোরণ পেরিয়ে বাসে উঠবেন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা।
স্কুলছাত্রীদের কাজ হবে ক্রিকেটাররা ভেতর থেকে বের হওয়ার সময় তাঁদের মাথার ওপর ছাতার মতো ব্যাট উঁচিয়ে ধরে গার্ড অব অনার দেওয়া। একটু পরপর একজন এসে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কীভাবে ব্যাট উঁচিয়ে ধরতে হবে।
রাত ১১টা পেরিয়ে গেছে, তবু যেন কারও ক্লান্তি নেই। সবাই অপেক্ষায় বিজয়ীদের বিদায় সংবর্ধনা দিতে। ১২টা বাজার ১০ মিনিট বাকি থাকতে হন্তদন্ত হয়ে একজন বেরিয়ে এসে সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন।
মেয়েরা চূড়ান্তবারের মতো ব্যাট উঁচিয়ে ধরে দাঁড়াল। বাজনার শব্দ তীব্র হলো। ভেতর থেকে সবার আগে লালগালিচায় পা রাখলেন অ্যারন ফিঞ্চ, হাতে তাঁর বিশ্বকাপের ট্রফি।
এরপর একে একে সবাই। ঢোল আর কঙ্গোর বাজনায় উঠল ক্যাঙারু মিউজিকের তাল।
সেই তালে নাচতে নাচতে লালগালিচা পেরিয়ে বাসের দিকে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ফিঞ্চ, স্টিভ স্মিথ—এ রকম দু-একজন ছাড়া সবাই বের হলেন নাচতে নাচতে। ক্যাঙারু মিউজিকের ছন্দে অস্ট্রেলীয় ‘ক্যাঙারু ড্যান্স’। এই নাচে সবচেয়ে পারদর্শী মনে হলো মার্কাস স্টয়নিস আর অ্যাডাম জাম্পাকে। পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্টয়নিস যেভাবে হাত-পা বাঁকা করে নাচছিলেন, দেখতে তাঁকে ক্যাঙারুর মতোই লাগছিল।
ড্রেসিংরুমে নাচ, বাসে ওঠার পথে নাচ, বাসে উঠে নাচ। মধ্যরাতে নাচতে নাচতেই দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ছেড়ে গেল চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দল। আর উসকে দিয়ে গেল ৫ বছর আগের একটা স্মৃতি।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পর এমনই নাচতে নাচতে মাঠ থেকে হোটেলে ফিরেছিলেন গেইল-ব্রাভোরা। শুধু ক্যালিপসোর ছন্দের জায়গায় এবার ক্যাঙারু ড্যান্স। ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’, সে তো দুই দলই!