সৌরভের ঘরে কেন পানি ঢেলেছিলেন শচীন
সৌরভ গাঙ্গুলী নিজের ৫০তম জন্মদিনটা উদ্যাপন করছেন ইংল্যান্ডে, পরিবার–পরিজন আর বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে। সেখানেই সৌরভ আর ডোনা গাঙ্গুলীর সঙ্গে দেখা করতে সস্ত্রীক এসেছিলেন বিশেষ একজন। প্রিয় বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি আর কেউই নন, শচীন টেন্ডুলকার।
সৌরভ আর ডোনার সঙ্গে শচীন আর অঞ্জলি আড্ডা মেরেছেন প্রাণখুলে। হয়তো মাঝেমধ্যেই হারিয়ে গেছেন দূর অতীতে। যেখানে শচীন আর সৌরভ একসঙ্গে খেলেছেন, থেকেছেন, সুখ–দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এই আড্ডায় কী সেই প্রসঙ্গটি উঠেছিল? ওই যে শচীন মজা করে পানি ঢেলে একবার ভিজিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভের কিটব্যাগ!
আড্ডায় না এলেও বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শচীন নিজেই জানিয়েছেন, সেই আনন্দময় স্মৃতির কথা। সৌরভকে শচীন এ জীবনে কতভাবেই না দেখলেন! সেই কিশোর বয়স থেকে। কখনো তাঁর জুনিয়র ক্যাম্পের সতীর্থ, ভারতের হয়ে খেলার অপেক্ষায় থাকা এক তরুণ ক্রিকেটার, জাতীয় দলের টিমমেট, অধিনায়ক, হালে ব্যস্ত ক্রিকেট সংগঠক—শচীন টেন্ডুলকার চাইলে ‘সৌরভকে যেমন দেখেছি’ ধরনের লেখা নিয়ে আস্ত একটা বইই লিখে ফেলতে পারেন। সেটি হয়তো ভবিষ্যতে লিখবেন। কিন্তু বন্ধুর ৫০তম জন্মদিনে তিনি সবাইকে বলেছেন, সেই আনন্দময় গল্পটি। সেই সোনালি দিনের স্মৃতি।
শচীন সৌরভকে প্রথম দেখেন সেই আশির দশকের শেষ দিকে, ইন্দোরের একটি জুনিয়র ক্রিকেট ক্যাম্পে। এরপর থেকেই তাঁরা বন্ধু। কীভাবে, কীভাবে যেন হয়ে গেছে। একজন মারাঠি, একজন বাঙালি—কিন্তু মনের ভাষা যে এক—ক্রিকেট। শচীন সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বলেছেন, ‘ইন্দোরে একটি জুনিয়র ক্যাম্প হয়েছিল। তার আগে কানপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই টুর্নামেন্টটিতে। এরপর সৌরভ আর আমি যাই ইংল্যান্ডে স্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে। ইন্দোরের সেই ক্যাম্প হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে, বসু পরাঞ্জাপের অধীনে। ওটাতে সৌরভের সঙ্গে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম। আমরা দুজনেই বেশির ভাগ সময়ই একসঙ্গে থাকতাম। আমাদের বন্ধুত্বের শুরুটা সেখান থেকেই।’
ওই ক্যাম্পেই মজা করে যতীন পরাঞ্জাপে (ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক, বসু পরাঞ্জাপের পুত্র) ও কেদার গডবলেকে (আরেক সাবেক ক্রিকেটার) সঙ্গে নিয়ে সৌরভের কক্ষ পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন টেন্ডুলকার, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে অনেক দুষ্টুমি করতাম। এক দুপুরে আমি, যতীন পরাঞ্জাপে আর কেদার গডবলে মিলে সৌরভের কক্ষে পানি ঢেলে দিয়েছিলাম। ওর স্যুটকেস, কীট ব্যাগ সব ভিজে–টিজে একাকার। আমার এখনো মনে আছে ঘুম থেকে উঠে সে কেমন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল। আমরা আমাদের ছোটবেলায় বন্ধু–বান্ধবদের সঙ্গে অনেক মজা করতাম। সেই ঘটনাগুলো মনে হলে এখনো খুব হাসি পায়।’
ইংল্যান্ডে স্টার ক্রকেট ক্লাবে খেলতে গিয়েও মধুর স্মৃতি আছে সৌরভকে নিয়ে। শচীন বলে যান, ‘ইংল্যান্ডে আমরা ছিলাম ভুতুড়ে এক ক্যাসলে। অনেক পুরোনো বাড়ি। প্রতি রাতেই আমি আর সৌরভ গায়ে সাদা কাপড় জড়িয়ে অন্যদের ভয় দেখাতাম।’
সৌরভ গাঙ্গুলীর আগেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় টেন্ডুলকারের—১৯৮৯ সালে। সৌরভ তখনো ভারতীয় যুবদলের ক্রিকেটার। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়াতে সৌরভের যখন অভিষেক, শচীন ততদিনে বড় তারকা। ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে সৌরভের টেস্ট অভিষেকের সময় শচীনকে ‘দেবতা’ই বানিয়ে ফেলেছে ভারতের ক্রিকেটপাগল মানুষ। এরপরের ১২ বছর সৌরভ গাঙ্গুলী–যুগ। দলে নিজেকে স্থায়ী করেছেন। হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক। নতুন শতকে ভারতীয় দলের চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছেন নিজের আগ্রাসী রণনীতি দিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ভয়ডরহীন’ চেহারাটার শুরু সৌরভের অধিনায়কত্বেই। শচীন সৌরভের অধীনে খেলেছেন পাক্কা পাঁচ বছর। সেই সময়টাকে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘লিটল মাস্টার’ স্বর্ণসময়ই মনে করেন শচীন, ‘সৌরভ ছিল অসাধারণ অধিনায়ক। সে ক্রিকেটারদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিত। খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিত। সেটি আবার পুরোপুরি বুঝে নিত। দারুণ ভারসাম্য এনেছিল দলে। দলের টিম স্পিরিট তৈরি করেছিল। ওই সময়টা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ক্রান্তিকাল। আমাদের কিছু ভালো খেলোয়াড় দরকার ছিল, নতুন–পুরোনোর সমন্বয়ে একটা ভালো দল গঠনের প্রয়োজন ছিল, যাঁরা ভারতীয় ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। সৌরভের হাত দিয়েই সেটি হয়েছিল। বীরেন্দর শেবাগ, জহির খান, হরভজন সিং, আশিস নেহরা, যুবরাজ সিংদের মতো ক্রিকেটাররা ওর অধীনেই নিজেদের ক্যারিয়ারের একটা চমৎকার শুরু দেখেছিল।’
ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব শচীন করেছেন সৌরভের আগেই। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে তাঁর পরামর্শেই সৌরভকে সহ–অধিনায়ক করা হয়েছিল, ‘আমি ওই সময়টা অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম। পাশাপাশি এটাও ভাবছিলাম আমার পরে কে দায়িত্ব নেবে। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে আমি অধিনায়ক ছিলাম। আমি তখন বোর্ডকে সৌরভকে সহ–অধিনায়ক করতে বলি। আমি ওর মধ্যে ভালো অধিনায়কের গুণাবলি দেখেছিলাম।’