কমন পড়া প্রশ্নের উত্তরই পরীক্ষার হলে আগে দিতে হয়। যেটা আপনি ভালো পারেন সেটা আগে করবেন। সে কাজটা ভালোভাবে হয়ে গেলে পরে কম পারা কাজেও সাফল্যের আত্মবিশ্বাস ভর করে।
বাংলাদেশ দলের এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচি ঠিক তার উল্টো। তিন সংস্করণের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটটাই দলটা বেশি ভালো খেলে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের তো এই সংস্করণ নিয়ে একটা গর্বও আছে। অথচ সবচেয়ে ভালো পারা এই সংস্করণই বাংলাদেশ এবার খেলছে সফরের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে, টেস্ট আর টি–টোয়েন্টির কঠিন পরীক্ষায় ব্যর্থতার জ্বালা নিয়ে।
একটা সফর যত এগোয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ততই ক্লান্তি ভর করে। শরীরে ছোটখাট চোট–আঘাত বাসা বাঁধে। এবারের মতো লম্বা সফর হলে শেষ দিকে মানসিক অবসাদও পেয়ে বসে অনেককে। আর অবচেতনে বাড়ি ফেরার একটা তাড়া তো থাকেই। শুরুর দিকের খেলাগুলোতে ভালো ফল না হলে শেষ দিকে এসে সবকিছু আরো বেশি তিক্ত লাগে।
আশা করি ১০ জুলাই (আগামীকাল) আমরা ওয়ানডে সিরিজে ভালো শুরু করব। এই একটা সংস্করণে আমরা খুব স্বস্তিতে থাকি
অতীত অভিজ্ঞতাও বলে, সফরের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ সবসময়ই নড়বড়ে, অস্থির এবং স্বল্প মনোযোগী এক দল। কাল থেকে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে শুরু নিজেদের সেরা সংস্করণের ক্রিকেট ‘ওয়ানডে সিরিজে’ও দলটার মধ্যে শেষের সেই সুর ভর করা অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশ মাঠে নামবে শারীরিক ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ আর টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতে ভালো ক্রিকেট খেলতে না পারার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। মাঠে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। অথচ ওয়ানডে সিরিজটা শুরুতে বা মাঝে হলে সফরের শেষ সিরিজে আত্ববিশ্বাসী থাকার কিছু রসদ মজুদ থাকত দলে।
তিন সংস্করণের ক্রিকেটই থাকা পূর্ণাঙ্গ সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ সাধারণত ওয়ানডে খেলে সিরিজের শুরুতে অথবা মাঝে। এবারই প্রথম তাদের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে হচ্ছে টেস্ট এবং টি–টোয়েন্টির পর, সফরের শেষে প্রান্তে এসে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যত ভালো দলই হোক, ২০১৮ সালের সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে যতই ওয়ানডে সিরিজ জিতে দেশে ফিরুক এবং গত মার্চে নিজেদের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ যতই পেয়ে থাকুক দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ, এবার সে কাজটাই কঠিন হয়ে উঠলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তারওপর এখানে অনুশীলন নিয়ে ভোগান্তি তো আছেই। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে মাত্র দুই দিনই অনুশীলনের সুযোগ ছিল বাংলাদেশ দলের। গতকাল তার প্রথম দিনে সেটি শুরুতেই শেষ বৃষ্টির বাধায়। নেটে দুই–চার বল খেলেই সবাইকে ফিরতে হয়েছে ড্রেসিংরুমে, সেখান থেকে হোটেলে।
মাঠ ছাড়ার আগে সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও বলেছেন অনুশীলন নিয়ে অতৃপ্তির কথা। টি–টোয়েন্টি সিরিজটা না খেলায় বিশেষ করে তিনি নিজে তো একেবারেই ব্যাটের সংস্পর্শে নেই। অনুশীলন প্রসঙ্গে অধিনায়ক আগে সেটাই বললেন, ‘অনুশীলন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণই নেই। ৮–৯ দিন হয়ে গেছে ব্যাটিং করতে পারিনি। আজ (গতকাল) একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু দুই বল খেলে অনুশীলন শেষ হয়ে গেছে।’
বৃষ্টির বাধা না থাকলে প্রথম ওয়ানডের আগে আজ গায়নার ঈদের দিনে আরেক সেশন অনুশীলনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ দল। সেটি না হলেও কিছু করার নেই। তামিম তাই মানসিক প্রস্তুতিতেই জোর দিতে চাচ্ছেন বেশি। আর সেখানেই এসে যাচ্ছে সফরক্লান্তি আর মানসিক অবসাদের প্রসঙ্গ। নিজেদের সেরা খেলা ওয়ানডের আগে যে খেলোয়াড়েরা নিজেরাই নেই নিজেদের সেরা অবস্থায়!
তামিমের কথায়ও সেই প্রসঙ্গ, ‘একটা সিরিজে যখন আপনি ম্যাচ জিতছেন না তখন কাজটা সবসময়ই কঠিন। টেস্ট, টি–টোয়েন্টিতে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। এমন নয় যে যারা টেস্ট বা টি–টোয়েন্টিতে ছিল তারা চেষ্টা করেনি, অবশ্যই চেষ্টা করেছে। আবার এটাও সত্যি যে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি।’
নতুন একটা সিরিজের আগে শুধু ব্যর্থতার কথা না বলে অধিনায়ক চেয়েছেন সতীর্থদের উজ্জীবিতও করতে, ‘এটা মনে রাখতে হবে এই সংস্করণ নিয়ে আমরা গর্বিত, এই সংস্করণে আমরা খুব ভালো দল। তবে যতই ভালো খেলি না কেন নির্দিষ্ট দিনে ঠিক কাজটা করতে পারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ১০ জুলাই (আগামীকাল) আমরা ওয়ানডে সিরিজে ভালো শুরু করব। এই একটা সংস্করণে আমরা খুব স্বস্তিতে থাকি।’
শারীরিক ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ আর টুকটাক চোটের সমস্যার মধ্যে হাতে থাকা খেলোয়াড়দের থেকেই সেরা একাদশ বেছে নিতে চান তামিম। তবু একাদশ নির্বাচনের বৈঠকে বসে তিনি নিশ্চিতভাবেই অভাব বোধ করবেন সাকিব আল হাসানের। অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই অর্ধশতক করা সাকিব প্রথম দুই টি–টোয়েন্টিতেও দলের সেরা ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে সিরিজে তামিম পাচ্ছেন না সেই সাকিবকেই!
এমন নয় যে সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ কখনো ভালো খেলেনি। অন্যরা আস্থার প্রতিদান দিতে পারলে এই দল নিয়েও ভালো কিছু সম্ভব। তামিমও আশাবাদী, দেশের হয়ে খেলতে নেমে সবাই নিজের সেরাটাই ঢেলে দেবেন মাঠে, ‘হার কখনোই কাম্য নয়। আমরা সবাই চাই সিরিজটা ভালোভাবে শেষ করতে। সবাই–ই ভালো করতে চাই। এখানে আমার ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অনুপ্রাণিত করার দরকার হবে না, কারণ তারা সবাই দেশের জন্য খেলছে। আমাদের সেরাটাই খেলতে হবে।’
সেই সেরাটা দেওয়ার জন্য সেরা অবস্থায় কি আছে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত বাংলাদেশ দল? নিজেদের সেরা সংস্করণের ক্রিকেটটা খেলতে নামার আগে এই প্রশ্নটা বোধহয় উপেক্ষা করার উপায় নেই।