সেই ‘কালো দিনে’ই স্মিথের রেকর্ডের আলো
কাকতাল? সে তো বটেই। শাপমোচন? না, তা বলা যায় না। চার বছর আগের সেই ‘কলঙ্ক’–এর দাগ অনেক গভীর। অন্তত ক্রিকেটীয় চেতনা, খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার জায়গা থেকে তো বটেই।
শত শত, হাজার কিংবা লক্ষাধিক রানেও সেই কলঙ্ক হয়তো মোচন হবে না। কিন্তু মানুষকে অন্তত ভুলিয়ে তো রাখার চেষ্টা করা যায়।
মজার ব্যাপার, ২০১৮ সালে সেই দিনের পর থেকে স্মিথ ব্যাট দিয়ে ঠিক এই কাজটাই করছেন, চেষ্টা করতে করতে স্মিথ আজ এমন এক দিনের দেখা পেলেন, যেদিন তিনি দারুণ এক মাইলফলক গড়ায় সেই কলঙ্কের প্রসঙ্গ আরও বেশি করে উঠছে!
স্মিথের তাতে কোনো ভূমিকা নেই। এ নিয়তির খেলা। নিয়তিই তাঁকে এমন দিনের দেখা পাইয়ে দিল। লাহোর টেস্টে আজ চতুর্থ দিনে দ্রুততম ৮ হাজার রানের রেকর্ড গড়েছেন স্মিথ। চার বছর আগে ঠিক এই দিনেই কেপটাউন টেস্টে ‘স্যান্ডপেপার–গেট’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল তাঁর নাম।
সেটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্ট। ম্যাচের তৃতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় ৪৩তম ওভারের খেলা শেষে ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঘটনাটি। অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার ক্যামেরন ব্যানক্রফট হলুদ রঙের কিছু একটা দিয়ে বলটি ঘষছিলেন।
টিভি ক্যামেরা তাঁকে ধরেছে বুঝতে পেরে ব্যানক্রফট ট্রাউজারের পকেটে তা লুকিয়ে ফেলেন। পরে মাঠের আম্পায়ারকে অন্য একটি সূক্ষ্ম–তন্তুতে বোনা অন্য এক কাপড় দেখিয়ে বলেন, বল পরিচর্যার জন্য এটি ব্যবহার করেছেন।
কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার ততক্ষণে হয়ে গেছে। কারও বুঝতে আর বাকি নেই যে বল–বিকৃতির চেষ্টা করছিলেন ব্যানক্রফট। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ–অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার স্বীকার করেন, শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে বলে রিভার্স সুইং পাওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা।
পুরো ব্যাপারটাই যে পূর্বপরিকল্পিত ছিল, সেটাও স্বীকার করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দাবি ছিল, তাঁরা এসবের কিছুই জানতেন না। পরের ঘটনা তো সবারই জানা।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে স্মিথ, ওয়ার্নার ও ব্যানক্রফটকে। নেতৃত্ব এবং সম্মান দুটোই খোয়ান স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টালমাটাল সে সময়ে স্মিথের কান্নায় মন নরম হয়েছিল অনেকেরই। সব দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে স্মিথ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর কখনো এমন কিছু ঘটবে না।
চার বছর আগে কেপটাউনের সেই টেস্ট পর্যন্ত স্মিথের ব্যাটিং গড় ছিল ৬১.৩৭। নিষেধাজ্ঞা শেষে ক্রিকেটে ফেরার পর টেস্টে তাঁর বর্তমান ব্যাটিং গড় ৫৯.৭৭। ব্যাটিং গড় একটু কমলেও এ সময়ে ৫৪.৮৭ গড়কে কেউ বাজে বলতে পারবে না।
আজ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫১তম ইনিংসে স্মিথ যখন কুমার সাঙ্গাকারাকে পেছনে ফেলে দ্রুততম ৮ হাজার রানের রেকর্ড গড়লেন, তখন কি তাঁর কেপটাউন টেস্টের সেই কলঙ্ক মনে পড়েছে?
স্মিথ হয়তো নিজেও জানতেন না, আজই সেই কালো দিন!