সাতে এসে খুলবে গেরো?
দুর্ভাগ্য বলুন কিংবা একেবারে নিখাদ ক্রিকেটীয় ব্যর্থতা, সত্যিটা হচ্ছে—বিশ্বকাপে কখনো সেমিফাইনাল জেতেনি নিউজিল্যান্ড। দোর্দণ্ড প্রতাপে সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠে এসেছে কিউইরা। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কোনো দলের সৌভাগ্য হয়নি এতবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যেখানে চারবারের চ্যাম্পিয়ন, সেখানে আগের ছয়বার সেমিফাইনাল খেলে কখনো ফাইনালের টিকিটই পায়নি কিউইরা।
এবার সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দলকে প্রোটিয়ারা যতটা না চোখ রাঙাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভয় দেখাচ্ছে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাস। শেষ চারের গেরো কি এবার খুলতে পারবে নিউজিল্যান্ড? জবাব নিয়ে অপেক্ষা করছে অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক। তার আগে চলুন ফিরে দেখা যাক নিউজিল্যান্ডের আগের ছয়টি সেমিফাইনাল—
১৯৭৫ দ্য ওভাল
নিউজিল্যান্ড: ৫২.২ ওভারে অলআউট ১৫৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪০.১ ওভারে ১৫৯/৫
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: আলভিন কালিচরণ
বার্নার্ড জুলিয়েন (৫/২৭) আর অ্যান্ডি রবার্টস (৩/১৮) মিলেই ধসিয়ে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাজটা আরও সহজ করে দেন আলভিন কালিচরণ (৭২)। দ্বিতীয় উইকেটে গর্ডন গ্রিনিজের (৫৫) সঙ্গে তাঁর ১২৫ রানের জুটিই গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
১৯৭৯ ওল্ড ট্রাফোর্ড
ইংল্যান্ড: ৬০ ওভারে ২২১/৮
নিউজিল্যান্ড: ৬০ ওভারে ২১২/৯
ফল: ইংল্যান্ড ৯ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: গ্রাহাম গুচ
ইংল্যান্ডকে ২২১ রানে আটকে বোলাররা জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন কিউইদের। হ্যাডলির (৪/৩২) দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে গ্রাহাম গুচ (৭২) ও মাইক ব্রিয়ারলি (৫৩) ছাড়া আর কেউ বড় রান পাননি। কিন্তু তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২১২ রানে থেমে যায় কিউইরা। জয় থেকে যায় ১০ রান দূরে। ইয়ান বোথাম নেন ৪২ রানে ৩ উইকেট।
১৯৯২ অকল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬২/৭
পাকিস্তান: ৪৯ ওভারে ২৬৪/৬
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: ইনজামাম-উল-হক
গ্রুপে ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জিতে দারুণ দাপটে সেবার সেমিফাইনালে উঠেছিল মার্টিন ক্রোর দল। একমাত্র হারটা ছিল ইমরান খানের পাকিস্তানের বিপক্ষে, শেষ চারেও পাকিস্তানই প্রতিপক্ষ। মার্টিন ক্রো ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন, নিউজিল্যান্ডের ২৬২ পেরোনো কঠিনই মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের জন্য। কিন্তু তাড়া করতে নেমে ৩৭ বলে ৬০ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বিশ্বকাপের নতুন তারকা বনে গেলেন ইনজামাম-উল-হক। সঙ্গে জাভেদ মিয়াঁদাদের ৫৭ রানের ইনিংসে আরেকবার স্বপ্নভঙ্গ কিউইদের।
১৯৯৯ ওল্ড ট্রাফোর্ড
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১/৭
পাকিস্তান: ৪৭.৩ ওভারে ২৪২/১
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: শোয়েব আখতার
শোয়েব আখতারের (৩/৫৫) গতির ঝড়ের পরও নিউজিল্যান্ডের ২৪১ রানটাকে খুব কম মনে হচ্ছিল না। কিন্তু তাড়া করতে নেমে সেটিকে প্রায় ছেলেখেলা বানিয়ে ফেললেন সাঈদ আনোয়ার (অপরাজিত ১১৩) ও ওয়াজাহাতউল্লাহ ওয়াস্তি (৮৪)। ১৫ বল বাকি থাকতেই মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেল পাকিস্তান।
২০০৭ কিংস্টন
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৯/৫
নিউজিল্যান্ড: ৪১.৪ ওভারে ২০৮
ফল: শ্রীলঙ্কা ৮১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মাহেলা জয়াবর্ধনে
স্যাবাইনা পার্কে আসলে দাঁড়াতেই পারেনি স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের দল। জয়াবর্ধনের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে (১১৫) লঙ্কানদের রান হলো ২৮৯। তাড়া করতে নেমে কোনো কিউই ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারলেন না। মুরালিধরনের ঘূর্ণিতে (৪/৩১) নিউজিল্যান্ড অলআউট ২০৮ রানে।
২০১১ কলম্বো
নিউজিল্যান্ড: ৪৮.৫ ওভারে অলআউট ২১৭
শ্রীলঙ্কা: ৪৭.৫ ওভারে ২২০/৫
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: কুমার সাঙ্গাকারা
স্কট স্টাইরিসের ৫৭ ছাড়া বলার মতো রান তুলতে পারলেন না আর কোনো কিউই ব্যাটসম্যান। লাসিথ মালিঙ্গা-অজন্তা মেন্ডিস দুজনই নিলেন ৩টি করে উইকেট। তাড়া করতে নেমে তিলকরত্নে দিলশান পথ দেখালেন শ্রীলঙ্কাকে। তবে ৩টি ডিসমিসাল আর পরে ব্যাট হাতে ৫৪ রানের ইনিংস এবং দারুণ অধিনায়কত্ব ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিল সাঙ্গাকারাকে।