সাত দিনের দুই দিন পেরোতেই কেটে গেল সংকট
এখনো শঙ্কা যে পুরোপুরি কেটে গেছে, এমনটা বলা যায় না। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলে, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব কখন কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে শঙ্কা কখনোই পুরোপুরি যায় না। তবে গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার যে শঙ্কা খুব বেশি করে জাপটে ধরেছিল, সেটি আপাতত কেটেছে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে দুই দিন আগে খবর এসেছিল, সাত দিনের মধ্যে অবস্থার বদল না হলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা—সিএসএ) বিলীন হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী নাথি এমথেনথেওয়া সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সিএসএর স্বীকৃতিই কেড়ে নিচ্ছেন তিনি। আগামী শুক্রবারের মধ্যে তাঁর এই ঘোষণা সরকারি গেজেট হয়ে প্রকাশিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল। সেটা হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও নিষিদ্ধ হয়ে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু সাত দিনের দুই দিন পেরোতে না পেরোতেই এল স্বস্তির খবর। যে দুই পক্ষের মধ্যে সিএসএর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মূলত দ্বন্দ্ব ছিল, সিএসএর সব ক্ষমতার মূল দুই উৎস যারা, সেই মেম্বার্স কাউন্সিল ও অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের দ্বন্দ্ব আপাতত মিটেছে। দুই পক্ষই গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১২টার কিছু আগে যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিএসএ কীভাবে চলবে, সে ব্যাপারে নতুন একটা মডেল ঠিক করার ব্যাপারে একমত হয়েছে তারা।
বিবৃতিতে দুই পক্ষ জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার কোম্পানি আইন অনুসরণ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিবদমান দুই পক্ষ মিলে একটা মেমোরান্ডাম অব ইনকরপোরেশন (এমওআই) ঠিক করবে। যে এমওআই ঠিক করে দেবে, সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি পক্ষের অধিকার, দায় ও দায়িত্ব কেমন হবে।
‘মেম্বার্স কাউন্সিল ও বোর্ড আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছে যে সংকট এড়ানো গেছে, বিবদমান ব্যাপারগুলো নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে’—লেখা আছে যৌথ বিবৃতিতে। প্রশাসনের নতুন কাঠামো কী হবে, সাধারণ মানুষকে সেটি জানানো হবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর।
এর আগে ১৭ এপ্রিল বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভায় মেম্বার্স কাউন্সিল ও বোর্ডের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে যায়। মেম্বার্স কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা কমিয়ে আরও বেশি স্বাধীন পরিচালক রেখে সিএসএর নতুন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি মেম্বার্স কাউন্সিল। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের এই সংকটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে ইঙ্গিত দেয়, এটি মূলত মেম্বার্স কাউন্সিল ও বোর্ডের ক্ষমতা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দ্বন্দ্ব থেকে হতে পারে।
১৭ এপ্রিলের সভা পর্যন্ত নতুন প্রস্তাবিত বোর্ডের কাঠামোতে মেম্বার্স কাউন্সিলের প্রতিনিধি ৭ জন থেকে কমিয়ে ৪ জন এবং স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা ৫ জন থেকে বাড়িয়ে ৭ জন করার প্রস্তাব ছিল। সেটি নিয়ে ক্রিকইনফো লিখেছে, নতুন বোর্ডে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব কমে যাচ্ছে দেখে মেম্বারস কাউন্সিলের সদস্যরা খুশি হতে পারছেন না, ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চাইছেন—এমনটাই মনে হচ্ছে।
নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, কারণ তাঁরা নিজেদের অবস্থান তেমন একটা ব্যাখ্যা করেননি। তবে এখানে সম্ভবত এই তথ্য জানানো গুরুত্বপূর্ণ যে বোর্ডে থাকা সদস্যরা শুধু সভায় যোগ দেওয়ার জন্য বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার র্যান্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকারও বেশি) করে আয় করেন, এর পাশাপাশি ম্যাচ দেখতে যাওয়ার মতো আরও সুবিধা তো আছেই।
১৭ এপ্রিলের সভায় মেম্বার্স কাউন্সিল ও বোর্ডের দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী নাথি এমথেনথেওয়া বলেন, সিএসএর জোগান বন্ধ করতে ও সংস্থাটির স্বীকৃতি কেড়ে নিতে যা করা সম্ভব, তিনি তা-ই করবেন। নিজের ঘোষণাকে সরকারি প্রজ্ঞাপনের রূপ দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করানোর চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়ে দেন এমথেনথেওয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকারি গেজেটগুলো সাধারণত প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হয়, তার আগে সপ্তাহজুড়ে চলে সেটির বিশ্লেষণ। সে কারণে গত পরশু শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে, আগামী শুক্রবারই না দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে!
প্রতিটি দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সরকারের হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রেখে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায় আইসিসি। এ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার আলাদা নিয়মও আছে। সে ক্ষেত্রে সিএসএতে সরকারের এই প্রভাবের পর দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা বাস্তবে রূপ নেওয়ার কাছাকাছিই চলে এসেছিল।
আপাতত সংকট এড়ানো গেছে, এ-ই স্বস্তির!