সাজিদ খানকে ইতিহাসে জায়গা করে দিল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামার আগে পাকিস্তানি অফ স্পিনার সাজিদ খানের টেস্ট ক্যারিয়ার ছিল ২ টেস্টের। গত এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে অভিষেকের পর দুই টেস্টে তাঁর উইকেট ছিল সাকল্যে ২টি। সেই সাজিদ খানই বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই টেস্ট মিলিয়ে পেলেন ১৬ উইকেট! এর মধ্যে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে নেন ৮ উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘কল্যাণে’ অখ্যাত এই অফ স্পিনারই এখন আবদুল কাদির, ইমরান খানদের পাশে। পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টে চতুর্থ সেরা বোলিং পরিসংখ্যানের মালিক এখন এই সাজিদ।
আরেকটু হলেই এজাজ প্যাটেলকে ধরে ফেলতেন তিনি। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে তিনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন, ১০ উইকেট তিনি পেতেই পারতেন। ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক আর খালেদ আহমেদ ছাড়া তিনি ফিরিয়েছেন সবাইকে। মুমিনুল রান আউট হয়েছেন আর খালেদকে বোল্ড করেছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। কিন্তু তিনি যেভাবে বোলিং করছিলেন, তাতে এজাজ প্যাটেলের ১০ উইকেট পাওয়ার তিন দিনের মাথায় তিনি ঢুকে যেতে পারতেন টেস্টের এক ইনিংসে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নেওয়ার ক্ষুদ্র তালিকায়।
টেস্টে পাকিস্তানের পক্ষে সেরা বোলিং
বিরল রেকর্ডটা হয়তো করতে পারেননি। কিন্তু যা করেছেন, তাতেই পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে ঠাঁই হয়ে গেছে তাঁর। পাকিস্তানের হয়ে টেস্টে এক ইনিংসে ৯ উইকেট আছে মাত্র দুই বোলারের—দুজনই কিংবদন্তি। আবদুল কাদির ও সরফরাজ নওয়াজ। ১৯৮৭ সালে লাহোরে কাদির ইংল্যান্ডকে স্পিন-বিষে নীল করেছিলেন। ৫৬ রানে পেয়েছিলেন ৯ উইকেট। সেটিই টেস্টে পাকিস্তানের পক্ষে এক ইনিংসে সেরা বোলিং। সরফরাজ নওয়াজ তাঁর গতি আর রিভার্স সুইং দিয়ে ১৯৭৯ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের কাবু করেছিলেন। ৯ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ৮৬ রানে। সেটি এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের পক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় সেরা বোলিং। তৃতীয় সেরা বোলিং অবশ্য সাম্প্রতিককালেই। ২০১৮ সালে লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ দুবাইতে ৪১ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।
সাজিদ অল্পের জন্য এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে আসতে পারেননি। ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি ৮ উইকেট নিয়েছেন ৪২ রানের খরচায়। তবে সাজিদ পেছনে ফেলেছেন টেস্টের এক ইনিংসে ৮ উইকেট পাওয়া পাকিস্তান ক্রিকেটের বেশ কয়েক কিংবদন্তিকে। ইমরান খান টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে দুবার ৮ উইকেট নিয়েছেন। দুটি ঘটনাই ১৯৮২ সালের। তিনি লাহোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ উইকেট নেন ৫৮ রানে। করাচিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেট নিতে তিনি খরচ করেন ৬০ রান। টেস্টের পাকিস্তানের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের তালিকায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ—দুটি স্থানই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর।
পরের দুটি স্থান যথাক্রমে ফাস্ট বোলার সিকান্দার বখত এবং অফ স্পিনার ও বর্তমানে পাকিস্তান দলের কোচ সাকলায়েন মুশতাকের। সিকান্দার বখত দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ১৯৭৯ সালে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ৬৯ রানে। সাকলায়েন ২০০০ সালে লাহোরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ১৬৪ রান দিয়ে।
সাজিদের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়ায়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন পেশোয়ার ও খাইবার পাখতুনখোয়ার হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৬ সালে পেশোয়ারের হয়ে পাকিস্তান ওয়াপদার বিপক্ষে। লিস্ট ‘এ’ অভিষেক ২০১৭ সালে। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম খেলেছেন ২০১৮ সালে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্টেই বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন। ৪৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে এরই মধ্যে ১৬৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতেও কম যান না। এরই মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটি শতরান ও দুটি পঞ্চাশ আছে। রান করেছেন ৯৪৭। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে একটি অর্ধশতক করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে খেলেছেন অপরাজিত ৩৩ রানের একটি ইনিংস।