সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ভরসায় শেষ প্রথম দিন
>সাদমান ইসলাম আর সাকিব আল হাসানের ফিফটিতে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষ বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৫৯। দিন শেষে ৬৯ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত সাকিব-মাহমুদউল্লাহ
দিনটা দারুণভাবেই শেষ করলেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এ দুজন সাময়িক বিপর্যয় সামাল দিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ নিয়ে গেছেন ৫ উইকেটে ২৫৯-এ। ফিফটি পেয়েছেন সাকিব। ৫৫ রানে অপরাজিত তিনি। অপরাজিত মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ৩১। এই দুই ব্যাটসম্যান কাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের সংগ্রহকে কত দূর নিয়ে যেতে পারেন দেখার বিষয় সেটিই।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহ যদি দিন শেষের দুই নায়ক হন, তাহলে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ওপেনার সাদমান ইসলামের জন্যই। ৯৪তম ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট অভিষিক্ত এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান তাঁর ওপর রাখা নির্বাচকদের আস্থার দারুণ প্রতিদান দিয়েছেন। গত কয়েকটি টেস্টে অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা যে শঙ্কা জাগাচ্ছিল, সেটি আপাতত নিজের ব্যাট দিয়ে চাপা দিতে পেরেছেন তিনি। ১৯৯ বল খেলে ৭৬ রানের ‘প্রায় নির্ভুল’ এক ইনিংস খেলেছেন। ৬টি বাউন্ডারিতে সাজানো এই ইনিংসে তিনি দেশের হয়ে অভিষেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বল খেলার রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। দেশের হয়ে অভিষেকে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডটি আমিনুল ইসলামের। ২০০০ সালের নভেম্বরে দেশের টেস্ট অভিষেকে আমিনুল যে ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন, সেটিতে তিনি বল খেলেছিলেন ৩৮০টি। সেদিক দিয়ে ২৩ বছরের সাদমান নিজেকে দারুণ এক টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে ধরার প্রাথমিক প্রক্রিয়াটা শুরু করে দিলেন। বাকিটা এখন তাঁর নিজের হাতেই।
আগেই বলা হয়েছে, একটি ভুলই করেছিলেন সাদমান। ৭৬ রান করে ফেলেছেন। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু এ সময়ই ভুলটা করে বসলেন সাদমান ইসলাম। দেবেন্দ্র বিশুর বলটি যতটা ঘুরবে ভেবেছিলেন, ততটা ঘোরেনি। ভুল লাইনে ব্যাট পেতেই বিপদে পড়লেন সাদমান। ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে বলটা আঘাত করল প্যাডে। আবেদন হতেই আম্পায়ার আর দেরি করেননি। রিভিউ নেওয়ারও দরকার পড়েনি। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই ফিরেছেন এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। সাদমানের ৭৬ রানের ইনিংসটি আদর্শ টেস্ট ইনিংস। বড় সংস্করণে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, এই অভিষিক্ত ক্রিকেটার সেটিই যেন আজ সতীর্থদের শিখিয়েছেন। কিন্তু আক্ষেপটা থেকেই গেল।
সাদমান ফেরার আগে অবশ্য ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন—খুব বাজেভাবে। বিশুর বল সরে গিয়ে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড—কেন? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। ৬১ বলে ২৯ রান করেছিলেন তিনি। কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ২৯ রান করতে পরিশ্রম নিশ্চয়ই হয়েছিল। কিন্তু মিঠুন নিজের পরিশ্রমের মূল্যটা বুঝতে দিলেন কোথায়। ড্রেসিং রুমে ফিরে নিজের আউটটির ভিডিও ফুটেজ যতবার দেখবেন, আক্ষেপে মুখ ঢাকাতে বাধ্য হবেন তিনি। সাদমানের সঙ্গে তাঁর জুটিটা ছিল ৬৪ রানের। মধ্যাহ্নবিরতির আগে ৮৭ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এই দুইয়ের জুটি অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে।
তবে মিঠুনের মতোই লজ্জা পাবেন মুমিনুল হক। মধ্যাহ্নবিরতির ঠিক আগে দিয়ে আউট হলেন ভালো খেলে নিজের ইনিংসের ভিত গড়ে ফেলা মুমিনুল হক। কেমার রোচের বলটি তিনি খেলতে গেলেন এমনভাবে, যেন টি-টোয়েন্টি খেলছেন। লং অনে তাঁর সহজ ক্যাচটি নিয়েছেন রোস্টন চেজ। মুমিনুল-মিঠুনের পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ২৪ বলে ১৪ রান করে এভিন লুইসের বলে বোল্ড হয়ে বড় বিপদেই ফেলেছিলেন দলকে। তবে সেটি দিন শেষে সামাল দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু ভালোই হয়েছিল। ৪২ রান আসে সৌম্য সরকার আর সাদমান ইসলামের ওপেনিং জুটিতে। বিরতির ঠিক আগে দিয়ে যেমন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, ঠিক সেভাবেই ব্যক্তিগত ১৯ রানে পানি পানের বিরতির আগে চেজের বলে স্লিপে শাই হোপকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সৌম্য।
দিনটা ভালোই গেছে বাংলাদেশের। পেসারবিহীন বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চার স্পিনার দিয়ে ঘাই মারার যে পরিকল্পনা করেছে, সেটি বাস্তবায়িত করতে হলে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহটা খুব জরুরি। সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে এখন সে দায়িত্বটা নিতে হবে। দেখা যাক স্কোরবোর্ডে শেষ পর্যন্ত কত ওঠে!