সাকিবের 'বিশৃঙ্খল' অভিজ্ঞতা
>সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হইচই, বিশৃঙ্খলা। যেটি এক নতুন অভিজ্ঞতাই বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের জন্য।
সংবাদ সম্মেলন একটা হলো বটে! এলোমেলো, বিশৃঙ্খল। প্রশ্নের ভেতর প্রশ্ন। একজনের প্রশ্ন কেড়ে নিয়ে আরেকজনের বাকিটা শেষ করার চেষ্টা। প্রায় ২০ মিনিটের সেই সংবাদ সম্মেলন শেষেও চমক। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগের প্রধান লুৎফুল্লাহ স্টানিকজাই রীতিমতো টেবিল-চেয়ার পেতে বসে গেলেন নাম ডাকতে!
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের চেয়ে কম উৎসাহ নেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। বরং তাদের ভিড়টাই বেশি। এই সিরিজ দিয়ে ভারতের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ভেন্যুর দ্বারোন্মোচন হওয়া, আফগানিস্তানের ক্রিকেটকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিসিসিআইর সঙ্গে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বন্ধুত্ব, দুই দলের মূল শক্তিতে আইপিএলের প্রভাব-এসবই আসলে তাদের কৌতূহলের কারণ।
সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মোটামুটি সব বড় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদেরই দেখা গেল। আর তিন দেশের সাংবাদিকদের সামলাতেই বেচারা লুৎফুল্লাহর ওই দশা। এত সাংবাদিক সামলানোর অভিজ্ঞতাও হয়তো তাঁর আগে হয়নি। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে বসিয়ে নাম ডেকে ডেকে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বিতরণের অভিনব পন্থায় সেটি আরও বেশি করে প্রকাশিত।
এর আগে দুই অধিনায়ক আর দুই কোচের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার দায়ও হয়তো কিছুটা তাঁর এবং সেটিও অনভিজ্ঞতার কারণেই হবে। কিন্তু দায় ক্রিকেট উন্নত ভারতের সাংবাদিকদেরও কি কম! যাঁর যখন যাঁকে ইচ্ছা প্রশ্ন করছেন, কখনো কখনো একসঙ্গে দু-তিনজনও। পরিস্থিতি সামলাতে একপর্যায়ে আফগানিস্তানের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ ফিল সিমন্স ‘হোল্ড অন...হোল্ড অন’ বলে নিজেই হয়ে গেলেন ‘মিডিয়া ম্যানেজার’। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলেন, এভাবে চললে হবে না। প্রশ্ন করতে হলে আগে হাত তুলতে হবে। তাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলো।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লুৎফুল্লাহ দুই দলের কোচ ফিল সিমন্স ও কোর্টনি ওয়ালশকে তাঁদের দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলতে বললেন। এই জায়গায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান এক বিন্দুতে। দুই দলের কোচই ক্যারিবীয়, একসময়ের সতীর্থ। দুজনই জানালেন, তাঁদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। আফগানিস্তান দল ৬-৭ সপ্তাহ ধরে ভারতে অনুশীলন ক্যাম্প করছে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সেটা তাদের সাহায্য করেছে বলে জানালেন সিমন্স। পরশু প্রস্তুতি ম্যাচে হারলেও এখানে দু-তিন দিনের অনুশীলন এবং ঢাকায় নিয়ে আসা প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট কোর্টনি ওয়ালশও।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোখে আফগানিস্তান ‘ভালো দল’। কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে তিনি সিরিজটা জিততেই চান। তাঁর পরিষ্কার বার্তা, ‘আমরা জিততে চাই। সেরা খেলা খেলতে চাই। সবাই যেন ভালো খেলে। নিদাহাস ট্রফিতে যেভাবে খেলেছি সেভাবে খেললে আমাদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।’
নতুন স্টেডিয়াম, মাঠ-উইকেট, আফগানিস্তান ক্রিকেটের উন্নতি, বৃষ্টির পূর্বাভাসযুক্ত আবহাওয়া, বাংলাদেশের রশিদ খান-চ্যালেঞ্জ-সবই এসেছে আলোচনায়। তার মধ্যে আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাইর একটা কথা আলাদাভাবে কানে লাগল। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের তুলনায় ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের বাইরে সরে গিয়ে তিনি বললেন দুই দেশের ক্রিকেট-আবেগের কথা, ‘আমি মনে করি, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুই দলই মন থেকে খেলাটা খেলে।’
প্রতিটি প্রশ্নোত্তরেই সংবাদ সম্মেলনকক্ষজুড়ে আবহসংগীতের মতো ছিল মৃদু হইচই, মুঠোফোনের রিংটোন আর শেষ দিকে প্রশ্ন করার জন্য লুৎফুল্লার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। এসবের মধ্যেই উইকেট নিয়ে প্রশ্নের উত্তর সাকিব যে দিয়ে ফেলেছেন, সেটি লক্ষ্য করেননি এক সাংবাদিক। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরপরই আরেকজনের প্রশ্ন, ‘উইকেট কেমন দেখলেন?’ সাকিব যতবারই বলেন, ‘উত্তর তো মাত্রই দিলাম’, ততবারই তাঁর একই প্রশ্ন, ‘উইকেটটা কেমন...?’
এমন ঘটনাবহুল সংবাদ সম্মেলনে একটা প্রশ্ন সাকিবকে না করলেই নয়-এই সংবাদ সম্মেলনে একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো কি না? সাকিবও মৃদু হেসে বললেন, ‘ঠিকই আছে। নতুন অভিজ্ঞতা...স্বাভাবিকভাবেই নতুন লাগছে।’