সাকিবের নেতৃত্বে-ই ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ: মাশরাফি
ছোট্ট আলাইনার সঙ্গে সাকিবের কথা হয়েছে? আলাইনার বাবা সাকিব আল হাসান কী লুকিয়ে কেঁদেছেন? এসব প্রশ্ন করাটা সত্যি বোকামি। তবু মানুষটা যেহেতু সবার প্রিয় তাঁর এমন দিনে খোঁজ-খবর রাখাটাও তো স্বাভাবিক।
সাকিব আল হাসানের ওপর এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় ধাক্কা খেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। যে ঝড় উঠেছে তা স্বাভাবিকভাবেই লেগেছে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। সাকিব আল হাসানের রাতটা কেমন কাটবে—এর উত্তর খোঁজাটা বড্ড নিষ্ঠুরতা হয়ে যাবে। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় তাঁর অনেক ভক্ত, সতীর্থই কেঁদেছেন নিশ্চিত; হয়তো গোপনে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক বড় বিজ্ঞাপণ মাশরাফিও সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় কষ্ট পেয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এই ঘটনায় সামনের কিছু রাত তাঁর নির্ঘুম কাটবে। তবে মাশরাফি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ২০২৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। এবং সেটা সাকিবের নেতৃত্বেই। কারণ মাশরাফি জানেন সাকিব কী জিনিস। কিভাবে জবাব দিতে হয়, কিভাবে ফিরে আসতে হয় এটা যে সাকিবের ভালো করেই জানা আছে। আর সাকিবকে মাশরাফির চেয়ে কে-ই বা ভালো চেনে বলুন! জাতীয় দলে দুজনের শুরুটা যে রেললাইনের মতো সমান্তরাল।
মাশরাফি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান...!!!’
এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) আজ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এর মাঝে থাকছে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার আইন লঙ্ঘনের অপরাধে সাকিবকে এ শাস্তি দিয়েছে আইসিসি। বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক অবশ্য এর দায় মেনে নিয়েছেন। আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে তথ্য না জানানোয় এ শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। ভবিষ্যতে একই ধরনের অপরাধ করলে এই স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
এ ব্যাপারে আইসিসি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির দুর্নীতি দমন আইনের ২.৪.৪ ধারার অধীনে তিনটি অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজ ও ২০১৮ সালে আইপিএলের সময় জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে জানাননি সাকিব।
২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজেই তাঁর সঙ্গে জুয়াড়িরা দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করলেও সেটি দ্বিতীয়বার এসিইউর কাছে বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব।
২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচের আগে সাকিবকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটিও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
সাকিব আল হাসান সব কটির দায় স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আইসিসির দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে দেওয়া সব শাস্তি মেনে নিয়েছেন। যদি নিষেধাজ্ঞার সময় শাস্তির সব বিধিবিধান মেনে চলেন, তবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন।
এ ব্যাপারে আইসিসির নৈতিকতাবিষয়ক মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শাল বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসান অত্যন্ত অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে এ ব্যাপারে অনেকগুলো ক্লাসেই অংশ নিয়েছে এবং এ কোডের অধীনে তার দায়িত্বের কথা জানে। তার উচিত ছিল এসব প্রস্তাবের কথা জানানো। সাকিব সব দায় স্বীকার করে নিয়েছে এবং এ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। সে ভবিষ্যতে আইসিসির সততা বিভাগকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। তরুণ ক্রিকেটারদের তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে বলবেন। আমি তার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পেরে খুশি।’
আরও পড়ুন: