সাকিবের দুই ম্যাচে ভুতুড়ে মিলে এক রেকর্ড
৮৮ রান। ৩ উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ব্যাট আর বল হাতে সাকিব আল হাসানের অবদান। সাদাচোখে একেবারে আহামরি কিছু নয়। নামটা সাকিব আল হাসান, এটা মাথায় রাখলে তো আরও নয়। কিন্তু দলের প্রয়োজনের সময়ে সিরিজে তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের জয়ে সাকিবের মধ্য বিশ-ত্রিশের ইনিংস আর উইকেটগুলোই দারুণ অবদান রেখেছে।
তবে সাকিবের পারফরম্যান্স তেমন নজর কেড়ে না নিলেও সর্বশেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের পারফরম্যান্সে অবিশ্বাস্য মিলটা বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলতে বাধ্য! নিশ্চিতভাবেই কাকতাল, তবে সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের ব্যাট আর বল হাতে পারফরম্যান্সে এতটাই মিল যে, ব্যাপারটাকে ভুতুড়ে মনে হতে পারে!
এমনই অবস্থা যে এই ভুতুড়ে মিলেই রেকর্ড হয়ে গেল!
অনেক কাঠখড় পোড়ানো শেষে বাংলাদেশে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে চোখ রেখে পাঁচ টি-টোয়েন্টির এই সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই জিতে এরই মধ্যে সিরিজটা জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে সাকিবের ব্যাটে-বলে অবদান?
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ২৩ রানের জয়ে ব্যাট হাতে তিনে নেমে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান, বল হাতে ১ উইকেট। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতল ৫ উইকেটে, এবার সাকিব ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে করলেন ২৬ রান। কাল তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতল ১০ রানে, এবারও সাকিবের ব্যাট হাতে ২৬ রান, বল হাতে ১ উইকেট।
কী ভাবছেন? শুধু রান আর উইকেটসংখ্যাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের পারফরম্যান্সে একমাত্র মিল? মোটেই না!
তবে এই মিলেই একটা রেকর্ড হয়ে গেছে। ক্রিকেটের রেকর্ড বলছে, টি-টোয়েন্টিতে একই দলের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের একই রকম স্কোর (সাকিবের ক্ষেত্রে ১৭ বলে ২৬ রান) ও একই রকম বোলিং ফিগার (সাকিবের ক্ষেত্রে ৪-০-২২-১) এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
ব্যাট হাতের মিলগুলো আগে বলা যাক। গত বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তিনে নেমে সাকিব ২৬ রান করলেন ১৭ বলে, কাল তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও তা-ই। বল আর রানের সংখ্যা এক হওয়ায় স্ট্রাইক রেট যে সমান হবে, সেটা বুঝতে তো আর আইনস্টাইন হওয়ার দরকার পড়ে না! দুই ম্যাচেই সাকিবের স্ট্রাইক রেট ১৫২.৯৪। কিন্তু বল আর রানের সংখ্যা সমান হলে যে বাউন্ডারি সংখ্যাও সমান হবে, এমন তো কোনো কথা নেই! সাকিবের ক্ষেত্রে তা-ও মিলে গেল! দুই ম্যাচেই তাঁর ইনিংসে ৪টি করে চার, ছক্কা একটিও নেই।
এতেও মিলটাকে তেমন ভুতুড়ে মনে হচ্ছে না? সে ক্ষেত্রে বাড়তি তথ্য, দুই ম্যাচেই সাকিব আউট হয়েছেন ইনিংসের নবম ওভারে! শুধু দুই বলের এদিক-ওদিক। বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অ্যান্ড্রু টাইয়ের বলে বোল্ড হলেন ইনিংসের নবম ওভারের তৃতীয় বলে। কাল অ্যাডাম জাম্পার বলে অ্যাশটন অ্যাগারের হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরছেন সাকিব, নবম ওভারের সেটি ছিল প্রথম বল।
এ তো গেল ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সের মিল, বল হাতে কী করেছেন, সেখানে গত দুই ম্যাচে সাকিবের মিলটা দেখবেন না? দুই ম্যাচেই একটি করে উইকেট নেওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু দুই ম্যাচেই সাকিব চার ওভার বল করে রান দিয়েছেন সমান ২২টি করে! এ বেলায়ও আইনস্টাইন হওয়ার ভাব না নিয়েই বলে দেওয়া যায়, দুই ম্যাচেই সাকিবের ওভারপ্রতি গড়ে রান দেওয়ার হার (ইকোনমি রেট) ৫.৫০!
আহা, এখানেই শেষ ভাবছেন? দুই ম্যাচে সাকিবের উইকেট নেওয়ার সময়ে মিলটা দেখবেন না? বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিব যখন মোজেস হেনরিকেসকে বোল্ড করছেন, সেটি ছিল ইনিংসে তাঁর চতুর্থ ও শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল। কাল সাকিবের শিকার বেন ম্যাকডারমট, এবারও বোল্ড! এবারও বলটা ছিল ইনিংসের সাকিবের চতুর্থ ও শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল!