টেস্ট অধিনায়কত্বটা সম্ভবত বাড়তি চাপ হয়ে গিয়েছিল মুমিনুল হকের জন্য। সেই চাপে পড়ে হারিয়ে গেছেন ব্যাটসম্যান মুমিনুল। নিজেকে ফিরে পেতে অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। তারপর হারিয়েছেন দলে জায়গাও। মুমিনুল সরে যাওয়ায় লাল বলে দলের নেতৃত্ব দিয়ে ফেরানো হয়েছে সাকিব আল হাসানকে, আগেও দুই দফায় যিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু মুমিনুলের অধীনের দল যেমন খেলছিল, তৃতীয় দফায় সাকিব অধিনায়ক হয়ে ফেরার পর এর চেয়ে ভালো কিছু হয়নি।
অ্যান্টিগা ও সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। দুটিতেই হার। একটায় ৭ উইকেটে, একটায় ১০ উইকেটে। দুই টেস্টের একটিও পঞ্চম দিনে যায়নি। চার ইনিংসের একটাও ২৫০ রান ছোঁয়নি। ব্যাটসম্যানদের কারও শতক নেই। অর্ধশতক মাত্র ৫টি। ফলাফল, দায়টা আসলে সাকিবের নয়। অধিনায়ক বদলালেই তো আর দল বদলে যায় না। টেস্টে বাংলাদেশ ভালো দলগুলোর একটা কখনোই ছিল না। সাকিবের নেতৃত্বে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ টেস্টে ভালো দল হয়ে যাবে, জিততে শুরু করবে, এমন প্রত্যাশাও আসলে বাস্তবসম্মত ছিল না।
সাকিব যে অধিনায়ক হয়েছে, এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও পারফরমারের হাতে অধিনায়কত্ব থাকা উচিত এবং সেটাই আছে। কিন্তু রাতারাতি কোনো কিছু চিন্তা করলে হবে না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর মিরপুরে আজ নিজের বাসায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে সে কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সাদা বলে দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়কের কথা, ‘সাকিব যে অধিনায়ক হয়েছে, এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও পারফরমারের হাতে অধিনায়কত্ব থাকা উচিত এবং সেটাই আছে। কিন্তু রাতারাতি কোনো কিছু চিন্তা করলে হবে না।’ সাকিব অধিনায়ক মানেই বাংলাদেশ জিতে যাবে, ব্যাপারটা যে এমন নয়, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যে বাস্তবতা, তা নিয়ে মাশরাফির কথা, ‘প্রথমত টেস্টে আমরা কখনোই ভালো দল ছিলাম না। আমরা মাঝে ঘরের মাঠে কিছু ম্যাচ জিতেছিলাম, একটা প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার নিচের দিকে। টেস্টে আমরা কখনোই ধারাবাহিক ছিলাম না।’
সবাই মিলে বসে যদি আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে এগোই, তাহলে অন্তত এক-দেড় বছর পর ধারাবাহিক পারফর্ম করা সম্ভব হবে।
সেন্ট লুসিয়ায় হারের পর গতকাল সাকিবও একই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে যে টেস্ট সংস্কৃতিই নেই, এর পেছনে খেলোয়াড়, দর্শক, ক্রিকেট–সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনার অভাব—অনেকগুলো বিষয়ে উঠে এসেছে সাকিবের সেই কথার মধ্যে। তারপর সাকিব আশা দেখিয়েছেন এই বলে, ‘সবাই মিলে বসে যদি আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে এগোই, তাহলে অন্তত এক-দেড় বছর পর ধারাবাহিক পারফর্ম করা সম্ভব হবে।’
মাশরাফিও এ জায়গায় সাকিবের সঙ্গে একমত, ‘সাকিব জানে কীভাবে দল পরিবর্তন করতে হবে। এর আগেও দুইবার সে অধিনায়কত্ব করেছে। আমি মনে করি, সাকিব সব জানে, কীভাবে সব সামলাতে হয়। কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে দলটাকে। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, পরিকল্পনার বিকল্প কিছু নেই। পরিকল্পনা না করলে অন্তত এই ফরম্যাটে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সে জন্য আগে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিতে বলছেন মাশরাফি, ‘ঘরের মাঠে বেশির ভাগ ম্যাচ এখন আমাদের জিততে হবে। ঘরের মাঠে খেললে কিন্তু ড্র করার সুযোগ কমে যাবে। কারণ, স্পিনিং উইকেট বানালে ড্র হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আমাদের ম্যাচ জিততে হবে ওই পরিকল্পনা করে। আমি মনে করি সাকিব আক্রমণাত্মক চিন্তাভাবনা করছে, যা ইতিবাচক।’