সমুচা খেয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছিলেন ভারতের মেয়েরা
নতুন বই নিয়ে আলোচনায় বিনোদ রাই। ভদ্রলোক ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক কমিটির প্রধান হিসেবে প্রায় তিন বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পরিচালনা করেছেন। ‘নট জাস্ট আ নাইটওয়াচম্যান: মাই ইনিংস ইন দ্য বিসিসিআই’ নামের বইয়ে সে সময় নিজের অভিজ্ঞতা সবিস্তারে তুলে ধরেছেন বিনোদ রাই।
বইটিতে চমক জাগানো কিছু তথ্য আছে। ২০১৭ সালে ভারতের কোচ অনিল কুম্বলে ও অধিনায়ক বিরাট কোহলির মধ্যে বিবাদের কারণে বেশ বড়সড় এক ঝড় বয়ে গিয়েছিল দেশটির ক্রিকেট মহলে। সে ঘটনা নিয়ে বইয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিনোদ। সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তার দাবি, কুম্বলে–কোহলি দ্বন্দ্ব সমস্যায় ফেলেছিল বোর্ডকে।
ভারতের সাময়িকী ‘দ্য উইক’-এ নিজের এই বই নিয়ে কথা বলেছেন বিনোদ রাই। আলাপচারিতায় ছেলেদের ক্রিকেট ছাড়াও উঠে এসেছে ভারতের মেয়েদের ক্রিকেটের প্রসঙ্গও। তাঁর আক্ষেপ, মেয়েদের ক্রিকেটে উন্নতির জন্য যা যা করার দরকার ছিল, সব করতে পারেননি। মেয়েদের ক্রিকেটে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারেননি। ক্রিকেটে ভারতের ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের চিরায়ত বৈষম্যই যেন স্পষ্ট হয়েছে বিনোদ রাইয়ের কথায়।
২০০৬ সালের আগপর্যন্ত ভারতে মেয়েদের ক্রিকেটকে কেউ গুরুত্ব দিত বলে মনে হয়নি বিনোদ রাইয়ের, ‘আমার মনে হয় না মেয়েদের ক্রিকেটে যতটুকু মনোযোগ দেওয়া দরকার, ততটুকু মনোযোগ দেওয়া হয়। নারী ক্রিকেটারদের ২০০৬ সালের আগে গুরুত্বও দেওয়া হতো না। তখন শরদ পাওয়ার এসে ছেলে ও মেয়েদের অ্যাসোসিয়েশন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেন।’
নারী ক্রিকেটারদের জন্য আলাদা জার্সি বানানো হতো না, বলে দাবি করেন বিনোদ রাই। ছেলেদের জার্সিই কেটে আবারও নতুন করে সেলাই করে নারীদের জার্সি বানানো হতো, ‘আমি শুনে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি যে মেয়েরা নিজেদের জার্সিও পায় না। ছেলেদের জার্সি কেটে আবারও সেলাই করে তাদের জার্সি বানানো হতো তখন। তখনই আমি নাইকিকে (ভারতের জার্সি পৃষ্ঠপোষক) ফোন করে বলি, এভাবে চলবে না। ছেলে ও মেয়েদের জার্সির ডিজাইন আলাদা হতে হবে।’
এরপরই মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন বিনোদ রাই, ‘আমি আসলেই বিশ্বাস করি আমি যখন এই দায়িত্বে আসি, তখন মেয়েদের অনুশীলন, কোচিং ব্যবস্থা, ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম, ভ্রমণ, ম্যাচ ফি নিয়ে আরও অনেক কিছু করা যেত। এই ভুলটা আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি।’
জার্সি তো বটেই, ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলা হারমানপ্রীত কাউর, ঝুলন গোস্বামীরা ঠিকঠাক খাবারও পেতেন না! অন্তত বিনোদ রাইয়ের দাবি এমনই। ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল ভারত। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারমানপ্রীত কাউরের ১১৫ বলে ১৭১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংসের কল্যাণে ফাইনালের দেখা পেয়েছিল ভারতের মেয়েরা। সেই ইনিংসের আগে হারমানপ্রীত কী খেয়েছিলেন, শুনলেন ইনিংসটা কীভাবে খেলেছেন, তা নিয়ে মনে প্রশ্ন আসবেই।
সেদিন সকালে খাওয়ার জন্য কিছু পাননি নারী ক্রিকেটাররা। পরে সমুচা খেয়েই খেলতে নেমে যান হারমানপ্রীত—জানিয়েছেন বিনোদ, ‘আমার আক্ষেপ একটাই। ২০১৭ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারমানপ্রীত ১৭১ রানে অপরাজিত ছিল, সে ম্যাচের আগে আমি মেয়েদের ক্রিকেটকে পাত্তা দিইনি। সেদিন ওই ইনিংস খেলার পর ও এসে বলে, “স্যার, আমার পায়ে এমন ক্র্যাম্প সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যে আমাকে শুধুই ছক্কা মারতে হয়েছে, কারণ আমি দৌড়াতে পারছিলাম না।” হোটেলের পক্ষ থেকে ওদের বলা হয়েছিল নাশতার জন্য ওদের দরকারি খাবার নেই। ফলে নাশতায় ওরা সমুচা খেয়ে খেলতে নামে।’