ফাস্ট বোলার—জফরা আর্চারের প্রধান পরিচয়। উইকেটে গতি ও বাউন্সারে ঝড় তুলে ব্যাটসম্যানদের জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়াটাই কাজ তাঁর। ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত সেই আর্চার এবার বাউন্সার ছুড়লেন এক বোলারের দিকেই। বোলারের নাম মাইকেল হোল্ডিং!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিং সমালোচনা করেছিলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের। পাকিস্তান ও চলমান অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলোয়াড়েরা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে সংহতি জানাতে হাঁটু গেড়ে না বসাতেই খেপেছিলেন এই সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হোল্ডিং।
হোল্ডিংয়ের সমালোচনা গায়ে লেগেছে আর্চারের। ইংল্যান্ড পেসার পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন হাঁটু গেড়ে না বসলেও ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ ভোলেনি ইংল্যান্ড। হোল্ডিংকে পরামর্শও দিয়েছেন আর্চার, বলেছেন সমালোচনা করার আগে হোল্ডিং যেন একটু গবেষণা করে নেন।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড নামের ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গকে ঘাড়ে হাঁটু চাপা দিয়ে মেরে ফেলে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। যার ঢেউ পড়ে ক্রীড়াঙ্গনেও। বিশ্বজুড়েই খেলার মাঠে হাঁটু গেড়ে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে সংহতি জানান খেলোয়াড় ও অন্যরা।
বর্ণবাদবিরোধী এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিল ক্রিকেটও। করোনাবিরতি শেষের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুদলের খেলোয়াড়েরাই মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে সংহতি জানিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে। বর্ণবাদবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে আরও কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল দুদল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজেও ম্যাচ শুরুর আগে হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ইংলিশ ও আইরিশরা।
তবে এরপরই যেন ওই অধ্যায়টা ভুলে বসেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নিয়ে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। খেলোয়াড়দের হাঁটু না গেড়ে বসার সপক্ষে যুক্তিও দিয়েছিল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ইসিবি এক বিবৃতিতে জানায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানাতে হাঁটু গেড়ে বসাই সব নয়, তারা বর্ণবৈষম্য দূর করতে আরও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। ওই যুক্তি অবশ্য মানতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেস বোলিং কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিং।
আমি একদমই নিশ্চিত মাইকেল হোল্ডিং জানেন না পর্দার পেছনে কী হচ্ছে। পর্দার পেছনে আমরা কিছু কার্যক্রমও চালাচ্ছি। আমরা ভুলিনি। এখানকার কেউই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ভুলে যায়নি।
খেলা ছাড়ার পর ধারাভাষ্যেও নাম কেনা হোল্ডিং স্কাই স্পোর্টসে বলেছিলেন ‘খোঁড়া যুক্তি দেখাচ্ছে ইসিবি, ‘হাঁটু গেড়ে বসাটা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে একটা প্রতীক। কিন্তু পাকিস্তান কিংবা ইংল্যান্ড কাউকেই ওই পথে হাঁটতে দেখলাম না। আর এখন ইসিবি কী একটা খোঁড়া যুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে। আমি পাকিস্তানেরও কারও মুখে কিছু শুনলাম না—না বোর্ড না খেলোয়াড়।’
হোল্ডিংয়ের সমালোচনার পাল্টা সমালোচনা করে আর্চার বলেছেন সবকিছু দেখিয়ে করতে হবে কেন, ‘আমি একদমই নিশ্চিত মাইকেল হোল্ডিং জানেন না পর্দার পেছনে কী হচ্ছে। আমার মনে হয় না তিনি (ইসিবির প্রধান নির্বাহী) টম হ্যারিসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি টমের সঙ্গে কথা বলেছি। পর্দার পেছনে আমরা কিছু কার্যক্রমও চালাচ্ছি। আমরা ভুলিনি। এখানকার কেউই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ভুলে যায়নি।’
এরপর যেচে হোল্ডিংকে একটু পরামর্শও দিয়ে নিলেন আর্চার, ‘তিনি এমনটা বলতে গিয়ে একটু বেশিই রূঢ় হয়েছেন। একটু কর্কশ শোনাবে তবে সমালোচনার আগে মাইকির (হোল্ডিং) একটু গবেষণা করে নেওয়া উচিত।’
আর্চার নিজেও বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকবার। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সোচ্চার ২৫ বছর বয়সী পেসার।
তবে আর্চারের সমালোচনার পর হোল্ডিং ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বলেছেন, পর্দার অন্তরালে যা-ই করা হোক না কেন প্রকাশ্যে হাঁটু গেড়ে বসতে কী সমস্যা, ‘হাঁটু গেড়ে বসলেই যে অন্য কিছু করা যাবে না এমন তো কোনো কথা নেই। যাঁরা হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানান তাঁরা অন্য কোনো ইতিবাচক কাজের বিকল্প হিসেবে এটি করে না।’