সবচেয়ে বেশি বলে রান নেননি রিজওয়ান, চার-ছক্কা খেয়েছেন স্টার্ক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হলো কাল। মিচেল মার্শের ঝড় ও ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। টুর্নামেন্টজুড়ে প্রায় দেড় শ স্ট্রাইক রেটে ২৮৯ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা হয়েছেন ওয়ার্নার।
রান তোলায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বাবর আজম। সর্বোচ্চ ৩০৩ রান করেছেন তিনি। উইকেট নেওয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এ তথ্যগুলো এখন হয়তো সবারই জানা। সাদা চোখে সবচেয়ে বেশি রান নেওয়া ব্যাটসম্যান বা সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলারকেই সেরা মনে হতে পারে। কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতিতে কে কেমন করেছেন, সেটা বুঝতে হলে আরেকটু কড়া নজর দিতে হবে পরিসংখ্যানের দিকে।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়ার মতো দলগুলো প্রথম পর্ব খেলে পরের পর্বে যাওয়ায় বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। আর সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে বোলারের তালিকায় শীর্ষে চলে গেছেন হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার শুধু সুপার টুয়েলভে ১০ উইকেট পেয়েছেন। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানও যেমন ১১ উইকেট নিয়ে চারে থাকলেও তাঁর পাওয়া মাত্র ২টি উইকেট এসেছে সুপার টুয়েলভে।
সেদিক থেকে শুধু সুপার ওভারের পর থেকে হিসাব কষলে সেরা বোলার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা। ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৮১ রান দিয়ে ১৩ উইকেট পেয়েছেন লেগ স্পিনার জাম্পা। শ্রীলঙ্কারই চারিত আসালাঙ্কার ক্ষেত্রে অবশ্য সুপার টুয়েলভের এই সীমা কোনো বাধা হতে পারেনি। প্রথম পর্বের হিসাব বাদ দিলেও রান সংগ্রাহকদের তালিকার শীর্ষ পাঁচে আছেন এই ব্যাটসম্যান।
সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় বাবর ও ওয়ার্নারের পরই মোহাম্মদ রিজওয়ান, জস বাটলার ও আসালাঙ্কা। কিন্তু ৩০৩ রান করা বাবর ও ২৮১ রান করা রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট শীর্ষ পাঁচের বাকি তিনজনের তুলনায় অনেক কম। দুজনের স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ১২৬ ও ১২৭। যেখানে ওয়ার্নার, বাটলার ও আসালাঙ্কার ক্ষেত্রে সেটা ১৪৬ বা তার বেশি।
এর পেছনে ব্যাখ্যা হলো, টি-টোয়েন্টিতে যতই চার-ছক্কা দেখায় মানুষের আগ্রহ থাকুক না কেন, রিজওয়ান ও বাবর উল্টো কাজটাই করেন। দুজনই অ্যাঙ্কর হয়ে খেলতে পছন্দ করেন। এ কারণেই এবার সুপার টুয়েলভ পর্ব বা এর পরে সবচেয়ে বেশি ডট বল খেলেছেন রিজওয়ান। মুখোমুখি হওয়া ২২০ বলের ৮০টিতেই কোনো রান নিতে পারেননি রিজওয়ান। অর্থাৎ ৩৬ ভাগ সময়ই রান করতে পারেননি রিজওয়ান।
ওদিকে প্রান্ত বদল কাজটা যে বাবর কত পছন্দ করেন, সেটা বোঝা গেছে তাঁর নেওয়া সিঙ্গেলসে। বিশ্বকাপে ২৪০ বল খেলেছেন বাবর। এর মধ্যে ৯৯টি বলে ১ রান নিয়েছেন, ২ রান নিয়েছেন ২৫ বলে। এমনকি চারবার ৩ রান নিয়েছেন। আর ৩৩টি বল সীমানা ছাড়া করেছেন বাবর। রিজওয়ান সে কাজ করেছেন ৩৫ বার।
এদিক থেকেই ওয়ার্নার ও বাটলার আলাদা। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি চার মেরেছেন ওয়ার্নার, ৩২টি। ১৯৭ বল খেলে ৪২ বার বল সীমানা ছাড়া করেছেন। অর্থাৎ প্রতি ৯ বলে অন্তত দুটি বাউন্ডারি ছিল তাঁর। বাটলার তো বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কাই মেরেছেন, ১৩টি। ১৭৮ বলে মোট ৩৫ বার বল সীমানার ওপারে নিয়েছেন, অর্থাৎ প্রতি ৫ বলে একটি চার বা ছক্কা মেরেছেন। আসালাঙ্কাও কম যাননি। ছক্কা একটু কম (৯টি) মারলেও তাঁর খেলা ১৫৭ বলের ৩২টিই বাউন্ডারি হয়েছে।
ওদিকে বিশ্বকাপে জাম্পার মতোই ১৩ উইকেট পেয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। এ দুজন যে নিজ নিজ অধিনায়কের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা অন্য পরিসংখ্যানেও বোঝা যায়। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ডট বল দিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, ৮৫টি। তাঁর বোলিং সঙ্গী টিম সাউদিও ৮৫টি ডট বল দিয়েছেন, কিন্তু বাউন্ডারি থেকে রান দিয়েছেন বোল্টের তুলনায় বেশি। উইকেটপ্রাপ্তিতেও এর প্রভাব দেখা গেছে (৮ উইকেট)।
ওদিকে কাল ফাইনালের ৪ ওভারে ৬০ রান দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক। বিশ্বকাপে ৯ উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৯.১৮ রান দিয়েছেন স্টার্ক। অন্তত ৬ উইকেট পেয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে খরচে ছিলেন শুধু মোস্তাফিজুর রহমান (৯.২৫)। তবে সুপার টুয়েলভ পর্ব হিসাব করলে সবচেয়ে বেশি চার-ছক্কা খেয়েছেন স্টার্ক। স্টার্কের ২৭ ওভারে ২৩টি চার এসেছে, ছক্কা খেয়েছেন ১১টি! ওদিকে তাঁর মতোই ২৭ ওভার করা জাম্পা চার খেয়েছেন মাত্র ৫টি, ছক্কা ৭টি।