তিনি ছিলেন ‘প্লাটিনাম’ শ্রেণিতে। সেখান থেকে প্রথমে তাঁকে ‘গোল্ড’ শ্রেণিতে নামানো হলো। এতটুকু পর্যন্ত মেনে নিতেও কোনো আপত্তি ছিল না কামরান আকমলের। কিন্তু পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলে শেষ পর্যন্ত তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হলো ‘সিলভার’ শ্রেণিতে(সবচেয়ে নিচের শ্রেণি)। এ শ্রেণি থেকেই তাঁকে পিএসএলের ড্রাফট থেকে দলে রেখে দিয়েছে পিএসএলে কামরানের দল পেশোয়ার জালমি।
কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে রাখলেও এভাবে থাকা কামরানের কাছে মনে হচ্ছে অপমান। এরই মধ্যে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ক্ষোভ জানিয়ে পাকিস্তানের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জানিয়ে দিয়েছেন, এ অপমান সয়ে আগামী মৌসুমে পেশোয়ারের হয়ে পিএসএলে তিনি খেলবেন না।
কামরানের হতাশা বেশি হচ্ছে এ কারণে যে, পিএসএলের রেকর্ডের পাতায় তাঁর নাম জ্বলজ্বলই করছে। পিএসএলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড তাঁর, সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় বাবর আজমের (৫৮ ম্যাচে ২০৭০ রান) পরেই দ্বিতীয় স্থানে তিনি (৬৯ ম্যাচে ১৮২০)। স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৮৪। উইকেটকিপারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের (৬০টি) রেকর্ডও তাঁর। টুর্নামেন্টে তিনটি শতক হাঁকানো একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনি।
কিন্তু একদিকে তাঁর বয়স হয়ে গেছে ৩৯, পাকিস্তান জাতীয় দলেও সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৭ সালের এপ্রিলে। এবারের পিএসএলের আগে খেলোয়াড়দের শ্রেণিবিন্যাস যখন নতুন করে করেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), সবকিছু হিসেবে নিয়েই হয়তো কামরানকে তাই নিচে নামিয়ে দেওয়া।
প্রথমে অবশ্য তাঁকে গোল্ড শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পেশোয়ার তাঁকে দলে রাখতে পেরেছে সিলভার শ্রেণি থেকেই। তবে পেশোয়ার জানিয়ে দিয়েছে, সিলভার শ্রেণিতে থাকলেও কামরানকে বেতন দেওয়া হবে গোল্ড শ্রেণির সমপরিমাণ।
কিন্তু কামরান তাতেও এভাবে খেলোয়াড়ের শ্রেণিতে নিচে নামিয়ে দেওয়ার অপমান সইতে যাবেন কেন! ক্রিকইনফোকে কামরান বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এভাবেই যদি থাকে, তাহলে থাকুক, তবে আমি এ অপমান সয়ে খেলব না। বিব্রতকর ব্যাপার। একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে এ রকম ব্যবহারের কোনো মানে হয় না। লিগে আমি যত রান করেছি, এরপর আমার এ রকম অপমান প্রাপ্য নয়।’
যদিও এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দায় দিচ্ছেন না কামরান, ‘বুঝতে পারছি, খেলোয়াড়দের শ্রেণিবিন্যাস নতুন করে করাতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর হাত নেই, এটা (পিসিবি চেয়ারম্যান) রমিজ রাজার কাজ। তবে সিলভার শ্রেণি থেকে নিজেকে দলে সুযোগ পেতে দেখা অনেক বড় অবনমন।’
গতকাল রোববার খেলোয়াড়দের ড্রাফটের পর পেশোয়ার জালমির কোচ ও পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামও কথা বলেছেন কামরানকে এভাবে দলে নেওয়ার ব্যাপারে।
‘কামরানের জন্য আমাদের ভালোবাসা সব সময়ই একই রকমের। ও শুধু পাকিস্তান জাতীয় দলকেই সেবা দেয়নি, গত ছয় বছরে পিএসএলের ভক্তদেরও বিনোদন দিয়েছে। ওর সঙ্গে আগে একবার আমার কথা হয়েছে। ওকে জানিয়েছিলাম যে আমরা যদি ওকে সিলভার শ্রেণি থেকেও দলে নিই, তবু ওকে (খেলোয়াড়ের পাশাপাশি) দলের পরামর্শক বানিয়ে গোল্ড শ্রেণির অর্থই দেওয়া হবে’ - বলেছেন আকরাম।
এর পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজির আয়ের একটা অংশও কামরানকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও জানিয়েছেন আকরাম। তবে আর্থিকভাবে এত কিছু দিয়েও কেন শেষ পর্যন্ত সিলভার শ্রেণি থেকে কামরানকে নেওয়া হলো, সে ব্যাখ্যাও এসেছে আকরামের কণ্ঠে, ‘বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলে যায়। আমাদের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হবে। তবে কাগজে-কলমে তো ও সব সময়ই দলের সঙ্গে আছে।’
সব শেষে আকরামের আশা, ‘এত বছর ধরে ও আমাদের মূল খেলোয়াড়দের একজন। আশা করি, ওকে আগামী বছরেও আমাদের হয়ে খেলতে রাজি করাতে পারব। তবে দিন শেষে সিদ্ধান্তটা তো একজন খেলোয়াড়ের নিজের। তারা পেশাদার, তারা যেখানে খুশি, সেখানেই খেলতে পারে।’ ক্রিকইনফো লিখেছে, আজই কামরানের সঙ্গে ওয়াসিম আকরামের বৈঠক হওয়ার কথা।
পিএসএলের সপ্তম সংস্করণের জন্য গতকাল লাহোরে পিএসএলের ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির সবকটিই একসঙ্গে বসেছিল। ২৭ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া পিএসএলের জন্য প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আগের মৌসুমের দল থেকে সর্বোচ্চ ৮ খেলোয়াড়কে নিজেদের দলে রেখে দিতে পারত। পেশোয়ার গোল্ড শ্রেণি থেকে প্রথমে আকমলকে দলে রাখেনি, পরে খেলোয়াড়ের ড্রাফটে সিলভার শ্রেণি থেকে তাঁকে কিনে নেয়।
২০১৬ সাল থেকে পেশোয়ারের হয়ে খেলছেন আকমল।