সব হিসাব বদলে দিলেন ইমরুল
>খুলনায় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে গিয়েই একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে ডাক পান। আর সরাসরি একাদশে নেমে ইমরুল অপরাজিত থাকলেন ৭২ রানে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে গড়লেন বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড
দুবাই রওনা দেওয়ার আগে ইমরুল কায়েসের চিন্তায় ছিল কন্ডিশন। কাল প্রায় মধ্যরাতে টিম হোটেলে পৌঁছে পরদিন দুপুরে ১৫০ কিলোমিটার দূরের আবুধাবিতে খেলতে নেমেছেন। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কোনো সময়ই পাননি, প্রতিপক্ষের বোলারদের চেয়ে ইমরুলের চিন্তায় ছিল আবুধাবির গরম। প্রতিপক্ষের বোলারদের সামলেছেন, কন্ডিশনও বাধা হয়নি—উড়ে গিয়েই দুর্দান্ত ইমরুলকে দেখা গেছে। দেখা গেছে দুর্দান্ত মাহমুদউল্লাহকেও। এ দুইয়ের ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ রানের জুটির সৌজন্যে আফগানিস্তানকে বাংলাদেশ ছুড়ে দিয়েছে ২৫০ রানের লক্ষ্য।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা আজও বাজে। ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১৬ রানে। আগের দুই ম্যাচে ১৪ রান করা নাজমুল আজ করতে পেরেছেন ৬। সাকিব আল হাসানের জায়গায় মোহাম্মদ মিঠুনকে পাঠানো হয় তিনে। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেলেও স্কোরে উন্নতি হয়নি—মুজিবুর রহমানের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন মাত্র ১ রানে। ১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে যে ধাক্কাটা খেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি সামাল দেয় লিটন-মুশফিকের তৃতীয় উইকেটে তোলা ৬৩ রানের জুটি।
ভালোই এগোচ্ছিল। হঠাৎ ভূতে পেয়ে বসল বাংলাদেশকে! নয়তো কী! ২ উইকেটে ১৮ রান তুলে ফেলার পর বাংলাদেশের ইনিংসে যা ঘটল, কেবল ভূত তাড়া করলেই এমন পাগুলে কিছু করা সম্ভব। লিটন দাস আগের বলে চার মেরে পরের বলেই আবার উড়িয়ে মারতে চাইলেন এ সময়ের সেরা লেগ স্পিনার রশিদ খানকে। রান হয় না এমন একটা বলে রান নিতে চেয়ে শূন্য রানে রানআউট হলে ফিরলেন সাকিব। এভাবে রান নেওয়ার কোনো মানে হয়...সাকিবের সঙ্গে মাঠেই মৃদু বাহাসে মেতে ওঠা মুশফিক নিজে কী করলেন? তিনিও খ্যাপা দৌড় দিলেন ননস্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে। সাকিবের অপরাধের পুনরাবৃত্তি। ১৪ বল আর ৭ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারাল ৩ ব্যাটসম্যানকে।
বাংলাদেশের সামনে যখন লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া নিয়ে সংশয়, তখনই ইমরুল-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথে হুট করে উড়িয়ে নেওয়া দুই ক্রিকেটারের একজন ইমরুল ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি ১২৮ রান যোগ করেই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ২৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড।
অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলটা লাফিয়ে চালাতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ আউট হয়েছেন ৭৪ রান করে। তবে ইমরুল অপরাজিত ৭২ রান করে। শুধু কন্ডিশন-প্রতিপক্ষের বোলাররা নয়, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে মানিয়ে নিতে হয়েছে হঠাৎ বদলে যাওয়া ব্যাটিং অর্ডারের সঙ্গেও। ক্যারিয়ারজুড়ে ব্যাটিং করেছেন ওপেনিং কিংবা তিনে। সেই ইমরুল আজ নামলেন ছয়ে।
কঠিন পথ পেরিয়ে ইমরুল ভালো খেলেছেন, ভালো খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। বাজে শুরুর পরও তাই বাংলাদেশ ইনিংস পেয়েছে আশাব্যঞ্জক সমাপ্তি। মাহমুদউল্লাহকে স্যালুট দিতে হবে। ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা তাঁর ব্যাটেই। তবে ইমরুল পাবেন বাড়তি বাহবা। এত দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়েছে...কন্ডিশন শুধু নয়, ব্যাটিং লাইনআপের অচেনা পজিশনেও। আর তাঁর কাজটাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল বাংলাদেশের স্কোর। সেখান থেকেই ইমরুল অপরাজিত থেকে ফিরলেন। শাবাশ ইমরুল!