২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সব সময় তো বাংলাদেশ খারাপ খেলে না, শুধু যেদিন...

শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশ দলের করুণ এক চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ছবি: এএফপি
শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশ দলের করুণ এক চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ছবি: এএফপি
>শ্রীলঙ্কায় ধবলধোলাই হয়েছে দল, সিরিজ শেষে ময়নাতদন্ত করতে গেলে দলের কোনো বিভাগই ছাড় পাবে না।

এ সিরিজও মানুষ মনে রাখবে। আর কিছু না হোক লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ের জন্য হলেও। টানা তিন ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণের জ্বলুনি তাতে কমছে না বাংলাদেশের। এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হেরে যাওয়া কিংবা ধবলধোলাই হওয়ার দুঃখটাও কম নয়। তবু চাইলে এর মধ্যেই ইতিবাচক কিছু খুঁজে নেওয়া যায়।

একটু ভেবে দেখুন, সিরিজ হয়তো বাংলাদেশ হেরে গেছে, কিন্তু খুব একটা খারাপ খেলেনি কিন্তু। সাকিব-মাশরাফিকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কায় এসেছে তারা। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষের সাড়ে তিন শর হুমকি উপেক্ষা করে তিন শর একটু পরেই আটকে ফেলা গেছে। তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে এসে তিন উইকেটে পেয়েছেন শফিউল, পরের দুই ম্যাচেও খারাপ করেননি। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন সাব্বির, দুই ম্যাচে দারুণ খেলেছেন মুশফিক। সৌম্য সরকার তাঁর বোলিং সত্তা খুঁজে পেয়েছেন, একটি ফিফটিও করেছেন। তার মানে বাংলাদেশ ভালোই খেলে, শুধু মাঝেমধ্যে হেরে যায়।

ব্যস, অমনি খেপে উঠলেন বুঝি। এই প্রতিবেদকের দিকে তেড়ে আসতে ইচ্ছেও জাগছে নাকি? আহা, একটু থামুন। বাংলাদেশ কি আর শুধু শুধু হারে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৩ বছর কাটিয়ে এবং ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেও প্রতি ম্যাচেই শিক্ষা নেয় তারা। শুধু যেদিন শিক্ষা নেওয়ার বেশি দরকার পড়ে, সেদিনই একটু খারাপ খেলে হারে।

তাই বলে প্রতিদিন কিন্তু খারাপ খেলে না, যেদিন বোলাররা লাইন লেংথ মেনে বল করেন না, মাথা খাটান না, ব্যাটসম্যানদের শক্তি-দুর্বলতার কথা ভাবেন না, সেদিনই আসলে খারাপ খেলাটা দেখা যায়। তা বোলারদেরও আসলে দোষ নেই, তাঁরা যদি খুব বেশি ভালো করেন, তাহলে দলের স্কোয়াডে বা আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো সুযোগ পাবেন না কখনো। বন্ধুদের কথা তো ভাবতে হয়, নাকি? আর ফিল্ডাররা মাঝেমধ্যেই ক্যাচ ছাড়েন বলেই হয়তো লাইন–লেংথের কথা ভুলে যান বোলাররা।

না, ফিল্ডাররা আবার সব সময় ক্যাচ ফেলেন না। ওই ধরেন যেদিন গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটা খুব বাজে হয়, হাতের ফাঁক গলে বল চলে যায়, চোখের সামনে দিয়ে বল সীমানা পার হয়, সেদিন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। সে মন খারাপ ভাব কাটাতে কাটাতেই যখন আবার বল ক্যাচ হয়ে আসে সেটা ধরার মতো অবস্থা কি থাকে নাকি? তার ওপর ধরুন ব্যাটিংয়ের কথা ভাবতে ভাবতে গভীর ঘোর যখন চলে আসে, তখনই কেন যেন ক্যাচগুলো হাজির হয়!

এবার আবার বলে বসবেন না, ফিল্ডিংয়ের সময় ব্যাটিং নিয়ে ভাবতে হবে কেন? ব্যাটিং নিয়ে সব সময়ই ভাবতে হয়। ফিল্ডিংয়ের সময়, কিপিংয়ের সময়, বোলিংয়ের সময়, ঘুমানোর সময়ও—সব সময়। এত ভাবার পরও ব্যাটিং খারাপ হয় কেন? এত ভাবতে ভাবতেই ব্যাটিংয়ের সময় ঠিক ব্যাটে-বলে হতে চায় না। হাজার হলেও এত ভাবার পর ক্লান্তিও তো লাগে। সে ক্লান্তিতে চোখ যখন ঢুলুঢুলু হয়ে আসে তখনই ক্যাচ উঠে যায়, বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে স্টাম্পে চলে যায়। আলতো করে প্যাডে আঘাত হানে।

এত ভেবেও ঝামেলার কি শেষ আছে? দলের ভালোমন্দ ভাবতে গিয়ে অনেক শক্তি ক্ষয় হয় টিম ম্যানেজমেন্টের। সেটা পূরণের কথাও চিন্তা করতে হয়। তাই তো হেরে যাওয়া ম্যাচের পর ভারপ্রাপ্ত কোচ দুমুঠো খেতে ক্যাসিনোয় খেতে যান। এও নতুন কিছুই নয়, সেই ২০১৫ সালেও এমন কিছু দেখাতে পেরেছিলেন ম্যানেজার হিসেবে। খিদে পেলে কী আর করা? টিম হোটেলের খাবার তো সব সময় মুখে রোচে না। দলের হারের পর গভীর রাতে তাই ক্যাসিনোর খাবারেই ভরসা।

বাংলাদেশ দল যে শ্রীলঙ্কা সিরিজে ভরাডুবি করে এসেছে, সেটাও সহজভাবে মেনে নিন। বাংলাদেশ সব সময় তো খারাপ খেলে না। যেদিন একটু ব্যাটিং অথবা বোলিং বা ফিল্ডিংটা খারাপ হয়, শুধু সেদিন...!