শ্রীলঙ্কায় হোটেলে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাকিস্তান দলের
শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে সিরিজ খেলতে গিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দেশের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ চেয়ে কলম্বোর রাস্তায় নেমেছেন লাখো মানুষ। সে কারণে পাকিস্তান দল কলম্বোতে হোটেলে আটকা পড়ে ছিল গতকাল। তবে আজ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন বাবর আজমরা।
দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কায় গেছে পাকিস্তান দল। গলে প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার কথা ১৬ জুলাই, কলম্বোতে দ্বিতীয় টেস্ট ২৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা। তার আগে কলম্বোতেই আগামীকাল থেকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ইলেভেনের সঙ্গে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল পাকিস্তান দলের।
আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা, সেটির জেরে কয়েক মাস ধরেই সেখানে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের পদত্যাগ চেয়ে পুরো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই লাখো মানুষ জড়ো হয়েছেন কলম্বোর রাস্তায়। গতকাল শনিবার কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন। হামলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাসভবনেও।
এসবের মধ্যে ভুগেছে পাকিস্তান দলও। অবশ্য শ্রীলঙ্কার মানুষের ভোগান্তির তুলনায় তাঁদের ভোগান্তি সামান্যই। চারিদিকে বিক্ষোভের কারণে পাকিস্তান দলকে গতকাল হোটেলের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। গতকাল দলের অনুশীলন বাতিল হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত হোটেলের সঙ্গে লাগোয়া শপিংমলের ফুড কোর্টে খেতে যেতে পারতেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা, এখন সেটিও না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট পাকিস্তানের প্রতিবেদন, বিক্ষোভকারীরা পাকিস্তান দলের হোটেলের বাইরের রাস্তা দিয়েও বিক্ষোভ করতে করতে এগিয়েছেন। খেলোয়াড়েরা হোটেল থেকেই বিক্ষোভকারীদের স্লোগান শুনতে পাচ্ছিলেন। তবে পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা ভয় পাচ্ছেন না বলেই জানিয়েছে ক্রিকেট পাকিস্তান।
দলের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত এক সদস্যকে সূত্র হিসেবে জানিয়ে ক্রিকেট পাকিস্তান লিখেছে, নিরাপত্তাকর্মীরা পাকিস্তান দলের হোটেল ঘিরে রেখেছেন, হোটেল থেকে কেউ বেরোতে গেলে সে ক্ষেত্রে আগেই অনুমতি নিতে হচ্ছে।
পাকিস্তান দলসংশ্লিষ্ট ওই সূত্রই নাকি ক্রিকেট পাকিস্তানে বলেছেন, খেলোয়াড়েরা পেট্রোল পাম্পের বাইরে জ্বালানি নিতে হাজির হওয়া মানুষের তিন কিলোমিটার লম্বা সারি দেখেছেন। কোথাও বিদ্যুৎ নেই। তবে হোটেলে জেনারেটরের সাহায্যে ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
‘পাকিস্তান দল আগেও এই হোটেলে থেকেছে। পাশের শপিংমলে শুধু দুটি ফুড কোর্ট খোলা আছে, চলমান পরিস্থিতির কারণে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন অবশ্য দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বসুলভ আচরণই করেছেন, দেখা হলেই হেসে বা হাত নাড়িয়ে সম্ভাষণ জানিয়েছেন’—দলসংশ্লিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে লিখেছে ক্রিকেট পাকিস্তান।
খেলোয়াড়েরা ভয় পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তার উত্তর, ‘পাকিস্তানে আমরা বন্দুকের গোলাগুলি দেখেছি, শুনেছি। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা দেখেছি। আরও কী না দেখেছি! সে কারণে এখানে কেউই এই বিক্ষোভে ভয় পাচ্ছে না। পুরো দলকে সম্ভাব্য সেরা নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।’
তবে করোনা পাকিস্তান দলে একটু দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলছে। শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে করোনাবিষয়ক কোনো বিধিনিষেধ নেই বলেই জানাচ্ছে ক্রিকেট পাকিস্তান। খেলোয়াড়েরা তাই মাস্ক পরছেন না। শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার পর শুধু একবার তাঁদের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে দলের ম্যাসিউর মালাং আলীর করোনা পজিটিভ আসায় খেলোয়াড়েরা কিছুটা অবাক হয়েছেন।