শেষ পর্যন্ত কাদিরের 'রক্ত' চিনল পাকিস্তান
‘
আমাদের দেশে কবজির কোন স্পিনার আছে, আমাকে বলুন?’—অক্টোবরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটি করেছিলেন মিসবাহ-উল হক। পাকিস্তানের কোচ ও নির্বাচক থামেননি, ‘একটা নাম বলুন আমাকে—যে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছে এবং শাদাব খানকে জায়গা দিতে যাকে আমরা উপেক্ষা করেছি।’ উপস্থিত সংবাদকর্মীদের ভেতর থেকেই কেউ একজন অস্ফুট স্বরে বলে ফেলেছিলেন নামটা, উসমান কাদির!
সংবাদ সম্মেলন কক্ষেই হাসির দমক উঠেছিল। ধবলধোলাই হওয়ার স্বাদ নিয়েও হেসে ফেলেছিলেন মিসবাহও। নামের সঙ্গে ‘কাদির’ থাকায় উসমানকে মিসবাহর না চেনার কথা না। ২৬ বছর বয়সী এ লেগি পাকিস্তানের ইতিহাসে সেরা স্পিনার আবদুল কাদিরের ছেলে। মিসবাহ তবু বলেছিলেন, ‘কাদির কোথায় খেলছে? সে কি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে?’
সে সংবাদ সম্মেলনের ১২দিন পর অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণায় উসমান কাদিরের নামটা নিজেই বলেছিলেন মিসবাহ। সংবাদ সম্মেলন কক্ষ তখনো চমকে উঠেছে। উসমান কীভাবে! সে তো পাকিস্তানের ওপর অভিমান করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০২০ বিশ্বকাপ খেলতে চেয়েছিল!
ওই কদিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন উসমান। ফয়সালাবাদের হয়ে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচ খেলে নেন ৪ উইকেট। সঙ্গে বোনাস—কিংবদন্তি লেগ স্পিনার কাদিরের মতোই অ্যাকশন, একই ফ্লাইট, গুগলির বৈচিত্র্য—বল হাতে তাঁর বাবার মতোই প্রায় সবকিছু!মিসবাহ আর দেরি করেননি। উসমানকে ডেকে নেন জাতীয় দলে। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালোই ছড়ি ঘোরানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে উসমানের। এবার পাকিস্তানের অস্ট্রেলিয়া সফরে উসমানের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে চান মিসবাহ।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও পার্থ স্করচার্সের হয়ে খেলেছেন উসমান। পরিচিতিটা পেয়েছেন ওখানেই। এর আগে ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাকিস্তান দলে ডাক পেয়েছিলেন উসমান। তখন ১৯ বছর বয়সী এ লেগিকে আমলে নেয়নি পিসিবি। সে অনুভূতিটা উসমানের কাছে ‘বাড়ি গিয়ে কাঁদার মতো’। পাকিস্তানের হয়ে না খেলে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার জিদটা উসমানের মনে চেপেছিল তখন থেকেই। যদিও তাঁর বাবা আবদুল কাদিরের ইচ্ছা ছিল, ছেলে পাকিস্তানের জার্সিতে খেলুক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা ছিল অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে খেলার। যদিও দেশটির নাগরিকত্ব পাননি। শেষ পর্যন্ত বাবার ইচ্ছাই ফলে গেল!
উসমানের দুই ভাই ইমরান কাদির ও সুলেমান কাদিরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। এর মধ্যে ইমরান ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ধরে রেখেছেন বাবা ও চাচার পরম্পরা। তাঁদের চাচা আলী বাহাদুরও ছিলেন লেগ স্পিনার। খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও। কিন্তু এই কাদির পরিবারের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান নিঃসন্দেহে আবদুল কাদির। আশির দশকে মৃতপ্রায় লেগ স্পিনের পুনরুত্থান ঘটেছিল কাদিরের জাদুকরি কবজিতে। গত মাসে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর বাবার ইচ্ছাপূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন উসমান। কপাল খুলল এ মাসেই!
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর উসমান বলেন, ‘তিনি (আবদুল কাদির) সব সময় শক্ত থাকতে বলতেন। কখনো হাল ছাড়তে শেখাননি। সব সময় চেয়েছেন আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলি। এমনকি তাঁর সঙ্গে শেষ কথাও ছিল পাকিস্তানের হয়ে খেলা নিয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পর সবকিছু আর আগের মতো থাকেনি। তাঁর ইচ্ছাপূরণ হয়ে ওঠে আমার প্রধান লক্ষ্য। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, তোমার বুকে আমি পাকিস্তান দলের তারকা দেখতে চাই। সবাই নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, আমিও চাই। আর এখন আমি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাকে খুব মনে পড়ছে। বেঁচে থাকলে ভীষণ গর্বিত হতেন।’