শেবাগকে সেঞ্চুরি করতে না দেওয়া সেই বোলার এখন বাসচালক
বীরেন্দর শেবাগের ভাষায় নো বলটি ছিল ‘দাগ থেকে এক ফুট বেশি’ সামনে। তাঁকে সেঞ্চুরি করতে না দিতে ওটা ‘ইচ্ছা করেই করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার।
বলা হচ্ছে, ২০১০ সালে সেই ত্রিদেশীয় সিরিজের কথা—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে জয় থেকে ১ রান দূরে ছিল ভারত। ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন শেবাগ। বোলিংয়ে অফ স্পিনার সুরজ রনদিভ।
টিভিতে তাঁর নো বলটা দেখেই বোঝা গিয়েছিল ওটা ইচ্ছাকৃত, শেবাগের সেঞ্চুরি হতে না দেওয়ার ফন্দি। কথিত আছে, অধিনায়ক তিলকরত্নে দিলশানের ‘মন্ত্রণা’য় খেলার চেতনাবিরোধী কাজটা করেছিলেন রনদিভ।
শেবাগ সে বলে ছক্কা মারলেও রনদিভের নো বলেই ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ছক্কা মেরেও ৯৯ রানে সেঞ্চুরি না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল শেবাগকে।
নো বলের সেই ঘটনা নিয়ে পরে অনেক জল ঘোলা হয়। কৃতকর্মের জন্য শেবাগের কাছে পরে ক্ষমা চান রনদিভ। পরের বছর রনদিভ ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়ে যান ঘটনাক্রমে।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস চোট পাওয়ায় তাঁর বদলি হিসেবে দলে জায়গা পেয়ে ফাইনালেও খেলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার সেবারের ফাইনাল হারে রনদিভের নির্বিষ বোলিংয়ের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। তাঁর বোলিংয়ের সময়েই ধোনি সেট হয়ে যান উইকেটে।
সে যা-ই হোক, এত দিন পর সেই রনদিভকে স্মৃতির গর্ত থেকে তুলে আনার কারণ অন্য কিছু। সেই রনদিভ এখন অস্ট্রেলিয়ায় বাসচালক।
২০১৬ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবেও খেলেন রনদিভ। এরপরই ঠিকানা পাল্টে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান ৩৬ বছর বয়সী সাবেক এ অলরাউন্ডার।
সেখানে ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেটে খেলেছেন বেশ কিছুদিন। গত বছর ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে রনদিভকে নেট বোলার হিসেবে ডেকেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের হয়ে ১২ টেস্ট ও ৩১ ওয়ানডে খেলা অফ স্পিনার ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের স্পিন প্রস্তুতিতে নেট বোলার—এমন অসম্মানজনক কিছু না হলেও ভাবা কঠিন।
ভাবনাটা আরও কঠিন হয়ে আসে, যখন রনদিভের ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকালে জানা যায়, ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে তাঁকে ওয়ানডে দলে ডাকা হয়েছিল মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিকল্প হিসেবে!
কিন্তু জীবন সব সময় এক পথে, একই সময়ে থাকে না। রনদিভের জীবনও থাকেনি। জীবিকার তাগিদে অস্ট্রেলিয়াতে রনদিভ এখন বাসচালক। ফরাসি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সডেভের হয়ে বাস চালাচ্ছেন তিনি।
আরও দুজন ক্রিকেটার আছেন একই পেশায়—জিম্বাবুয়ের হয়ে ১ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলা ওয়াডিংটন মাওয়ায়েঙ্গা ও শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ টি-টোয়েন্টি খেলা চিনথাকা ওয়াডিংটন। স্থানীয় ক্লাবে খেললেও তা পুঁজি করে বেঁচে থাকা কষ্টকর। এ কারণে ভিন্ন পথ ধরেছেন এই তিন ক্রিকেটার।
ফরাসি প্রতিষ্ঠানটি নানা পেশার মোট ১ হাজার ২০০ বাসচালক নিয়োগ দিয়েছে। তিন ক্রিকেটারের ভাবনা, এই পেশা থেকেই পরে নিজেদের খেলার ক্লাব জোগাড় করতে পারবেন তাঁরা। এই তিনজনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ডিস্ট্রিক্ট পর্যায়ে খেলা একমাত্র ক্রিকেটার রনদিভ।
ভিক্টোরিয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন দানদেনং ক্লাবের হয়ে, যে ক্লাবে খেলেছেন জেমস প্যাটিনসন, পিটার সিডলরা। সিএ থেকে ডাক পাওয়া প্রসঙ্গে রনদিভ বলেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডাকার পর সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি।’