শুরুটা হোক এখানেই

>

প্রত্যাশার পারদ বাস্তবতার সীমায় রাখতে সব সময়ই সচেষ্ট অধিনায়ক। পরিসংখ্যানও তাঁকেই সমর্থন দিচ্ছে। সবচেয়ে দুর্বল বিষয়ে লেটার নম্বর তুলতে পারবে মাশরাফির দল? লিখেছেন তারেক মাহমুদ

নেপথ্যে থাকবেন হাথুরুসিংহে, মাঠে মাশরাফি ও সাকিব। অধরা স্বপ্ন পূরণের ভার এঁদের কাঁধে। ছবি: প্রথম আলো
নেপথ্যে থাকবেন হাথুরুসিংহে, মাঠে মাশরাফি ও সাকিব। অধরা স্বপ্ন পূরণের ভার এঁদের কাঁধে। ছবি: প্রথম আলো

জাহানারা বলেছেন দারুণ! ছেলেদের দল, মেয়েদের দল বলে কিছু নেই। সবই বাংলাদেশ দল। সবার গায়েই বাংলাদেশের জার্সি। লাল আর সবুজ।
মাশরাফি বিন মুর্তজাও কথা খুব ভালো বলেন। শুধু ভালো বললে কম বলা হবে, তাঁর মুখে ক্রিকেট আর জীবনের জটগুলো এমনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মনে হয়, ‘আরে! এটা তো আমারও কথা!’ কথার জাদুকরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাঁকে অনুরোধ, ‘জাহানারার বক্তব্যের মর্মার্থটা ধার নিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও তাহলে উপহার দিতে পারে সোনায় মোড়ানো সাফল্য।’
—কীভাবে?
২০১৫ ছিল ৫০ ওভারের আসল বিশ্বকাপের বছর। আগের বছরটা যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ কাটলেও এ বছর নতুন সূর্যের দেখা পেল বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে আসার পর দেশের মাটিতে একটার পর একটা সিরিজ জয়। ‘বাংলাদেশ’ নামক সূর্যের উত্তাপ ওয়ানডে ক্রিকেটের অনেক বড় বড় দলই কমবেশি টের পেল।
ওয়ানডে বাংলাদেশ দল খেলে লাল-সবুজ জার্সি পরে। টি-টোয়েন্টিতেও গায়ে থাকবে একই রং। তা ছাড়া জাহানারার মতো করে না হলেও মাশরাফি নিজেও তো একবার বলেছিলেন, ‘আমরা পতাকার জন্য খেলি।’ সেই পতাকা, সেই রং, সেই চেতনা একাকার হয়ে কেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেবে না আরেকটি সোনারঙা সাফল্য? ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টির বিশ্বমেলায়ও বাংলাদেশের ‘স্টলে’ কেন চমক দেখার ভিড় থাকবে না!
একটু বেশি এগিয়ে যাচ্ছে চিন্তাটা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পরে, আগে তো খেলতে হবে ঘরের মাঠে আজ থেকে শুরু এশিয়া কাপ! এশিয়ার মঞ্চে ভালো কিছু করলেই না বিশ্বমঞ্চে চমক দেখানোর আত্মবিশ্বাসে চনমন করে উঠবে মন! সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো ক্রিকেটারদের মধ্যেও এই চিন্তাই কাজ করছে বলে খবর। আগে এশিয়া কাপে কিছু করে দেখাতে হবে। ধর্মশালা থেকে বেঙ্গালুরু-কলকাতায় তাহলেই ছড়িয়ে পড়বে বাঘের গর্জন।
এমন প্রত্যাশায় অবশ্য অন্তত একজন বিরক্তি বোধ করতে পারেন, স্বয়ং মাশরাফি। প্রত্যাশার পারদ বাস্তবতার সীমায় রাখতে সব সময়ই সচেষ্ট অধিনায়ক। তাঁর সহজ কথা, টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলে বিরাট কিছু করে ফেললে সেটা বোনাস। নয়তো এই বোধ সবারই থাকা উচিত যে, তিন ধরনের ক্রিকেটের মধ্যে ২০ ওভারেরটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সবচেয়ে কম বোঝে ও সবচেয়ে খারাপ খেলে। এখানে বড় কিছুর আশা করলে হতাশ হওয়ার শঙ্কাই বেশি।
পরিসংখ্যানও তঁাকেই সমর্থন দিচ্ছে। ২০০৬–এর নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ৫০টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৫টিতে। এর মধ্যে দুটি জয় এসেছে গত মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে। চার ম্যাচের বাকি দুটিতে হেরে সিরিজ ড্র করাটাও বড় আসরে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একটা বিপৎসংকেত। মাশরাফি হয়তো সে কারণেই বারবার সতর্ক করছেন, প্রত্যাশা যেন আকাশ ছুঁয়ে না ফেলে।
অধিনায়ক যখন প্রত্যাশার সীমাটাকে এই পর্যায়ে নামিয়ে রাখতে চান, তখনই তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে জাহানারার কথাটা। লাল-সবুজ তো সবখানেই! মেয়েদের দল বা ছেলেদের; ওয়ানডে ক্রিকেট কিংবা টি-টোয়েন্টি! তা ছাড়া ২০১৫-এর বিশ্বকাপেই কি খুব বড় কিছুর আশা ছিল বাংলাদেশের? সেই বিশ্বকাপই শেষ পর্যন্ত দুই হাত ভরে দিল বাংলাদেশকে। মাশরাফির দল নিজেদের সেরা বিশ্বকাপ খেলে এল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশন থেকে।
তাহলে এবার কেন নয়? বরং, এবারই বেশি উজ্জ্বল সম্ভাবনা। ২০১৪-এর মতো ২০১৫-তে তো আর বছরজুড়ে ‘হতাশার দিনলিপি’ লেখা হয়নি। একটার পর একটা সাফল্যের পালক বছরটাকে রূপ দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে। বড় ম্যাচ জেতা আর বড় দলকে হারানোর সূত্র এখন তাদের জানা। স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের হাওয়াটাকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল লুকানো আছে আস্তিনে। তরতাজা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে এসব নতুন সংযোজন ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও হয়তো নতুন করে উচ্চারিত করাবে বাংলাদেশের নাম।
এশিয়া কাপ হয়ে উঠতে পারে সেটারই মহড়ার ‘মাঠ’। বাছাইপর্ব থেকে চতুর্থ প্রতিপক্ষ হিসেবে যারাই আসুক; তারা নিশ্চয়ই ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো চোখ রাঙাতে পারবে না বাংলাদেশকে। উল্টো বাংলাদেশের গত বছরের সাফল্যধারা ভুলে না গেলে এশিয়ার তিন বৃহৎ শক্তিও মাশরাফির দলকে বুঝে খেলবে।
মাশরাফি যতই বলুন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো নই’, প্রতিপক্ষের সে কথা বিশ্বাস করতে বয়েই গেছে! তা ছাড়া মাশরাফি, সাকিব, মুশফিকদের সঙ্গে তাদের সিলেবাসে এবার নতুন অধ্যায় হিসেবে ‘মুস্তাফিজুর রহমান’। গত বছরের হোম সিরিজে বাংলাদেশের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারিগর বাঁহাতি এই পেসার। এশিয়া কাপ তাঁর প্রথম বড় টুর্নামেন্ট বলে বাড়তি কিছু করার ইচ্ছে তো এই তরুণেরও থাকবে।
একটা সময় যে টুর্নামেন্ট ছিল শুধুই আবেগের, আজ তা বাংলাদেশের জন্যও কিছু পাওয়ার পরীক্ষা। খেলাটা টি-টোয়েন্টির বলে এবার তো তা আরও বেশি! সবচেয়ে দুর্বল বিষয়ে লেটার মার্কস কি পাবে মাশরাফির দল?

ফিকশ্চার
২৪ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ–ভারত

২৫ ফেব্রুয়ারি
শ্রীলঙ্কা–আরব আমিরাত

২৬ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ–আরব আমিরাত

২৭ ফেব্রুয়ারি
ভারত–পাকিস্তান

২৮ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা

২৯ ফেব্রুয়ারি
পাকিস্তান–আরব আমিরাত

১ মার্চ
ভারত–শ্রীলঙ্কা

২ মার্চ
বাংলাদেশ–পাকিস্তান

৩ মার্চ
ভারত–আরব আমিরাত

৪ মার্চ
পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কা

৬ মার্চ
ফাইনাল
* সব ম্যাচ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে