ভরসা রাখছেন না কেউ
লেগ স্পিনারদের সুযোগ দেবে কে
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলা তিন লেগ স্পিনারের কেউই নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের সামনে শেখ জামালের লেগ স্পিনার মিনহাজুল আবেদীনকে দেখে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের প্রশ্ন, ‘কী খবর? খেলেছ একটাও?’ বড় ভাইয়ের প্রশ্নে মিনহাজুলের হতাশামাখা উত্তর, ‘না ভাই।’
প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে অবশ্য মিনহাজুল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে সেই ম্যাচ ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সেই ম্যাচে মিনহাজুলকে বোলিং করতে দেখে রূপগঞ্জের ভারতীয় ক্রিকেটার চিরাগ জানি তো অবাক। পুরো লিগে কোনো লেগ স্পিনারকে বোলিং করতে না দেখায় তিনি ভেবেছিলেন বাংলাদেশে কোনো লেগ স্পিনারই নেই!
মিনহাজুলের মতো আরেক লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের কপালেও জুটেছে মাত্র একটি ম্যাচ। এবারের লিগে তিনি খেলাঘরের হয়ে খেলেছেন। মিনহাজুল ও রিশাদের ভালো ফিল্ডার হিসেবে সুনাম আছে। তাই লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে দুজনই ছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায়। অথচ দুজনই ছিলেন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগের সর্বশেষ দলে। জানা গেছে, এবারের হাই পারফরম্যান্স দলেও দুজনের নাম আছে।
রিশাদ ও মিনহাজুলের চেয়ে অবশ্য ভাগ্য ভালো এবারের লিগের আরেক লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলামের। অন্তত ম্যাচ খেলার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। যদিও ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে আমিনুল খেলেছেন মূলত ব্যাটসম্যান হিসেবে। ১০ ম্যাচ খেলে তিনি কবজি ঘুরিয়েছেন ৭ ম্যাচে, সেটাও অনেকটা অনিয়মিত বোলার হিসেবে। অথচ আমিনুল জাতীয় দলের হয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন লেগ স্পিনার হিসেবে।
লেগ স্পিনারদের এমন অবহেলার কারণ জানতে চাইলে প্রিমিয়ার লিগের অনেক ব্যবহৃত উইকেটের প্রসঙ্গ চলে আসে। টানা খেলা হওয়া এসব উইকেটে রিস্ট স্পিনারের চেয়ে ফিঙ্গার স্পিনারদেরই বেশি নিরাপদ মনে করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচরা। ঢাকা লিগের চ্যাম্পিয়ন দল শেখ জামালের কোচ সোহেল ইসলাম যেমন বলছিলেন, ‘ফিঙ্গার স্পিনাররা রিস্ট স্পিনারদের থেকে বেশি নিখুঁত। এটাই মূল কারণ। সে জন্যই আমাদের যারা লেগ স্পিনার আছে, ওরা নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। যেকোনো পর্যায়ে আপনি যদি রান দিতে থাকেন, তাহলে খেলা তো হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। আর প্রিমিয়ার লিগ খুব ফলনির্ভর খেলা। এখানে কে এই ঝুঁকি নেবে?’
তাহলে লেগ স্পিনাররা খেলবেন কোথায়? সোহেল ইসলাম এ ব্যাপারে বলছিলেন, ‘আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। লেগ স্পিনারদের বেশি বেশি সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির পর্যায়ে। সেখানে অনেক ওভার বল করার সুযোগ থাকবে। এক স্পেল খারাপ করলেও সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে। সেখানে সে লম্বা সময় বোলিং করতে অভ্যস্ত হবে। নিয়ন্ত্রণ শিখবে।’
কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও লেগ স্পিনারদের সুযোগ হয় না। মিনহাজুল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। রিশাদ গত মৌসুমে দলে থাকলেও ম্যাচ খেলেছেন মাত্র দুটি। আমিনুল গত মৌসুমে বোলিং করেনি বললেই চলে। ওদিকে বিসিবি নির্বাচকেরা লেগ স্পিনারদের খেলার সুযোগ করে দিতে ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলোকে শুরু থেকেই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন।
পরে কাজ না হওয়ার লেগ স্পিনার খেলানো বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। উল্টো নির্বাচকদের চাপের কারণে ম্যাচ খেলে সতীর্থ ক্রিকেটারদের কটু কথা শুনতে হয়েছে লেগ স্পিনারদের। তাই নির্বাচকেরাও এখন সুপারিশ করা বাদ দিয়েছেন।
মিনহাজুলরা অবশ্য এখনো আশা ছাড়েননি। কাল যেমন সুযোগ না পাওয়ার ব্যাপারে মিনহাজুল বলছিলেন, ‘ম্যাচ না খেলে টিকে থাকা কঠিন। আপনি কোন জায়গায় আছেন, কোথায় উন্নতি দরকার, ম্যাচ না খেললে সেটা বোঝা কঠিন। তবু ম্যাচ খেলার সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আশা করি, আমরা যারা লেগ স্পিনাররা আছি, সুযোগ পেলে ভালোই করব।’
মিনহাজুলদের মতো অন্য লেগ স্পিনারদেরও বিশ্বাস, ফিঙ্গার স্পিনারদের মতো সুযোগ ও সমর্থন পেলে তাঁরাও একদিন নিয়মিত ম্যাচ জেতাবেন।