রোগের 'ওষুধ' নিলেন মুশফিক
>দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জেতার আশা দেখান, সেই আশার প্রদীপটাই আবার শেষ মুহূর্তে নিভিয়ে আসেন। গত দুই মাসের ব্যবধানে এমন ঘটনা দুবার ঘটল। দুবারই মুশফিকের ইনিংসের মৃত্যু ঘটেছে ফুলটসে। রোগটা ফুলটসে, যেটি খেলতে গিয়ে দুঃখের পরিণতি, মুশফিক চাইছেন সেটির দাওয়াই ভালোভাবে নিতে
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কের নেটে ঘণ্টা খানেক ব্যাটিং অনুশীলনের পর ডাগআউটে একটু জিরিয়ে নিলেন। খানিক বিশ্রাম শেষে ফের ব্যাটটা হাতে তুলে মুশফিকুর রহিম চললেন মাঝ উইকেটের পাশে। মিনিট দশেক চলল তাঁর ফুলটসে উড়িয়ে মারার অনুশীলন।
ফুলটস, মুশফিকের কাছে বেদনার আরেক নাম এই ফুলটস! গত দুই বছরে যে তিনবার তীরে এসে বাংলাদেশের তরি ডুবেছে, তিনবারই কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে মুশফিক। দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জেতার আশা দেখান, সেই আশার প্রদীপটা আবার শেষ মুহূর্তে নিভিয়ে আসেন। গত দুই মাসের ব্যবধানে এমন ঘটনা ঘটেছে দুবার। দুবারই মুশফিকের ইনিংসের মৃত্যু ঘটেছে ফুলটসে।
গত মাসে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ বলে ৩০ রান। ১৯তম ওভারে করিম জানাতকে পরপর পাঁচ বাউন্ডারি মেরে মুশফিক ম্যাচ অনেকটাই নিয়ে এলেন হাতের মুঠোয়। আগের ওভারে যে দল ২১ করতে পারে, তারা ৬ বলে ৯ রান করতে পারবে না? উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলেই ঘাতক হয়ে এল রশিদ খানের ফুলটসটা, আউট মুশফিক। বাংলাদেশও ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি।
তিন দিন আগে গায়ানায় কী হলো? ৬ বলে দরকার ৮ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলটা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার যেন ‘উপহার’ হিসেবে ফুলটস দিয়েছিলেন মুশফিককে। বেঙ্গালুরুতে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়ে বাংলাদেশের হারের পেছনে সুনীল গাভাস্কার দায়ী করেছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ‘গ্ল্যামারাস শট’ খেলাকে। এই প্রবণতা থেকে মুশফিক বেরিয়ে আসতে পারেননি গায়ানায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও। হোল্ডারের ফুলটস তুলে দিলেন ডিপ মিডউইকেটে কিমো পলের হাতে। জয়ের পথে এগোতে থাকা বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ল হারের হতাশা নিয়ে।
রোগটা ফুলটসে, যেটি খেলতে গিয়ে দুঃখের পরিণতি, মুশফিক চাইছেন সেটির দাওয়াই ভালোভাবে নিতে। নেটে ব্যাটিংয়ের পর মাঝ উইকেটের পাশে তিনি নিয়মিতই ঝালিয়ে নেন। তবে কাল ওয়ার্নার পার্কে ফুলটস বলে মুশফিকের অনুশীলনটা আলাদা করে চোখে পড়ল। ওয়ার্নার পার্কের বাউন্ডারি এমনিতে ছোট, ৬৫ গজি শটেই ডিপ মিডউইকেট পার করে ফেলা যায়। মুশফিক ১০ মিনিট ধরে সে চেষ্টাটাই করলেন। বারবার লোপ্পা বা শরীর বরাবর ছুটে আসা ফুলটসে উড়িয়ে মারার অনুশীলন করলেন। কখনো বাউন্ডারির ওপারে গিয়ে পড়ল, কখনো ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়লেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায় ফুলটস উড়িয়ে মারা যেতে পারে। কিন্তু সব সময় উড়িয়ে মারতে কেন হবে? মাশরাফি বিন মুর্তজা দ্বিতীয় ওয়ানডে হারের পর যেমন বারবার বলছিলেন, সোজা ব্যাটে খেললেই তো কাজ হয়ে যায়। ৬ বলে ৮ রান, কী এমন কঠিন সমীকরণ ছিল! ওয়ার্নার পার্কে আজ যদি একই দুঃখগাথার পুনরাবৃত্তি হয়, মুগ্ধ করা সেন্ট কিটসের সৌন্দর্যও তখন বাংলাদেশের কাছে অসহ্য লাগবে।