রসুলের কাছে আবাহনীর হার, রোমাঞ্চকর জয় আকবরদের
ইনিংসের প্রথম ওভারেই ১৮ রান। বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে আবাহনীর মুনিম শাহরিয়ার শেখ জামালের সুমন খানের প্রথম ওভারেই বড় রানের চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে মুনিমের ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটিও সেই আভাসই দিচ্ছিল। কিন্তু কে জানত, এমন শুরুর পর আবাহনী শেষ পর্যন্ত অলআউট হবে ১৭৭ রানে!
রবিউল ইসলামের অর্ধশতকে সেই রান তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে শেখ জামাল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের দিনের আরেক ম্যাচে শেষ হাসিটা হেসেছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। শেষ ওভারে গড়ানো রোমাঞ্চকর ম্যাচে শক্তিশালী প্রাইম ব্যাংককে ৪ রানে হারিয়েছে আকবর আলীর গাজী।
আবাহনীর ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে শেখ জামালের নায়ক বনে গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটার পারভেজ রসুল। ৯.৪ ওভারের অফ স্পিনে ২৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এটি এবারের ঢাকা লিগে পারভেজের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট। স্পিন দাপট দেখিয়েছেন শেখ জামালের বাকি দুই স্পিনার সানজামুল ইসলাম ও রবিউল ইসলামও। দুজন মিলে ১৭ ওভার বল করেছেন। মাত্র ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছেন আবাহনীর ৩ উইকেট। আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন শামীম।
শেখ জামালের ব্যাটসম্যানদেরও আবাহনীর স্পিনে ভুগতে হয়েছে। নিজেদের ব্যাটিং থেকে শিক্ষা নিয়ে স্পিন দিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করছিল আবাহনী। তানজিম হাসান ও সাইফউদ্দিন মিলে মাত্র ১০ ওভার বোলিং করেছেন। বাকি সময়টা ছিল স্পিন–রাজত্ব। আবাহনীর দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার আরাফাত সানি, তানভির ইসলাম ২০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৪৫ রান দিলেও উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন প্রত্যেকেই বোলিং করেছেন। কিন্তু স্কোরবোর্ডে রানের অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে আবাহনী।
বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও রবিউল ইসলাম শেখ জামালের ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন। সৈকত আলী, সাইফ হাসান, ইমরুল কায়েস ও জহুরুল ইসলামরা উইকেটে থিতু হয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। পাঁচে নামা রবিউলের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস। ৮৮ বল খেলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ৭ বল আগে শেখ জামালের ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
দিনের আরেক ম্যাচে আগে ব্যাট করা গাজীর ২৫৬ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের দরকার ছিল ৭ রান, হাতে ১ উইকেট। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা পেসার আশিকুর জামানের শেষ ওভার থেকে ক্রিজে থাকা মুনির হোসেন ও রুবেল হোসেন মাত্র ২ রান নিতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত ৪ রানের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আকবরের দল।
অথচ দলটির উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এনামুল হকের ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, গাজীর লক্ষ্য সহজেই তাড়া করবে প্রাইম ব্যাংক। উদ্বোধনে সঙ্গী শাহাদাত হোসেন ২০ বলে ২২ রান করে আউট হলেও তিনে নামা অভিমন্যু ঈশ্বরনকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই এগোচ্ছিলেন এনামুল। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ১১৭ রান। অভিমন্যু ৫৭ রান করে আউট হলেও এনামুল এগোচ্ছিলেন আরেকটি শতকের দিকে। ৩২তম ওভারে অভিমন্যুর পর এনামুলকেও ড্রেসিংরুমের পথ দেখান অফ স্পিনার মাহমুদুল হাসান। ১০০ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ রান করেন এনামুল।
মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিঠুন, নাসির হোসেনের মতো ক্রিকেটার থাকায় প্রাইম ব্যাংককে তখন ফেবারিটই মনে হচ্ছিল। কিন্তু আকবরের অধিনায়কত্বের মারপ্যাঁচে ঠিকই ধরা পড়ল প্রাইম ব্যাংক। হাবিব মেহেদী ও রাকিবুল আতিককে দিয়ে তিনি মাঝের ওভারে প্রাইম ব্যাংকের ব্যাটিংয়ে ধস নামান। দুজনই দুটি করে উইকেট নিয়ে নিলে চাপে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। সেই চাপ আর সরতে দেননি আকবর। সে কারণেই হয়তো রোমাঞ্চকর জয়ের পর বাতাসে ঘুষি মেরে, ক্রিকেট বলকে ফুটবলের মতো লাথি মেরে জয় উদ্যাপন করতে দেখা যায় গাজীর অধিনায়ককে।
আগে ব্যাট করা গাজীকে লড়াই করার মতো অবস্থানে নিয়ে যান মেহেদী মারুফ। এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ১৪০ বল খেলে ১১৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। ১৩টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল মারুফের ইনিংসে। বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। গাজীর জয়ে তাই ম্যাচসেরা মারুফই।