২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যে তিন কারণে হরলান্ডকে পায়নি বার্সেলোনা

হরলান্ডের গায়ে বার্সেলোনার জার্সি দেখা যাবে না অন্তত আরও দুই বছরছবি: রয়টার্স

হোয়ান লাপোর্তা নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলেন না।

দ্বিতীয়বারের মতো বার্সেলোনার সভাপতি হওয়ার জন্য নির্বাচন করার আগে বার্সেলোনার সমর্থকদের দুটি মূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লাপোর্তা—লিওনেল মেসিকে যেকোনো মূল্যে দলে ধরে রাখবেন এবং আর্লিং হরলান্ডকে বার্সেলোনায় নিয়ে আসবেন। প্রথম প্রতিশ্রুতি যে রাখতে পারবেন না, সেটা বোঝা গিয়েছিল গত আগস্টেই। তবুও বার্সেলোনার সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন হরলান্ডের জন্য। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এ স্ট্রাইকারকে ঘিরে আগামী দিনের রণপরিকল্পনা গড়ার প্রত্যাশা করেছিলেন তাঁরা।

কিন্তু গতকাল নিশ্চিত হয়ে গেল, হরলান্ডের গায়ে বার্সেলোনার জার্সি শোভা পাবে না। জাভির আক্রমণভাগের মূল খেলোয়াড় হয়ে আর বার্সায় যাওয়া হবে না তাঁর। কারণ?

আরও পড়ুন
তাঁরা দুজন এখন সতীর্থ
ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটি! বার্সেলোনারই সাবেক ম্যানেজার পেপ গার্দিওলার টানে ম্যানচেস্টার নীল অংশে পাড়ি জমাচ্ছেন এ নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। ৫ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড দলবদল ফির বিনিময়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে মাহরেজ, ডি ব্রুইনা, ফোডেনদের সতীর্থ হতে যাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এ খেলোয়াড়। কিন্তু বড়মুখ করে হরলান্ডকে দলে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া লাপোর্তা শেষ মুহূর্তে থেমে গেলেন কেন? কী কারণে হরলান্ডকে দলে টানার প্রক্রিয়ায় যতি টানলেন কাতালান রাজ্যের পোড়–খাওয়া এ রাজনীতিবিদ?

কাতালান পত্রিকা স্পোর্ত ব্যবচ্ছেদ করেছে বিষয়টা। তিনটি সম্ভাব্য কারণ বের করেছে তারা, যে কারণে শেষমেশ হরলান্ডকে আনার ইচ্ছাটা বাস্তবায়িত করতে পারেনি বার্সেলোনা। কী সেই তিন কারণ? দেখে নেওয়া যাক—

হরলান্ড
ছবি: রয়টার্স

বোনাস

দলবদলের অঙ্কটা পরে কম হলেও এত দিন শোনা গেছে হরলান্ডের রিলিজ ক্লজ সাড়ে সাত কোটি ইউরো। ডর্টমুন্ডকে সে পরিমাণ অর্থ দিতে বার্সেলোনার আপত্তি ছিল না। কিন্তু অতটুকুতে হলেও হতো। স্পোর্ত জানিয়েছে, এজেন্ট ফি বাবদ আরও ১০ কোটি ইউরো দাবি করেছিলেন হরলান্ডের দুই মুখপাত্র। সদ্য প্রয়াত ‘সুপার এজেন্ট’ মিনো রাইওলা চেয়েছিলেন পাঁচ কোটি ইউরো, ওদিকে হরলান্ডের বাবা আলফ ইঙ্গ হরলান্ডও দলবদলে নিজের বোনাস বাবদ আরও পাঁচ কোটি ইউরো দাবি করেছিলেন।

সব মিলিয়ে দলবদল ফি যতটা, তার চেয়েও বেশি এজেন্ট ফি বার্সেলোনার কাছে চেয়ে বসেছিলেন হরলান্ডের দুই মুখপাত্র। সাধারণত দলবদল ফির ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন বাবদ নিতে রাজি হন মুখপাত্ররা। সে হিসাবে ৪০ থেকে ৮০ লাখ ইউরো কমিশন হিসেবে পাওয়ার কথা হরলান্ডের মুখপাত্রের, সেটা হয়নি। আর মুখপাত্রদের কমিশন বাবদ এত বেশি টাকা খরচ করতে চায়নি এমনিতেই আর্থিক টানাটানিতে থাকা বার্সেলোনা।

সিটিতে হরলান্ড দুর্দান্ত কিছুর জন্ম দেবে বলেই বিশ্বাস সবার
ছবি: রয়টার্স

বেতন

স্পোর্তের মতে, বার্সেলোনার কাছে বাৎসরিক তিন কোটি ইউরো বেতন চেয়েছিলেন হরলান্ড। এত বেশি বেতন দিয়ে হরলান্ডকে দলে টানতে চায়নি বার্সেলোনা। এমনিতেই খেলোয়াড়দের বেতন লা লিগার নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার জন্য কয়েক বছর ধরেই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। যে কারণে আঁতোয়ান গ্রিজমান, লিওনেল মেসি, ফিলিপ কুতিনিওর মতো অনেক খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা। এ অবস্থায় আবারও হরলান্ডকে আকাশচুম্বী বেতন দিয়ে দলে টানতে রাজি হয়নি বার্সেলোনা। এর ফলে আখেরে সুবিধা হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির। হরলান্ডকে মেরেকেটে ৬০ লাখ বেতন দিতে রাজি হয়েছিল বার্সেলোনা, দাবি করেছে স্পোর্ত। তবে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া সের্হি রবার্তোও যেখানে বাৎসরিক এক কোটি ইউরোর বেশি বেতন পাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে স্পোর্তের এ দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

রিলিজ ক্লজ

হরলান্ডের মুখপাত্ররা চেয়েছিলেন, যে ক্লাবই এখন হরলান্ডকে কিনুক না কেন, চুক্তিতে একটা বিশেষ রিলিজ ক্লজ রাখতে হবে। যেমনটা ডর্টমুন্ডের ক্ষেত্রেও রাখা হয়েছিল এবং সে অঙ্কটা হতো ১৫ কোটির। অর্থাৎ বার্সায় যোগ দেওয়ার পর বার্সার অমতে হরলান্ড যদি ক্লাব ছাড়তে চান, সে ক্ষেত্রে হরলান্ড ১৫ কোটি ইউরোর বিনিময়ে অন্য ক্লাবে নাম লেখাতে পারতেন। এমন ‘অন্যায় আবদারে’ রাজি হয়নি বার্সেলোনা। বার্সেলোনা আরও বেশি রিলিজ ক্লজ রাখতে চেয়েছিল। স্বাভাবিক, যে দল আনসু ফাতি, পেদ্রি ও ফেরান তোরেসের মতো খেলোয়াড়ের রিলিজ ক্লজ ১০০ কোটি ইউরো রেখেছে, তারা হরলান্ডের ক্লজও ও রকমই রাখবে!

সব মিলিয়ে এ তিন কারণেই বার্সেলোনা হরলান্ডকে দলে নেয়নি। অন্তত স্পোর্ত সেটাই বলছে!